ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পর বর্ধমানের মিষ্টিহাব খুলতে জেলাশাসক সমস্ত আধিকারিক, মিষ্টি ব্যবসায়ী ও সংগঠনের কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেছিলেন। বৈঠকে ব্যবসায়ীদের সমস্যার কথা শুনে আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হয়েছিল সরকারি বাসের স্টপেজ শক্তিগড়ে পরিবর্তে মিষ্টিহাবে হবে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছিল এর ফলে মিষ্টিহাবে ক্রেতার অভাব হবে না। সেই বৈঠকে মিষ্টি ব্যবসায়ীরা এই সিদ্ধান্তের সহমত পোষণও করেছিলেন। তাঁরা বলেছিলেন বাস দাঁড়ালে ক্রেতা আসবে। পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাফ জনিয়ে দেওয়া হয়েছিল যে আগামী ২০মে এর মধ্যে মিষ্টিহাবের ব্যবসায়ীরা যদি দোকান না খোলেন তাহলে তাঁদের দোকানের মালিকানা কেরে নেওয়া হবে। এবং সেগুলি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যদের দিয়ে দেওয়া হবে।
এরই মধ্যে মিষ্টিহাবে থাকা ২৫টি দোকানের মালিকরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে তারা নতুন করে আর ক্ষতির মুখ দেখতে চাইছেন না। আর কার্যত সেই জায়গা থেকেই শুক্রবার জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের সঙ্গে দেখা করে তারা লিখিতভাবে জানিয়ে দিলেন, ৬ তারিখের প্রশাসনিক বৈঠকের সিদ্ধান্ত তারা মানতে পারছেন না। ২০ তারিখ থেকে মিষ্টি হাবের দোকান তারা খুলবেন না। আর এর পরই কার্যত মিষ্টিহাবের ভবিষ্যত নিয়ে ফের একবার অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
জেলাশাসক প্রিয়াঙ্কা সিংলা বলেন, ‘আমার সঙ্গে ওনারা দেখা করে চিঠি দেননি। তবে শুনেছি আমার নামে একটি চিঠি ওনারা দিয়েছেন মিষ্টিহাবের দোকান না খোলার প্রসঙ্গে। সব দিক খতিয়ে দেখে আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।’ এদিন বেশ কিছু প্রতিষ্ঠিত মিষ্টি বিক্রেতা জেলাশাসকের সঙ্গে দেখা করতে এলেও তাঁর ব্যস্ততায় দেখা করতে না পেরে বর্ধমান উত্তরের মহকুমা শাসক তীর্থঙ্কর বিশ্বাসের সঙ্গে দেখা করে মিষ্টি হাবের দোকান না খোলার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে আসেন। মহকুমা শাসক তাদের সিদ্ধান্ত বিবেচনা করার কথা বললেও তাতে রাজি হননি মিষ্টি ব্যবসায়ীরা বলেই প্রশাসন সুত্রে জানা গেছে।
বর্ধমান সীতাভোগ-মিহিদানা ট্রেডার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোশিয়েসনের সাধারণ সম্পাদক প্রমোদ কুমার সিং বলেন,‘সেদিনের বৈঠকেই আমরা বিষয়টি জানাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সেদিন সবার সঙ্গে কথা না হওয়ায় আমরা কয়েকজন মিলে সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। ফলে প্রশাসনের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছিলাম। পরে আমরা মিষ্টি হাবে থাকা ২৫ জন দোকানদারের সঙ্গেই কথা বলেছি। সবাই মিলে আলোচনার পরেই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, জোর করে দোকান খোলা যায়। কিন্তু ব্যবসা না হলে লাভ কি। সরকারি বাস প্রশাসনের নির্দেশে হয়তো থামবে। কিন্তু ক্রেতা যদি না আসে তাহলে আবারও ক্ষতির বোঝা বাড়বে। ফলে রিস্ক নেওয়া সমস্যা হয়ে যাচ্ছে অনেকরই। কারণ এর আগে আমাদের বহু টাকা লোকসান হয়েছে। সেক্ষেত্রে প্রশাসন যদি আমাদের ঘর ছেড়ে দিতে বলে, আমরা ছেড়ে দিতে রাজি আছি।’
মিষ্টি হাব প্রসঙ্গে এদিন প্রমোদ সিং বলেন, ‘আমরা প্রস্তাব দিয়েছিলাম মিষ্টি হাবের জায়গায় খরগপুর আইআইটির সহযোগিতায় একটি স্বাস্থ্যসম্মত রান্নাঘর তৈরীর পাশাপাশি একটি ল্যাব তৈরী করা হোক। একই সঙ্গে প্যাকিজিং এর ব্যবস্থা। যাতে এখানে তৈরী জিনিস শুধু এ জেলায় নয়, গোটা রাজ্যে, দেশে ছড়িয়ে যেতে পারে। সীতাভোগ-মিহিদানা এক্সপোর্ট করতে পারছিনা আমরা অর্ডার পাবার পরেও। আমরা মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও বিষয়টি জানিয়েছি। আবারও জানাচ্ছি।’
জেলা পরিষদের সভাধিপতি শম্পা ধারা বলেন, ‘কেন ওনারা এমন সিধান্ত নিলেন বলতে পারবো না। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা সমস্ত রকমের সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেবার পরেও যদি ওনারা দোকান না খোলেন, তাহলে দোকান ফেরত দিয়ে দিতে হবে। ইতিমধ্যেই আমাদের কাছে অনেক স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা আবেদন জানিয়ে রেখেছেন। আমরা ওই ঘর তাদের দিয়ে দেব।’ এলাকার বিধায়ক নিশীথ কুমার মালিক বলেন, ‘এটা সঠিক কাজ ব্যবসায়ীরা করলেন না। এই সিধান্তের কথা সেদিনের মিটিংয়ে জানালে সেদিনই আমরা অন্য কোন সিধান্ত নিতে পারতাম।’