মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরেও বিনামূল্যে রেশন না পেয়ে ক্ষোভ , মেমারীতে উত্তেজনা থামাতে পুলিশ

Souris  Dey

Souris Dey

বিজ্ঞাপন
ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: করোনা উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ১ এপ্রিল থেকে ৪ ধরণের রেশন গ্রাহকদের বিনামূল্যে চাল এবং গম বা আটা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। কোনো কোনো জায়গায় ইতিমধ্যেই ১ এপ্রিল থেকে এই রেশন দ্রব্য সরবরাহের কাজ শুরু হলেও অনেক জায়গাতেই তা এখনও শুরু হয়নি। তা নিয়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হতে শুরু করেছে। একইসঙ্গে রেশনে বিনামূল্যে এই মাল পাওয়া নিয়েও শুরু হয়েছে চরম বিভ্রান্তি। 
বিশেষত, রেশন ডিলারদের অনেকেই গ্রাহকদের কাছে খোলসা করে বিষয়গুলি বোঝাতে না পারায় এলাকায় এলাকায় রেশন ডিলারদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ সৃষ্টি হতে শুর করেছে। বৃহস্পতিবার রেশন দোকানে গিয়েও মাল না পাওয়ার জন্য একদিকে যখন খোদ জেলা খাদ্য ভবনে গ্রাহকদের ভিড় উপচে পড়েছে, তখন মেমারীর কেন্না কৃষি সমবায় সমিতি থেকে বৃহস্পতিবার সকালে রেশনে মাল কম দেওয়ার অভিযোগকে ঘিরে উত্তেজনা দেখা দিল। মাল নিতে আসা গ্রাহকদের অভিযোগ, তাঁদের চাল এবং গম ২০০ গ্রাম করে দেওয়া হয়েছে। এমনকি আটাও তাদের কম দেওয়া হয়েছে।

এব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ডিলারের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি তাতে কান দেননি বলে অভিযোগ। আর এরপরই শুরু হয় বিক্ষোভ। করোনা ভাইরাসের সোস্যাল ডিসটেন্সের বিধি ভুলে গ্রামবাসীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে মেমারী থানার পুলিশ। তাঁরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। শুধু কেন্নাই নয়, এদিন মেমারী ১ নং ব্লকের মহেশ ডাঙ্গা ক্যাম্প, কোলে পাড়া কাঁঠালগাছি সহ বেশ কিছু এলাকার রেশন ডিলারকে ঘিরে একই অভিযোগ ওঠে। বিক্ষোভের জেরে বন্ধ করে দেওয়া হয় রেশন দেওয়াও। গোটা বিষয়টি নিয়ে রেশন ডিলারদের সঙ্গে আলোচনা করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে মেমারী ফুড দপ্তর থেকে।

একদিকে, এরই পাশাপাশি এদিন পূর্ব বর্ধমান জেলা খাদ্য ভবনেও সাধারণ মানুষের ভিড় উপচে পড়ে। বর্ধমান শহরের ছোটনীলপুর এলাকার বাসিন্দা মোল্লা সাদিক রহমান জানিয়েছেন, তিনি একটি সার্কাস কোম্পানীতে কাজ করতেন। করোনার জেরে কাজ বন্ধ। বাড়িতেই বসে রয়েছেন। তাঁর বৃদ্ধা মা ও ছেলেকে নিয়ে সংসার। তিনি অভিযোগ করেছেন, এর আগেও তাঁরা রেশনে মাল পেয়েছেন চাল ও গম বা আটা। কিন্তু গত প্রায় ৬ মাস ধরে রেশনে কোনো মালই পাচ্ছেন না। তাঁর বৃদ্ধা মা বারবার রেশন ডিলারের কাছে গিয়ে ঘুরে আসছেন। এদিন তিনি তাই জেলা খাদ্য ভবনে এসেছিলেন। খাদ্য ভবন থেকে জানানো হয়েছে খাদ্য দপ্তরের পোর্টালে এখনও তাঁর মায়ের নাম ওঠেনি। আরও ২মাস লাগবে। তাই তাঁরা রেশন পাচ্ছেন না। 
সাদেকবাবু জানিয়েছেন, চলতি সময়ে কাজ হারিয়ে তিনি বাড়িতে রয়েছেন। কিভাবে সংসার চালাবেন বুঝতে পারছেন না। এরকম অবস্থায় মুখ্যমন্ত্রীর ঘোযণা শুনে আশ্বস্ত হয়েছিলেন। কিন্তু বাস্তবে এসে দেখলেন আশাই সার। তার কপালে সিকে ছেঁড়েনি। শুধু তিনিই নন, রেশনে মাল পাওয়া নিয়ে রীতিমত ঘোর সংশয় তৈরী হয়েছে বহু মানুষের – যাঁরা ইতিমধ্যেই ডিজিটাল কার্ডের জন্য আবেদন করেছেন কিন্তু এখনো কার্ড পাননি। আবার কোনো কোনো পরিবারে একজন কার্ড পেয়েছেন বাকিরা পাননি। ফলে রেশনে মাল পাওয়া নিয়ে শুরু হয়েছে তাদেরও ঘোর দুশ্চিন্তা। 
এদিকে, এই বিষয় সম্পর্কে পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ মেহেবুব মণ্ডল জানিয়েছেন, কারা কারা বিনামূল্যে কার্ড প্রতি রেশনের চাল, গম বা আটা পাবেন তা সরকার ঘোষণা করে দিয়েছেন। ফলে তা নিয়ে কোনো বিভ্রান্তি থাকার কথা নয়। তিনি জানিয়েছেন, অন্ত্যোদয় যোজনায় পরিবার পিছু মাসে ১৫ কেজি চাল এবং ১৯ কেজি আটা অথবা ২০ কেজি গম পাবেন বিনামূল্যে। এই অন্ত্যোদয় যোজনার কার্ডধারীরা মাসে পরিবার পিছু ১৩ টাকা ৫০ পয়সা দরে ১ কেজি করে চিনি পাবেন। অগ্রাধিকার প্রাপ্ত পরিবার পিএইচএইচ এবং বিশেষ পরিবার এসপিএইচএইচ কার্ড হোল্ডাররা পাবেন মাসে প্রাপ্ত বয়স্করা ২কেজি চাল এবং ৩ কেজি গম। এছাড়াও রাজ্য খাদ্য সুরক্ষা যোজনা -১ (আরকেএসওয়াই ১) কার্ডধারীরা পাবেন মাসে ২কেজি চাল এবং ৩ কেজি গম। রাজ্য খাদ্য সুরক্ষা যোজনা -২ (আরকেএসওয়াই ২) কার্ডধারীরা পাবেন মাসে ১৩ টাকা কেজি দরে ১ কেজি চাল এবং ৯ টাকায় ১কেজি গম। এছাড়াও বিশেষ উপজাতি যাঁরা তাঁরা মাসে পাবেন ৮কেজি চাল এবং ৩ কেজি করে গম। 
মেহেবুব মণ্ডল জানিয়েছেন, অনেকেই যাঁরা বিভিন্ন প্রকল্পে বিশেষ করে রাজ্য খাদ্য সুরক্ষা যোজনা -২ এর জন্য আবেদন করেছেন তাঁদের বিষয়ে ব্লক অফিস থেকে একটি করে ফুড স্লিপ দেওয়া হবে। তবে সেক্ষেত্রে যাঁদের নাম খাদ্য দপ্তরের পোর্টালে ইতিমধ্যেই অন্তভূক্ত হয়েছে তাঁরা এই সুযোগ পাবেন। মেহেবুববাবু জানিয়েছেন, পূর্ব বর্ধমান জেলায় কিছু রেশন ডিলারের কাছে এখনও আটা না পৌঁছানোয় তাঁরা রেশন দিচ্ছেন বলে জানতে পারা গেছে। সেই সমস্ত রেশন ডিলারদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে চাল দিয়ে দিতে। আটা পাবার পর তা আলাদা করে দিয়ে দেবার জন্য বলা হয়েছে। এরই পাশাপাশি মেহেবুব বাবু জানিয়েছেন, যদি কোনো রেশন ডিলার মাল কম দেন বা সঠিকভাবে দোকান খোলা না রাখেন তাহলে তাঁরা অভিযোগ পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন।

আরো পড়ুন