মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে পূর্ব বর্ধমান জেলার ১০ লক্ষাধিক পরিবারকে বিনামূল্যে জলসংযোগ

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: গত ৬ জুলাই নবান্ন থেকে জলস্বপ্ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। এই প্রকল্পের মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ অনুসারে গোটা রাজ্যে ২ কোটি পরিবারে বিনামূল্যে পানীয় জল পৌঁছে দেবার ঘোষণা করা হয়। আর সেই নির্দেশের অঙ্গ হিসাবে পূর্ব বর্ধমান জেলায় ইতিমধ্যেই ৪৭ হাজার ৫৯১টি পরিবার কে পানীয় জলের সংযোগ পৌঁছে দেওয়ার কাজ জোর কদমে শুরু হয়ে গেলো। পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি শম্পা ধাড়া জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ পেয়েই পূর্ব বর্ধমান জেলার ২৩টি ব্লকেই জোর কদমে কাজ শুরু হয়ে গেছে।
সভাধিপতি জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই নতুন বেশ কয়েকটি প্রকল্পের টেণ্ডারও হয়ে গেছে। জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য দপ্তরের কর্মাধ্যক্ষ বাগবুল ইসলাম জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ অনুসারে রাজ্যে ২ কোটি পরিবারের মধ্যে পূর্ব বর্ধমান জেলায় প্রথম ধাপে ১০ লক্ষ১৪ হাজার ৫২৭টি পরিবারকে এই সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। তিনি জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই জেলায় ৬৫টি জলপ্রকল্প চালু হয়ে গেছে। প্রথম দফায় এই প্রকল্প থেকে নলবাহিত এই পানীয় জলের সংযোগ দেওয়া হবে। এজন্য উপভোক্তাদের কাছ থেকে কোনোরকম অর্থই নেওয়া হবে না। তিনি জানিয়েছেন, পিএইচই দপ্তরের অধীনে ইতিমধ্যেই গোটা জেলায় পরিবার চিহ্নিত করণের কাজ শুরু হয়ে গেছে।
একইসঙ্গে বেশ কয়েকটি প্রকল্পের নতুন করে ‘টেণ্ডারও করা হয়ে গেছে। খুব শীঘ্রই সেই সমস্ত প্রকল্পের কাজ শুরু করা হবে। আর তারপরেই পরবর্তী জলসংযোগ দেবার কাজ শুরু হবে। বাগবুল ইসলাম জানিয়েছেন, ২০২১ সালের মার্চ মাসের মধ্যেই নির্ধারিত এই প্রকল্পের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করার কাজ শুরু হয়েছে। উল্লেখ্য, মুখ্যমন্ত্রীর এই জলস্বপ্ন প্রকল্পে গোটা রাজ্যে আগামী ৫ বছরের মধ্যে ২ কোটি পরিবারকে বিনামূল্যে এই জলসংযোগ দেবার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বাগবুল ইসলাম জানিয়েছেন, তাঁরা চেষ্টা করছেন নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই পূর্ব বর্ধমান জেলায় প্রায় সমস্ত পরিবারেই এই জল সংযোগ পৌঁছে দিতে।
তিনি জানিয়েছেন, চলতি জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে জেলার ৪টি মহকুমাতেই জেলা প্রশাসন, পঞ্চায়েত স্তরের জনপ্রতিনিধি প্রমুখদের নিয়ে জলসংযোগের এই প্রকল্প নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। জলসংযোগ দেবার ক্ষেত্রে কোথাও যেন কোনো অস্বচ্ছতা না থাকে, আর্থিক লেনদেন না থাকে এবং রাজনীতির রংবিচার না করা হয় প্রভৃতি বিষয়গুলি নিয়ে সেই সভায় বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। একইসঙ্গে উপভোক্তাদের জন্যও জলের অপচয় রোধে কি কি করণীয় সেই বিষয়েও আলোচনা হবে। এরপর পাড়ায় পড়ায় জলের অপচয় রোধের জন্য প্রচারও চালানো হবে।

Xd

এদিকে, শুক্রবার জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য দপ্তরের বর্ধিত একটি সভায় জেলার সামগ্রিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। একদিকে করোনা নিয়ে প্রচার অন্যদিকে, চলতি সময়ে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, ডায়রিয়া প্রভৃতি রোগ প্রতিরোধেও ব্যাপক সচেতনতার কাজ নিয়েও আলোচনা হয়। বাগবুল ইসলাম জানিয়েছেন, জেলায় এখনও পর্যন্ত মোট ২০৯জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তার মধ্যে একজন মারা গেছেন। করোনা রোধের ক্ষেত্রে তাই সমস্ত পঞ্চায়েত এলাকায় মাস্ক পড়া বাধ্যতামূলক করার ওপর এদিনের আলোচনায় জোর দেওয়া হয়েছে। এদিনের এই বর্ধিত বৈঠকে জেলা পরিষদের সভাধিপতি শম্পা ধাড়া, জেলা পরিষদের অতিরিক্ত জেলাশাসক প্রবীর চট্টোপাধ্যায়, নারীও শিশু কর্মাধ্যক্ষ মিঠু মাঝি, মিশন নির্মল বাংলার কো-অর্ডিনেটর তপন পাল প্রমুখরা হাজির ছিলেন।হাজির ছিলেন জেলার সমস্ত পঞ্চায়েত সমিতির জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষরাও।

বাগবুল ইসলাম জানিয়েছেন, বর্ষাকালীন বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে প্রতিটি পঞ্চায়েত এলাকার টিউবওয়েলগুলি শোধন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এদিন। যদিও তিনি জানিয়েছেন, অন্যান্যবার চলতি সময়ে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়ার পাশাপাশি ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যাও যেখানে দেখা যায় এখনও এই সময়কালে একটিও ডায়রিয়ার ঘটনা আসেনি। এমনকি গত ডিসেম্বর মাসেই ডেঙ্গুতে ৮জন আক্রান্তের পর নতুন করে আর কোনো ডেঙ্গু আক্রান্তের ঘটনা ঘটেনি। অপরদিকে, মিশন নির্মল বাংলা প্রকল্পে গোটা জেলায় যে ৫২হাজার ৭৫৫টি শৌচাগার নির্মাণ বাকি ছিল তার মধ্যে ৪৩ হাজার ৩২২টি শৌচাগার ইতিমধ্যেই তৈরী করা হয়ে গেছে। চলতি জুলাই মাসের মধ্যে বাকিগুলিও সম্পন্ন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।