মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে রিসার্চ করে ডক্টরেট উপাধি পেলেন পূর্ব বর্ধমানের ছেলে রেজাউল ইসলাম মোল্লা

সৌরীশ দে : মহাপুরুষদের আদর্শে অনুপ্রাণিত হতে অনেককেই দেখতে পাওয়া যায়। এমনকি বিখ্যাত ব্যাক্তিদের আদর্শ কে পাথেয় করে জীবনের চলার পথও ঠিক করে নেয় অনেকে। সেই সব মহান ব্যাক্তিত্বদের নিয়ে পরবর্তীকালে তৈরিও হয় ইতিহাস। যা থেকে আমরা জানতে পারি তাঁদের জীবন আদর্শ। কিন্তু এমন ঘটনা নজিরবিহীন যে আমাদের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের তো বটেই এমনকি ভারতবর্ষের অন্য কোনো রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর জীবদ্দশায় তাঁর আদর্শ,জীবন সংগ্রাম গবেষণার বিষয়বস্তু হয়েছে। 

পূর্ব বর্ধমান জেলার কালনার হাতিপোঁতা গ্রামের বছর সাতাসের যুবক রেজাউল ইসলাম মোল্লা (রানা) মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর আদর্শ ছাত্র যুবদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে ২০১৪ সাল থেকে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। রেজাউল তখন মেদনীপুর জঙ্গল মহলের বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা বিভাগের ছাত্র। তার গবেষণার বিষয় ছিল  ‘ক্যারিশমেটিক কোয়ালিটি অফ উইমেন্স লীডারস ইন পিউপিল ম্যানেজমেন্ট। এ কেস স্টাডি অফ মাস লিডার মমতা ব্যানার্জী।’ কেন্দ্রীয় সরকারের ইউজিসি অনুমোদিত ফেলোশিপ প্রাপক এই ছাত্রের গবেষণার খবরে খোদ মুখ্যমন্ত্রীও সেই সময় অভিভূত হয়েছিলেন। আর গবেষণা শুরুর প্রায় পাঁচ বছর পর রেজাউল এই বিষয়ে ডক্টরেট উপাধিতে ভূষিত হলেন গত ২২ডিসেম্বর। উল্লেখ্য ২০১৭সালের ১২ জুলাই মেদিনীপুরে একটি জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর সঙ্গে রেজাউলের এই গবেষণা সংক্রান্ত বিষয়ে কথাও হয়েছিল। সেদিন মুখ্যমন্ত্রী নিজেই কন্যাশ্রী প্রকল্পের সাফল্যের বিষয়টিকে এই গবেষণা পত্রে লিপিবদ্ধ করার আবেদনও জানিয়েছিলেন বলে রেজাউল জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য এমন একটি বিষয়ের ওপর গবেষণা হচ্ছে জেনে সেই সময় বিশ্বের তিনটি নামি আন্তর্জাতিক পত্রিকা এই গবেষণা পত্র প্রকাশও করে। রেজাউল জানিয়েছেন, ২০১৪ সালের জুলাই মাস নাগাদ মমতা ব্যানার্জীকে নিয়ে গবেষণা শুরু করেন তিনি। এর আগে দেশের কোনো মুখ্যমন্ত্রীকে গবেষণার বিষয় করে পড়াশুনা করেছেন এমন নজির তার জানা নেই বলেই জানিয়েছেন রানা।
কিন্তু কি কারণে মমতা ব্যানার্জীই গবেষণার বিষয়বস্তু হলেন? আসুন জেনে নি।
একজন অতি সাধারণ ঘরের মেয়ে থেকে দেশের একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পথ যে মমতা ব্যানার্জীর কাছে খুব সহজ বা মসৃন ছিল না সেই বিষয়টাই রেজাউলকে তার গবেষণার বিষয় করতে উদ্বুদ্ধ করে। রাজনীতিতে আসার পর থেকে নানা ঘাত প্রতিঘাত পেরিয়ে যেতে হয়েছে মমতা ব্যানার্জীকে। মানুষের প্রতি অন্যায়,অত্যাচারের বিরুদ্ধে বারবার রুখে দাঁড়াতে হয়েছে তাঁকে। ফলে বাম আমলে শাসকদলের হাতে নিগৃহিত হতে হয়েছে বহুবার।ধীরে ধীরে জনপ্রিয় নেত্রী উঠেছেন মমতা। বানতলা,ধানতলা,সিঙ্গুর,নন্দীগ্রাম আন্দোলন মমতা ব্যানার্জীকে জননেত্রী করে তোলে। একাধিকবার প্রতিবাদ জানিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করেছেন। এরপর ৩৪ বছরের বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী পদে আসীন হন মমতা ব্যানার্জী।
দেশের অন্যান রাজ্যের মহিলা নেত্রীদের জনপ্রিয়তার নিরিখে মমতা ব্যানার্জী যে অনেক এগিয়ে – কেন? তার জন্যই ছিল রেজাউলের গবেষণা। দেশের একটা রাজ্যের আঞ্চলিক দল কি ভাবে সর্বভারতীয় পর্যায়ে উন্নীত হলো, সেটাও ছিল তার গবেষণার বিষয়। পাশাপাশি একজন লড়াকু নেত্রী থেকে জননেত্রী আর তারপর রাজ্যের শাসন ক্ষমতার শীর্ষে পৌঁছানোর ইতিবৃত্তই ছিল রেজাউলের গবেষণার রসদ। রেজাউল জানিয়েছেন, ইচ্ছা আছে মুখ্যমন্ত্রীর সম্মতি পেলে তাঁর হাত দিয়েই প্রকাশ হবে এই গবেষণা পত্র। রেজাউলের গবেষণায় মমতার সঙ্গে জয়ললিতা, মায়াবতী, সুষমা স্বরাজদের মতো নেত্রীদের তুলনামূলক আলোচনা থাকছে৷

Recent Posts