মেমারির বড়পলাসনে শতাধিক গাছ কেটে পাচার করার অভিযোগ, বন দপ্তরের অভিযানে উদ্ধার প্রচুর গাছের গুড়ি
ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,মেমারি: সদ্য জেলা জুড়ে পালন করা হয়েছে বিশ্ব পরিবেশ দিবস। জনপ্রতিনিধি থেকে প্রশাসনিক আধিকারিকরা পরিবেশ বাঁচাতে গাছের গুরুত্বের কথা জানিয়ে ব্লক থেকে শহরে প্রচুর বৃক্ষ রোপণ করেছেন। ওইদিনই ঘটা করে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করেছিল মেমারি ২ ব্লকের বড়পলাসন ১ গ্রাম পঞ্চায়েতও। কিন্তু বিশ্ব পরিবেশ দিবস পেরিয়ে যেতেই দিন দুপুরে এই পঞ্চায়েত এলাকাতেই দেদার গাছ কেটে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ কে ঘিরে জোর সোরগোল পড়েছে। স্থানীয় গ্রামবাসীদের একাংশ এই গাছ চুরি চক্রের সঙ্গে খোদ পঞ্চায়েতের জড়িয়ে থাকার অভিযোগ সামনে এনেছে। অভিযোগ এলাকারই এক গাছ মাফিয়া কয়েক দিন ধরে মালম্বা এলাকার খড়ি নদীর ধারে থাকা কয়েকশো গাছ অবাধে কেটে নিলেও পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে নুন্যতম উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
সোমবার সকালে সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিরা বিষয়টি বনদপ্তর, থানা ও বিডিও কে জানানোর পরে পুলিশ ও বনদপ্তরের উদ্যোগে ওই এলাকায় অভিযান চালানো হয়। জেলা বনাধিকারিক নিশা গোস্বামী বলেন, ‘সংবাদ মাধ্যমের কাছ থেকে খবর পাবার পরেই আমাদের আধিকারিকরা এলাকায় গিয়েছিল। পুলিশের উপস্থিতিতে আমরা ৩৫ সিএফটি কাটা গাছ উদ্ধার করেছি। ২৬টির বেশী গাছের ডাল নিয়ে এসেছি। নির্দিষ্ট আইনে আমরা এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’
স্থানীয় এক গ্রামবাসী সন্তোষ মাঝি বলেন, ‘শুক্রবার বিকেল থেকে গাছ কাটা শুরু হয়েছে। সবার সামনেই কাটছে। আমরা প্রধান কে ফোন করে জানিয়েছি। উনি কোন ব্যবস্থা নেননি।’ গোলক ঘোষ নামে এক গ্রামবাসী বলেন, ‘ছুটির দিন দেখেই গ্রামের কয়েকজন গাছ ব্যবসায়ী এই কাজটা শুরু করেছিল। প্রায় দেড়শোরও বেশী গাছ কেটে ট্রাক্টারের করে নিয়ে চলে গিয়েছে। প্রধান সব জানে। কেন ব্যবস্থা নেয়নি আপনারাই বুঝে নিন।’ গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, গাছ মাফিয়ারা এমন ভাবে গাছ গুলোকে কেটে নিচ্ছে পরবর্তীকালে কেউ বুঝতেও পারবে না যে সেখানে গাছ ছিল। মাটির নিচ থেকে শিকড় সমেত তুলে নিয়ে সেই জায়গায় মাটি ভরাট করে দিচ্ছে দুষ্কৃতীরা।
পঞ্চায়েত প্রধান জোৎস্না কৈবর্ত্য বলেন, ‘আমি গাছ কাটার বিষয়টি রবিবার জানতে পেরেছি। তখনতো আমার পক্ষে পুলিশকে চিঠি দেওয়া সম্ভব ছিল না। গ্রামের লোক অভিযোগ করলেই হবে না। অভিযোগ প্রমান করতে হবে। আমি কি গাছের তলায় বসে থাকবো যে গাছ কে কেটে নিয়ে যাচ্ছে দেখবার জন্য। সোমবার বন দপ্তরের লোকেদের সঙ্গে আমি ছিলাম। গ্রামের লোকেদের কাছ থেকে জানতে পেরেছি হীরা শেখ নামে একজন গাছ গুলো চুরি করেছে। তার নামে আমি থানায় অভিযোগ জানাবো। পুলিশ এরপরে ব্যবস্থা নেবে।’
মেমারি থানার পুলিশ সকালে খবর পাবার পরেই বনদপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করে। মেমারি ২ ব্লকের বিডিও সৈকত মাঝি বলেন, ‘পুলিশ গাছ কাটার বিষয়টি জানানোর পরে আমরাও বনদপ্তরে যোগাযোগ করেছি। এভাবে গাছ কাটার ঘটনায় আমরাও স্তম্ভিত। গাছ কোন ছোট জিনিস নয় যে রাতের অন্ধকারে কেউ চুরি করে নিয়ে যাবে। আমরা প্রতিটি মিটিংয়ে সমস্ত পঞ্চায়েত গুলিকে এ বিষয়ে সতর্ক করেছি। বড়পলাশন ১ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় এই ঘটনা ঘটলেও কেন কেউ কোন ব্যবস্থা নিল না, সেটাও আমরা খতিয়ে দেখব।’