ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,মেমারী: বর্ধমানের মেমারী ২নং ব্লক ভূমি দপ্তরের অফিসে এক শ্রেণীর কর্মীর মদতে চলছে দেদার দুর্নীতি। অভিযোগ উঠেছে জমিজমা সংক্রান্ত রীতিমত অবৈধ কার্যকলাপ চলছে এই দপ্তরে দিনের পর দিন। আর এই কাজে মদত দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে দপ্তরেরই এক কর্মী সহ দুই যুবকের বিরুদ্ধে। শাসকদলের মদতেই কয়েকজন মুহুরী দীর্ঘদিন ধরেই এই কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বলে এবার স্থানীয় বোহার, পোকারা এলাকার বাসিন্দারা সরাসরি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে লিখিত অভিযোগপত্র পাঠালেন। আর এই ঘটনায় রীতিমত চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।
বিজ্ঞাপন
এই ব্লকের বাসিন্দারা গণস্বাক্ষর করে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে এই দুর্নীতির তদন্ত করে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেবারও আর্জি জানিয়েছেন। পাশপাশি পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক কেও অভিযোগের প্রতিলিপি পাঠানো হয়েছে। এলাকার বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, মেমারী ২নং ব্লক ভূমি দপ্তরে বহিরাগত দুই যুবক নিয়মিত অফিসের কমপিউটার সহ যাবতীয় সুযোগ সুবিধা নিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকার বিনিময়ে জমিজমা সংক্রান্ত কাজ করছে। এমনকি সাধারণ মানুষ কেউ এই অফিসে গেলে তাঁকে ওই দুই যুবক সরাসরি জানিয়ে দিচ্ছেন তাঁদের ছাড়া এই দপ্তরে কোনো কাজ হবে না।
বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, রীতিমত ভূমি দপ্তরের অফিসারদের সামনে বসে ওই দুই যুবক কমপিউটারে কাজ করছেন। কিভাবে এটা সম্ভব – প্রশ্ন তুলেছেন গ্রামবাসীরা। তাঁরা অভিযোগ করেছেন, শুধু এটাই নয়, ওই দুই যুবক রীতিমত হুমকি দিয়ে টাকা আদায় করছেন। ন্যূনতম ৫ হাজার টাকা না দিলে কারও কোনো কাজ করা হচ্ছে না। এর ফলে গোটা এলাকা জুড়ে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। গ্রামবাসীরা অভিযোগ করেছেন, সরকারী অফিস হওয়া সত্ত্বেও রাত্রি ৯টা পর্যন্ত এই অফিস খুলে রেখে কাজ করা হচ্ছে। এর সঙ্গে জড়িত রয়েছেন কয়েকজন মুহুরীও। এই ঘটনায় শাসকদলের নাম জড়ানোয় অভিযোগের গুরুত্ব আরও বেড়েছে।
এদিকে, এই অভিযোগ সম্পর্কে খোদ মেমারী ২ ভূমি দপ্তরের আধিকারিক অচিন্ত চক্রবর্তী বলেন, এই ধরণের অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। বরং নিয়ম বহির্ভুতভাবে কিছু মানুষ কাজ হাসিল করতে এসে অফিসের নিয়মের জালে আটকে গিয়ে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, অফিসের কম্পিউটার কেবলমাত্র সেই ব্যক্তিই ব্যবহার করতে পারেন যার কাছে সিস্টেমের পাসওয়ার্ড রয়েছে। কারণ দপ্তরের সমস্ত কাজ অনলাইন মাধ্যমে হয়। কাজের চাপ এবং গুরুত্ব অনুযায়ী অনেক সময় বেশি সময় অফিসে কাজকর্ম করতে হয়। এর মধ্যে কোনো অস্বাভাবিকতা নেই। তিনি আরো বলেন, অফিসের কর্মীদের বাইরে সরকারি কাজ করার সুযোগ কারুরই নেই, এমনকি অফিসের মধ্যে মুহুরীদেরও প্রবেশ নিষিদ্ধ।
যদিও তৃনমূল কংগ্রেসের এক নেতা জানিয়েছেন, এই ভূমি দপ্তরে কাজ করা মুহুরীদের কাছে রয়েছে একাধিক জাল স্ট্যাম্প। পঞ্চায়েত, ব্লক অফিসের আধিকারিকদের নামেও তাদের কাছে এই জাল স্ট্যাম্প রয়েছে। এর মাধ্যমেই চলছে দেদার দুর্নীতি। যদিও এব্যাপারে মেমারী ২নং ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি মহম্মদ ইসমাইল জানিয়েছেন, এব্যাপারে এখনও তাঁর কাছে কোনো লিখিত অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ আসলে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্যদিকে, পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সহকারী সভাধিপতি দেবু টুডু জানিয়েছেন, তৃণমূলের নাম করে কেউ কোনো দুর্নীতি করলে কাউকে ছাড়া হবে না। তিনি জানিয়েছেন, এব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পেলেই তাঁরা কড়া ব্যবস্থা নেবেন।