বিষ্ণু মণ্ডল জানিয়েছেন, রোগী মারা যাবার পরও নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ তাঁদের জানিয়েছেন রোগীর বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে হবে। একজন মৃত ব্যক্তির পরীক্ষা নিরীক্ষা কিভাবে করা যায় – তা নিয়েও তাঁদের সদুত্তর দেওয়া হয়নি। উল্টে মৃতদেহ আটকে রাখা হয়। উল্লেখ্য, নার্সিংহোমে মৃতদেহ আটকে রেখে রোগীপক্ষের কাছ থেকে টাকা আদায় করা নিয়ে খোদ মুখ্যমন্ত্রী বারবার হুঁশিয়ারী দিয়েছেন। কিন্তু তারপরও সেই একই অবস্থান এবার দেখা গেল বর্ধমানেই। বিষ্ণু মণ্ডলের অভিযোগ, এরই মাঝে নার্সিংহোমে ভাঙচুর করা হয়েছে এই অভিযোগে পুলিশ ডেকে তাঁদের ধরিয়ে দেওয়া হয়। তিনি জানিয়েছেন, তাঁরা কোনো ভাঙচুরই করেননি। রোগীর মৃত্যুর খবর কেন তাঁদের সঠিক সময়ে জানানো হয়নি সেই নিয়ে সেই সময় নার্সিংহোমে উপস্থিত ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসা করা হলে তারা তাদের হেনস্থা করে। হাতাহাতিও হয়নি। এরপরই সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগে, মৃতের দুই ছেলে পরেশ ও নরেশ দাস, আত্মীয়া পিংকি দাস এবং মৃতের স্ত্রী বন্দনা দাসকে পুলিশ আটক করে বর্ধমান থানায় তুলে নিয়ে আসে।
তিনি জানিয়েছেন, নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ তাঁদের কাছে অতিরিক্ত টাকা দাবী করেছেন। কিন্তু যেহেতু তাঁদের পরিবারের লোকেদের পুলিশ আটক করেছে তাই তাঁরা কিছু করতে পারছেন না। অবশ্য তিনি জানিয়েছেন, পাল্টা নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে তাঁরা অভিযোগ করতে চলেছেন। এদিকে, এই ঘটনা সম্পর্কে নার্সিংহোমের মালিক ডা. আবীর গুহ জানিয়েছেন, ওই রোগীকে যখন নিয়ে আসা হয়েছিল তখনই তাঁর অবস্থা অত্যন্ত সংকটজনক ছিল। তাঁরা সর্বতোভাবে চেষ্টা করেছেন কিন্তু বাঁচানো যায়নি। তিনি জানিয়েছেন, সাধারণ কেউ মারা গেলে একটি নির্দিষ্ট সময়ের পরই তাঁর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলতে হয়। তাই রোগীপক্ষকে সঙ্গে সঙ্গে জানানো হয়নি। ডা. গুহ দাবী করেছেন, ওই রোগীর পক্ষের লোকজন আইসিইউতে ঢুকে ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে, ভাঙচুর করেছে। তাঁদের মূল্যবান যন্ত্রপাতির ক্ষতি হয়েছে। তবে মৃতদেহ আটকে রাখার অভিযোগ সম্পুর্ন মিথ্যা।
তিনি জানিয়েছেন, রোগীপক্ষের কাছে কোনো অতিরিক্ত টাকা চাওয়া হয়নি। তিনি জানিয়েছেন, ওই রোগীপক্ষের আত্মীয়দের বিরুদ্ধে তাঁরা অভিযোগ করছেন। এদিকে, যখন রোগীপক্ষ এবং নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের মধ্যে অভিযোগ আর পাল্টা অভিযোগ চলছে সেই সময় এই নার্সিংহোমকেই সম্পূর্ণ অবৈধ বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন জেলা মুখ্য স্বাস্থ্যাধিকারিক ডা. প্রণব রায়। তিনি জানিয়েছেন, ওই নার্সিংহোমের কোনো স্বীকৃতি নেই। তাঁরা পুননর্বীকরণের জন্য আবেদন জানালেও তা বাতিল হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই কিভাবে চলছে ওই অবৈধ নার্সিংহোম – তা নিয়েই এবার বড়সড় প্রশ্ন উঠে গেল মুখ্যমন্ত্রীর বর্ধমান সফরের আগেই।
অপরদিকে শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী রোগী পক্ষের লোকেদের কাছে জানতে পারা গেছে, নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ রোগীর চিকিৎসা বাবদ খরচ ছাড়াও নার্সিংহোমে ভাঙচুর ও ক্ষতিসাধনের জন্য বাড়তি টাকা নিয়েছে তাঁদের কাছ থেকে। পরিবর্তে রোগীর আত্মীয়দের উপর থেকে পুলিশে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেবে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ এই কথাও তারা জানিয়েছেন রোগীর আত্মীয়দের। শেষমেষ সোমবার ভোরে রোগীর মৃত্যু হলেও এদিন রাত সাড়ে ৭টা নাগাদ রোগীর আত্মীয়রা নার্সিংহোম থেকে মৃতদেহ ছাড়িয়ে নিয়ে যেতে পারেন বলে বিষ্ণু মন্ডল জানিয়েছেন।