রমরমিয়ে চলছে বর্ধমানে একাধিক অবৈধ নার্সিংহোম, মুখ্যমন্ত্রীর সফরের আগেই ফের মৃতদেহ আটকে রাখার অভিযোগ, তীব্র চাঞ্চল্য

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: মুখ্যমন্ত্রী আসার আগেই বর্ধমান শহরের খোশবাগানে অবৈধ নার্সিংহোমে রোগী মৃত্যু কে কেন্দ্র করে তোলপাড় বর্ধমান। কিভাবে দিনের পর দিন স্বাস্থ্যদপ্তরের অনুমোদনহীন একাধিক নার্সিংহোম রমরমিয়ে চলছে সেই প্রশ্ন যেমন উঠেছে তেমনি বছরের পর বছর এই সমস্ত নার্সিংহোম অবৈধভাবে রোগী ভর্তি প্রক্রিয়া চালিয়ে গেলেও প্রশাসনিক নজরদারির অভাব এবং উদাসীনতাকেই দায়ী করছেন রোগীদের পরিজনেরা। যদিও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানা গেছে, নির্দিষ্ট কোনো লিখিত অভিযোগ না পাওয়ায় কোনো পদক্ষেপই নাকি নেওয়া যায়নি। পাশপাশি প্রোগ্রেসিভ নার্সিংহোম এন্ড হসপিটাল এসোসিয়েশনের রাজ্য সম্পাদক সেখ আলহাজ্বউদ্দিন জানিয়েছেন, বারবার অনুমোদনহীন নার্সিংহোমগুলির বিরুদ্ধে প্রশাসনের কাছে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে আসছেন তারা। প্রশাসনিক পদক্ষেপের পরেও কিভাবে এইসমস্ত অনুমোদনহীন নার্সিংহোমগুলো তাদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে সে ব্যাপারে ফের তারা প্রশাসনের দ্বারস্থ হবেন।

জানা গছে, ঝাড়খণ্ডের পাকুড় এলাকার বাসিন্দা তরণীসেন দাস (৬০) নামে এক ব্যক্তিকে শনিবার বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে সরিয়ে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করা হয় বর্ধমানের একটি বেসরকারী নার্সিংহোম মেডভিউতে। রোগীপক্ষের অভিযোগ, সোমবার ভোরে মারা যান ওই ব্যক্তি। মৃতের আত্মীয় বিষ্ণু মণ্ডল জানিয়েছেন, তাঁদের রোগীর অবস্থা খারাপ ছিল এটা ঠিকই। সেজন্য তাঁকে ওই নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁকে আইসিইউতে ভেণ্টিলেশনে রাখাও হয়। কিন্তু এদিন ভোরবেলায় মারা যাওয়ার পরও মৃতের আত্মীয়দের কিছুই জানানো হয়নি। এব্যাপারে তাঁরা দফায় দফায় ডাক্তারবাবুর সঙ্গে দেখা করতে চাইলেও তিনি দেখা করেননি। উল্টে নার্সিংহোমের কর্মীরা তাঁদের ওপর চড়াও হয়।

বিষ্ণু মণ্ডল জানিয়েছেন, রোগী মারা যাবার পরও নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ তাঁদের জানিয়েছেন রোগীর বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে হবে। একজন মৃত ব্যক্তির পরীক্ষা নিরীক্ষা কিভাবে করা যায় – তা নিয়েও তাঁদের সদুত্তর দেওয়া হয়নি। উল্টে মৃতদেহ আটকে রাখা হয়। উল্লেখ্য, নার্সিংহোমে মৃতদেহ আটকে রেখে রোগীপক্ষের কাছ থেকে টাকা আদায় করা নিয়ে খোদ মুখ্যমন্ত্রী বারবার হুঁশিয়ারী দিয়েছেন। কিন্তু তারপরও সেই একই অবস্থান এবার দেখা গেল বর্ধমানেই। বিষ্ণু মণ্ডলের অভিযোগ, এরই মাঝে নার্সিংহোমে ভাঙচুর করা হয়েছে এই অভিযোগে পুলিশ ডেকে তাঁদের ধরিয়ে দেওয়া হয়। তিনি জানিয়েছেন, তাঁরা কোনো ভাঙচুরই করেননি। রোগীর মৃত্যুর খবর কেন তাঁদের সঠিক সময়ে জানানো হয়নি সেই নিয়ে সেই সময় নার্সিংহোমে উপস্থিত ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসা করা হলে তারা তাদের হেনস্থা করে। হাতাহাতিও হয়নি। এরপরই সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগে, মৃতের দুই ছেলে পরেশ ও নরেশ দাস, আত্মীয়া পিংকি দাস এবং মৃতের স্ত্রী বন্দনা দাসকে পুলিশ আটক করে বর্ধমান থানায় তুলে নিয়ে আসে।

তিনি জানিয়েছেন, নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ তাঁদের কাছে অতিরিক্ত টাকা দাবী করেছেন। কিন্তু যেহেতু তাঁদের পরিবারের লোকেদের পুলিশ আটক করেছে তাই তাঁরা কিছু করতে পারছেন না। অবশ‌্য তিনি জানিয়েছেন, পাল্টা নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে তাঁরা অভিযোগ করতে চলেছেন। এদিকে, এই ঘটনা সম্পর্কে নার্সিংহোমের মালিক ডা. আবীর গুহ জানিয়েছেন, ওই রোগীকে যখন নিয়ে আসা হয়েছিল তখনই তাঁর অবস্থা অত্যন্ত সংকটজনক ছিল। তাঁরা সর্বতোভাবে চেষ্টা করেছেন কিন্তু বাঁচানো যায়নি। তিনি জানিয়েছেন, সাধারণ কেউ মারা গেলে একটি নির্দিষ্ট সময়ের পরই তাঁর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলতে হয়। তাই রোগীপক্ষকে সঙ্গে সঙ্গে জানানো হয়নি। ডা. গুহ দাবী করেছেন, ওই রোগীর পক্ষের লোকজন আইসিইউতে ঢুকে ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে, ভাঙচুর করেছে। তাঁদের মূল্যবান যন্ত্রপাতির ক্ষতি হয়েছে। তবে মৃতদেহ আটকে রাখার অভিযোগ সম্পুর্ন মিথ্যা।

তিনি জানিয়েছেন, রোগীপক্ষের কাছে কোনো অতিরিক্ত টাকা চাওয়া হয়নি। তিনি জানিয়েছেন, ওই রোগীপক্ষের আত্মীয়দের বিরুদ্ধে তাঁরা অভিযোগ করছেন। এদিকে, যখন রোগীপক্ষ এবং নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের মধ্যে অভিযোগ আর পাল্টা অভিযোগ চলছে সেই সময় এই নার্সিংহোমকেই সম্পূর্ণ অবৈধ বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন জেলা মুখ্য স্বাস্থ্যাধিকারিক ডা. প্রণব রায়। তিনি জানিয়েছেন, ওই নার্সিংহোমের কোনো স্বীকৃতি নেই। তাঁরা পুননর্বীকরণের জন্য আবেদন জানালেও তা বাতিল হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই কিভাবে চলছে ওই অবৈধ নার্সিংহোম – তা নিয়েই এবার বড়সড় প্রশ্ন উঠে গেল মুখ্যমন্ত্রীর বর্ধমান সফরের আগেই।

অপরদিকে শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী রোগী পক্ষের লোকেদের কাছে জানতে পারা গেছে, নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ রোগীর চিকিৎসা বাবদ খরচ ছাড়াও নার্সিংহোমে ভাঙচুর ও ক্ষতিসাধনের জন্য বাড়তি টাকা নিয়েছে তাঁদের কাছ থেকে। পরিবর্তে রোগীর আত্মীয়দের উপর থেকে পুলিশে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেবে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ এই কথাও তারা জানিয়েছেন রোগীর আত্মীয়দের। শেষমেষ সোমবার ভোরে রোগীর মৃত্যু হলেও এদিন রাত সাড়ে ৭টা নাগাদ রোগীর আত্মীয়রা নার্সিংহোম থেকে মৃতদেহ ছাড়িয়ে নিয়ে যেতে পারেন বলে বিষ্ণু মন্ডল জানিয়েছেন।

Recent Posts