তিনি জানিয়েছেন, তিনি বিচার চান। যেমন তেমন বিচার নয়, আফরোজের মতই তাদেরও বিচার চাই। সোনিয়া খাতুন জানিয়েছেন, প্রতিদিনই মাটি নিয়ে খেলা করত সেখ আফরোজ (৭) এর সঙ্গে আরও পাড়ার কয়েকজন শিশু। সোমবার সকাল ১১টা ১৫ নাগাদ আফরোজ মাটি আনার জন্য তাঁর কাছে একটি পাত্রও চায়। তিনি তা দেন। এরপর সে মাটি আনতে চলে যায়। তার সঙ্গে ছিল আরও দুজন শিশু। যার মধ্যে সেখ ইব্রাহিম এখনও বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন। আর একজন শিশু ঠিক সেই সময় ভাত খেতে বাড়িতে চলে এসেছিল। নাহলে সেও এই ঘটনায় আক্রান্ত হতে পারত।
সোনিয়া খাতুন জানিয়েছেন, এলাকায় বোমাবাজি নতুন কিছু নয়। পার্টি পার্টি করে প্রায়ই এলাকায় বোমাবাজি হয়। সোনিয়া খাতুন জানিয়েছেন, পাড়ার এই ক্লাব রসিকপুর যুব ওয়েলফেয়ার সোসাইটিতে ছেলেপিলেরা আড্ডা দেয়। আফরোজও সেখানে রোজ যেত। ক্লাবের বদনাম করতেই ক্লাবের সামনের এই জায়গায় বোমা পুঁতে রাখা হয়েছিল। যারা এই ঘটনায় দায়ী তাদের কঠোরতম শাস্তি দিতে হবে। এদিকে, সোমবার এই ঘটনার পর মঙ্গলবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ফরেন্সিক দল এবং সিআইডির একটি দল। সোমবারই রাতে ঘটনাস্থলে হাজির হন বর্ধমান দক্ষিণ কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী খোকন দাস। তিনি এদিন নিহত শিশুর পরিবারকে সমবেদনা জানান।
খোকন দাস জানিয়েছেন, তাঁরা ক্ষতিগ্রস্থ এই পরিবারের পাশে রয়েছেন। পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন, এই ঘটনা বিজেপির কাজ। তারা ইতিমধ্যেই বাইরে থেকে লোক সহ নানান আগ্নেয়াস্ত্র এনে শহরের বিভিন্ন জায়গায় মজুদ করেছে। বর্ধমানে তারা সন্ত্রাস সৃষ্টি করতে চাইছে। অন্যদিকে, সোমবার এলাকায় ঢোকার অনুমতি না পাওয়ায় মঙ্গলবার সকালে ঘটনাস্থলে যান সিপিএম প্রার্থী পৃথা তা। এদিন তিনি সরাসরি অভিযোগ তোলেন, তৃণমূলের বালি মাফিয়ারা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে গোটা জেলা, বর্ধমান শহর। তারাই গোটা বর্ধমান শহরকে বারুদের স্তুপে পরিণত করেছে। পুলিশ প্রশাসনের কাছে বিচার চেয়ে লাভ নেই। নির্বাচন কমিশন কেন মুখ বুঝে রয়েছে – প্রশ্ন তুলেছেন পৃথা।
অন্যদিকে, সোমবার এই ঘটনায় বিজেপির প্রার্থী সন্দীপ নন্দী জানিয়েছেন, সোমবারই তাঁদের একটি প্রচার মিছিল ছিল। ঘটনার পরই তা মৌন মিছিল করা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, গত নির্বাচনগুলির মতই রাজ্যের শাসকদল গোটা শহর জুড়ে বোমা, আগ্নেয়াস্ত্র মজুদ করে সন্ত্রাস কায়েম করতে চাইছে। তাঁরা নির্বাচন কমিশনের কাছে এব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবার আবেদন জানিয়েছেন। এদিকে, মঙ্গলবার সকালে সিআইডির ৩ সদস্য এলাকা ঘুরে যান। যদিও সিআইডি এখনও পর্যন্ত এই ঘটনার তদন্তভার হাতে নেয়নি বলে জানা গেছে। তারপরেই ২সদস্যের ফরেন্সিক দল আসেন। এদিন তাঁরা ঘটনাস্থল থেকে বোমার বিভিন্ন টুকরো, সুতলি দড়ি, শিশুদের রক্তের নমুনা, বোমায় ব্যবহৃত ধাতব পদার্থ সংগ্রহ করেন। ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ চিত্রাক্ষ সরকার জানিয়েছেন, ঘটনাস্থলে মাটিতে ৩-৪ ইঞ্চি ব্যাসের গর্ত পাওয়া গেছে। সেখানেই বোমা রাখা ছিল বলে প্রাথমিক অনুমান। এদিন ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেন রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তী। তিনি মৃত শিশুর পরিবারের সঙ্গেও কথা বলেন। এই ঘটনায় রীতিমত উদ্বেগ প্রকাশ করে যান তিনি।