রাজনীতি থেকে অবসর নেবার ঘোষণা রবিরঞ্জনের, আর ভোটে দাঁড়াতে চাননা তিনি, শহর জুড়ে জল্পনা তুঙ্গে
ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান:এবার রাজনীতি থেকেই অবসর নেবার কথা ঘোষণা করলেন বর্ধমান দক্ষিণ কেন্দ্রের তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক রবীরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়। বুধবার ট্যুইটারে সে কথাই জানিয়েছেন তিনি। এদিন রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায় নিজের ট্যুইট হ্যান্ডেলে লেখেন, ‘আগামী বিধানসভা নির্বাচনে আমার বয়স ও শারীরিক কারণে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। দলনেত্রীকেও এই বার্তা পাঠিয়ে দিয়েছি। আমার প্রিয় বর্ধমানবাসীদের ধন্যবাদ জানাই ও তাঁদের কল্যাণ কামনা করি।’
জানা গেছে, গত ৩০ জানুয়ারীই তিনি দলনেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখে জানান, আর তিনি ভোটে লড়তে রাজী নন। মঙ্গলবার ছিল বর্ধমানে মাটি উৎসব। মাটি উৎসবের উদ্বোধন করতে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। জেলার ৬জন বিধায়ক এদিন মাটি উৎসবে হাজির থাকলেও দেখা মেলেনি রবিরঞ্জনের। শারীরিক অসুস্থতার কারণেই তিনি মাটি উৎসবে হাজির হতে পারেননি বলে তাঁর ঘনিষ্ট মহল থেকে শোনা গেছে।
যদিও বেশ কিছুদিন ধরেই এই প্রবীণ বিধায়ককে দলেই কোণঠাসা করে রাখা হয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে। এদিন ট্যুইটারে তাঁর লেখা প্রকাশিত হতেই শহর জুড়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।
রবিরঞ্জনবাবু জানিয়েছেন, তিনি আর রাজনীতির মধ্যেই থাকতে চাননা। রাজনীতি থেকে তিনি অবসর নিচ্ছেন। উল্লেখ্য, ২০১১ সালে নিরুপম সেনকে ৩০ হাজারের বেশি ভোটে হারিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রীসভায় আসেন রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়। ২০১৬ সালেও রেকর্ড মার্জিনে জেতেন। সাম্প্রতিককালে বর্ধমানে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা বারেবারেই প্রকাশ্যে এসেছে তাঁর বক্তব্যে। তা বাড়ে সিপিআইএম থেকে বিজেপি হয়ে আইনুল হক তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর। এক সময়ে সিপিআইএমের দাপুটে নেতা তথা পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান আইনুল হককে মানবেন না বলে প্রকাশ্যেই জানিয়েছেন তৃণমূলের আরেক দাপুটে নেতা রবিরঞ্জন ঘনিষ্ট খোকন দাস। রাজ্য নেতৃত্বও বর্ধমানে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে রাশ টানতে পারেনি।
বর্ধমানের রাজনৈতিক মহলে জল্পনা, আইনুল ও খোকন দুজনেই প্রার্থীপদের প্রত্যাশী। তার মধ্যেই বেড়েছে বিজেপি। বেশিরভাগ ওয়ার্ডে জিতলেও বর্ধমান দক্ষিণে সামান্য ভোটে পিছিয়ে ছিল গেরুয়া শিবির। এই ফলাফলে উৎসাহিত বিজেপি আসন্ন নির্বাচনে টার্গেট করেছে এই আসনটিকেও। উল্লেখ্য ২০১১ সালে এই বর্ধমান দক্ষিণ কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের প্রার্থী করার কথা ছিল বর্ধমানের শিশু চিকিৎসক ডা: স্বরূপ দত্তকে কিন্তু বর্ধমান দক্ষিণ আসনে সেই সিদ্ধান্ত বদলানো হয়। বাংলার সাহিত্য জগতের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব মহেশ্বেতা দেবীর সুপারিশে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক ড. রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়কে প্রার্থী করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ৩০ হাজার ভোটে তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী নিরুপম সেনকে হারিয়ে প্রথমবার তৃণমূল এই আসনটি দখল করে। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও জেতেন রবিরঞ্জন বাবু।
উল্লেখ্য রবিরঞ্জন বাবু রাজ্য সরকারের কারিগরী শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, বায়ো টেকনোলজি দফতরের মন্ত্রিত্বও সামলেছেন। প্রথম থেকেই তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে অস্বস্তিতে ছিলেন বিধায়ক। চেষ্টা করেছেন গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের উর্ধে উঠে কাজ করার। দ্বিতীয়বারের জন্য তাঁকে মন্ত্রীত্ব দেওয়া না হলেও তাঁকে বর্ধমান উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান করা হয়। বিডিএ-র চেয়ারম্যান হিসাবে তিনি শহর জুড়েই একাধিক উন্নয়নমূলক কাজ করলেও তৃণমূলের একাংশের অভিযোগ, রবিবাবুর উন্নয়ন সমগ্রটাই ছিল খোকন দাস কেন্দ্রিক। এমনকি তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে দলের কাজকর্মেও সেভাবে তাঁকে পাওয়া যায়নি। এদিকে,শহর জুড়ে চর্চা শুরু হয়েছে, এবার আর টিকিট পাবেন না বুঝেই সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি।
এব্যাপারে বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক সুনীল গুপ্তা জানিয়েছেন, রবিরঞ্জনবাবু একজন উচ্চশিক্ষিত আপাদমস্তক ভদ্র মানুষ। কিন্তু দিনে দিনে তৃণমূলের নোংরা তাঁকে ব্যথিত করে তুলছিল। যা তিনি মানতে পারেননি। আর বর্তমান সময়ে তৃণমূল আর ক্ষমতায় ফিরবে না বুঝতে পেরেই তিনি সরে দাঁড়িয়েছেন। তবে রাজনীতির মধ্যে না থেকেও তিনি সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করে যেতে পারবেন। অন্যদিকে, জেলা যুব কংগ্রেস সভাপতি গৌরব সমাদ্দারও জানিয়েছেন, চলতি তৃণমূলের নোংরা রাজনীতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছিলেন না রবিরঞ্জনবাবু। তাই নিজেকে সরিয়ে নিলেন। যদিও বর্ধমানে রবিরঞ্জনবাবুর অত্যন্ত স্নেহধন্য নেতা খোকন দাস জানিয়েছেন, রবিবাবুর বয়স ৮০ ছুঁয়েছে। তিনি শারীরিকভাবে আর ধকল নিতে পারছিলেন না। তাই ভোটে আর দাঁড়াবেন না বলেছেন। কিন্তু তাঁর কোনো কাছের মানুষ ভোটে দাঁড়ালে তিনি তার হয়ে কাজ করবেন বলে দাবী করেছেন খোকন।