তিনি জানিয়েছেন, সোমবার বিকালে তাঁরা খবর পান মেমারী থানার পালসিট এলাকার ইণ্ডিয়ান ধাবা নামে একটি হোটেলে চাকরী দেবার নাম করে টাকা নেওয়া হচ্ছে। এই খবর পাবার পরই তাঁরা সেখানে হানা দেন। সেই সময় ৩৩জন বেকার ছেলেমেয়ে সেখানে হাজির ছিল। তাদের কাছ থেকে ৩০০০ থেকে ৩২০০ টাকা করে নিয়ে তাদের শপথবাক্যের সার্টিফিকেট দেওয়া হচ্ছিল। তিনি জানিয়েছেন, রীতিমত মিনিষ্ট্রি অব রোড ট্রান্সপোর্ট এণ্ড হাইওয়েজ দপ্তরের নামে অশোকস্তম্ভ দেওয়া এই সার্টিফিকেট দেওয়া হচ্ছিল।
পুলিশ সেখান থেকে গ্রেপ্তার করে মিহির কুমার দাস, আলি হোসেন, হাসিবুল রহমান, আবুল বাসাদ, রিয়াজুল ইসলাম, ইব্রাহিম সেখ, সামসুর আলম এবং মলয় কর্মকার নামে ৮জনকে। এদের মধ্যে প্রথম ৬জনের বাড়ি মুর্শিদাবাদ জেলা নবগ্রাম থানার বিভিন্ন গ্রামে। বাকিদের মধ্যে সামসুর আলম সেখের বাড়ি বীরভূমের নলহাটি থানার গোপালচক এবং মলয় কর্মকারের বাড়ি হুগলীর সিঙ্গুর থানার জগতনগরে। মেমারীর কানাইডাঙার বাসিন্দা চাকরীপ্রার্থী সেখ মইনুল হাসানের অভিযোগে পুলিশ এই ৮জনকে গ্রেপ্তার করে। ধৃতদের মঙ্গলবার বর্ধমান আদালতে পেশ করা হয়। তাদের মধ্যে ৩জনকে ৫দিনের পুলিশী হেফাজত, এবং বাকিদের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, ধৃতদের কাছ থেকে নগদ ১ লক্ষ ১০ হাজার ৫০০ টাকা, ২টি রেজিষ্টার খাতা, ২টি পেন ড্রাইভ, ৭টি মোবাইল ফোন, ৭টি রাবার স্ট্যাম্প, রাজ্যপাল সহ সরকারী উচ্চপদস্থ আমলাদের কাছে দেওয়া একাধিক চিঠির কপি, চাকরীপ্রার্থীদের প্যানেল লিষ্ট উদ্ধার করা হয়েছে। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে ধৃতদের ব্যবহৃত গাড়িটিও।
এদিকে কলকাতার দেবাঞ্জন দাস কেলেঙ্কারীর রেশ মিটতে না মিটতেই এবার কেন্দ্র সরকারের হাইওয়ে সড়ক বিভাগে চাকরি দেবার নাম করে বড়সড় প্রতারণা চক্রের হদিশ পাওয়া যাওয়ায় রাজ্য জুড়ে আলোড়ন ছড়িয়েছে। শুধু তাইই নয়, এই প্রতারণা চক্রের মূল মাথার সঙ্গে বিজেপির একাধিক সাংসদ জড়িত থাকার অভিযোগও তুলেছেন চাকরীপ্রার্থীরা। তাঁরা দাবী করেছেন, তাঁদের জানানো হয়েছিল সংস্থার চেয়ারম্যানের সঙ্গে বিজেপির একাধিক সাংসদের ভাল যোগাযোগ রয়েছে। সুতরাং চাকরী নিশ্চিত।
প্রসঙ্গত ইতিমধ্যেই দেবাঞ্জন দাসের নিরাপত্তারক্ষীর সঙ্গে রাজ্যপালের ঘনিষ্ঠতা নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে উঠেছে। এমনকি সাম্প্রতিককালে রাজ্যপালের সঙ্গে নবান্নের সংঘাত চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। এরই মাঝে কেন্দ্রীয় সরকারের মিনিষ্ট্রি অব রোড ট্রান্সপোর্ট এণ্ড হাইওয়েজ দপ্তরে চাকরী দেবার নাম করে এখনও পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী প্রায় ৩ হাজার ছেলেমেয়ের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা নেবার অভিযোগ উঠেছে ওই প্রতারক চক্রের। যেখানে রাজ্যপালের ছবি দেখিয়ে চাকরীপ্রার্থীদের আকৃষ্ট করার অভিযোগও উঠেছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, ২০১৮ সাল থেকে এই চক্রটি ফিউচার ইণ্ডিয়া – রোড সেফটি অর্গানাইজেশনের নামে কাজ শুরু করে। এই চক্রের চেয়ারম্যান কলকাতার নিমতা থানার বিরাটি এলাকার দেবকুমার চ্যাটার্জ্জী। চাকরী প্রার্থীদের বিশ্বাস অর্জন করতে বারাসাতের রুবি হাসপাতালে মেডিকেল টেষ্ট এবং বারাসাতের প্রজ্ঞালয় হলে প্রশিক্ষণ দেওয়া হত। মূলত রাস্তায় দুর্ঘটনা ঘটলে কিভাবে দ্রুত উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠাতে হবে, প্রাথমিক চিকিৎসা কি করতে হবে – সেই বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হত।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, গোটা চক্রের কাজকর্ম এবং বাকিদের হদিশ পেতে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। পাশাপাশি এই চক্রের কিং পিন সহ বাকিদের খোঁজে রাজ্যের বিভিন্ন থানায় যোগাযোগ করা হয়েছে। এদিকে, প্রতারিত যুবক যুবতীরা দাবী করেছেন ২০১৮ সাল থেকেই এই অর্গানাইজেশন কাজ শুরু করে। তাদের একটি ওয়েবসাইটও রয়েছে। যেখানে দেশের প্রধানমন্ত্রী সহ রাজ্যপালের ছবিও ব্যবহার করা হয়েছে। প্রার্থীদের কাছ থেকে ৬০ হাজার থেকে সাড়ে চার লক্ষ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরী দেবার নাম করে। বলা হয়েছে সেনা জওয়ানদের সমতুল বেতন পাবেন তাঁরা। প্রতারকরা গ্রেপ্তার হওয়ায় এখন রীতিমত কপালে হাত বেকারদের। তাঁরা দ্রুত টাকা ফেরতের আবেদনও জানিয়েছেন পুলিশের কাছে।