ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: তৃতীয় বারের জন্য ক্ষমতায় এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাত্রছাত্রীদের উচ্চ শিক্ষার জন্য যে স্টুডেণ্ট ক্রেডিট কার্ড বা এডুকেশন লোন চালু করেছেন, পূর্ব বর্ধমান জেলায় এখনও পর্যন্ত মাত্র ৩০০ জন ছাত্রছাত্রী সেই লোনের জন্য আবেদন করেছেন। আর রাজ্যের নিরিখে এই জেলায় এডুকেশন লোনের চাহিদা অপেক্ষাকৃত কম থাকায় এবার বিশেষভাবে নজর দিতে চলেছে জেলা প্রশাসন। বৃহস্পতিবার দুদিন ধরে ডিষ্ট্রিক্ট রিভিউ মিটিং শেষে একথা জানিয়েছেন পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক প্রিয়াংকা সিংলা।
জেলাশাসক এদিন জানিয়েছেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সংশ্লিষ্ট স্কুলের প্রধানদের কাছে আটকে রয়েছে ছাত্র ছাত্রীদের আবেদন। গোটা বিষয়টি নিয়ে তাঁরা স্কুল কর্তৃপক্ষদের সঙ্গে আলোচনা করছেন। একইসঙ্গে ছাত্রছাত্রীদের উদ্বুদ্ধ করতে এবং তাদের কাছে বিষয়টি জানাতে প্রতিটি ব্লক, গ্রাম পঞ্চায়েত এবং ব্যাঙ্ক গুলিকেও এরসঙ্গে যুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, খুব শীঘ্রই সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে এই এডুকেশন লোনের কাজে গতি আনতে আলোচনা করা হবে। তিনি জানিয়েছেন, এই দুদিনের বৈঠকে জেলায় চালু থাকা প্রায় ২৫টি প্রকল্প নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। দুদিনের এই বৈঠকে জেলায় করোনা পরিস্থিতিতে ভ্যাকসিন দেবার বিষয়টিও আলোচনা হয়।
উল্লেখ্য ভোটের আগে থেকে জেলার প্রতি মাসের প্রশাসনিক রিভিউ মিটিং বন্ধ ছিল। বুধ ও বৃহস্পতিবার দুদিন ধরে ফের এই রিভিউ মিটিং করা হল দীর্ঘদিন পরে। এদিন জেলা পরিষদের সভাধিপতি শম্পা ধাড়া জানিয়েছেন, এখন থেকে প্রতি মাসে ফের চালু হচ্ছে এই রিভিউ মিটিং এবং জেলা উন্নয়ন সংক্রান্ত বৈঠক। এদিন জেলাশাসক জানিয়েছেন, জেলায় মোট ১০ লক্ষ ৭৪ হাজার ৩৩৪জনকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৭ লক্ষ ২১ হাজার ১১৪জনকে দ্বিতীয় ডোজ এবং ৩ লক্ষ ৫৩ হাজার ২২০জনকে প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, পূর্ব বর্ধমান জেলায় বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ৫০ লক্ষের কাছাকাছি। ফলে জেলায় ভ্যাকসিন প্রদান কর্মসূচির সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে রীতিমত প্রশ্ন উঠেছে। একইসঙ্গে জেলায় প্রথম ডোজ কার্যত বন্ধ থাকায় ভ্যাকসিন নিয়ে হাহাকারও শুরু হয়েছে। এব্যাপারে জেলাশাসক জানিয়েছেন, তাঁদের প্রথম লক্ষ্য দ্বিতীয় ডোজ পূরণ করা এবং বিশেষ চিহ্নিত শ্রেণীর মানুষদের ভ্যাকসিন পূরণ করা। এছাড়াও এদিন জেলাশাসক জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে পথের সাথী বন্ধ ছিল। সেগুলিকে ফের চালু করার জন্য স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়েছে।
এদিন জেলা পরিষদের সভাধিপতি শম্পা ধাড়া জানিয়েছেন, এই বৈঠকে জেলার রাস্তাঘাটগুলি নিয়ে একপ্রস্থ আলোচনা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, মোট ১১৯ কিমি রাস্তার মধ্যে ৭৯ কিমি রাস্তার কাজ শেষ হয়ে গেছে। নতুন করে আরও ৪৩টি রাস্তার জন্য রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন পাঠানো হয়েছে। আগামী সপ্তাহে জেলায় আসতে পারেন পূর্তমন্ত্রী মলয় ঘটক। তাঁর উপস্থিতিতেই জেলা প্রশাসনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সভাধিপতি জানিয়েছেন, এই দুদিনের বৈঠকে সমস্ত প্রকল্পগুলিকে নিয়েই আলোচনা হয়েছে।
তিনি জানিয়েছেন, এদিন মিটিংয়ে কালনা শান্তিপুর গঙ্গার ওপর ব্রীজের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে ফের জেলা প্রশাসন এলাকার চাষীদের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন। উল্লেখ্য, এই ব্রীজের জন্য এখনও পর্যন্ত ১০ একর জায়গা জেলা প্রশাসন কিনতে সক্ষম হয়েছেন। মোট ৪৮ একর জমির প্রয়োজন ব্রীজের এপ্রোচ রোডের জন্য। বাকি জমির মধ্যে জেলা প্রশাসন এখনও প্রায় ২২ একর জমি কিনতে চলেছেন।
এছাড়াও এদিনের বৈঠকে দুয়ারে সরকার প্রকল্প পরবর্তী অবস্থা নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে সভাধিপতি জানিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, বার্ধক্য ভাতা এবং পেনশন প্রকল্পে মোট ১ লক্ষ ২০ হাজার আবেদনের মধ্যে ৬০ হাজার আবেদন নিষ্পত্তি করা গেছে। অন্যদিকে, জেলায় নতুন করে ৬২টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের জন্য আবেদন পাঠানো হয়েছে। ৪১টি কেন্দ্রের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে এবং ৫৩টি কেন্দ্রের জন্য টেণ্ডার ডাকা হচ্ছে। কৃষকবন্ধু প্রকল্পে জেলায় মোট ২ লক্ষ ২৯ হাজার আবেদন জমা পড়েছে। তার মধ্যে ৬৪৫টি আবেদনের ভিত্তিতে ১২কোটি ৯০ হাজার টাকা দেওয়াও হয়েছে। জেলায় রয়েছেন প্রায় সাড়ে চার লক্ষ নথীভুক্ত কৃষক।