ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: আসন্ন বোরো ধান কাটার ক্ষেত্রে চাষীদের দুশ্চিন্তা দূর করার আশ্বাস দিয়ে গেলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার। সোমবার তিনি রায়নায় নিজের বাড়িতে আসেন। সেখানেই তিনি জানিয়ে যান, এখনই বোরো চাষীদের ভেঙে পড়ার মত কোনো কারণ নেই। প্রদীপবাবু জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বোরো চাষীদের নিয়ে তাঁর চিন্তা এবং সেব্যাপারে কি কি করণীয় সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞ কমিটি গড়ে দিয়েছেন। তাঁরাও গোটা বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করছেন।
প্রদীপবাবু জানিয়েছেন, এটা ঠিকই চলতি লকডাউনের জেরে বাইরে থেকে ধান কাটার মেশিন বা হার্ভাষ্টার মেশিন এবং শ্রমিক আসার ক্ষেত্রে সমস্যা রয়েছে। কিন্তু নিজের জেলার মধ্যেই যে ব্যবস্থা ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকার গড়ে তুলেছেন তা দিয়েই সমস্যা মেটানোর চেষ্টা চলছে। প্রদীপবাবু জানিয়েছেন, ২০১৩ সাল থেকেই মুখ্যমন্ত্রী কৃষিতে স্বয়ম্ভরতা আনতে প্রতিটি জেলায় জেলায় গ্রামীণ ভাড়া কেন্দ্র তৈরী করেছেন। কোথাও কোথাও ব্যক্তিগত উদ্যোগে আবার কোথাও সমবায়ের মাধ্যমে কৃষি সহায়ক যন্ত্রপাতি ভাড়া দেওয়া হচ্ছে। তিনি জানিয়েছেন, বর্তমানে গোটা রাজ্যে প্রায় ৩০০০ হার্ভাষ্টার মেশিন রয়েছে। রয়েছে গোটা রাজ্যে ১৩৮০টি এই ধরণের ভাড়া কেন্দ্র। স্বা্ভাবিকভাবেই লকডাউনের এই সময়কালে যাতে সেই ভাড়াকেন্দ্রগুলিকে আরও সক্রিয় করা যায় তা নিয়েও চিন্তাভাবনা চলছে।
প্রদীপবাবু জানিয়েছেন, এবারে রাজ্যের ৬টি জেলায় শিলাবৃষ্টি এবং ঝ়ড়ের দাপটে বোরো ধানের ফুল ঝরে গিয়ে সাদা শিষের প্রাধান্য সৃষ্টি হয়েছে – চলতি কথায় যাকে আগড়া বলা হয়। এছাড়াও আরও কয়েকটি জেলায় বৃষ্টির ফলে বোরো ধানের উৎপাদন ব্যহত হতে পারে কিছুটা। কিন্তু তা সত্ত্বেও এবারে বোরোধানের সামগ্রিক ফলন যথেষ্ট ভাল হয়েছে। প্রদীপবাবু জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই রাজ্যের মুখ্যসচীব যে সমস্ত গোষ্ঠীগুলি ভাড়াকেন্দ্রগুলি পরিচালনা করেন তাঁদের নিয়ে আজ মঙ্গলবার আলোচনায় বসবেন। সেখানেই কিভাবে বোরো ধান কাটার ক্ষেত্রে উদ্ভূত সমস্যা মেটানো যাবে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে।
পাশাপাশি শ্রমিক সমস্যা মেটাতে কিভাবে অন্য জেলার শ্রমিক বিশেষত যে সমস্ত জেলায় বোরো চাষ কম হয় সেখান থেকে শ্রমিকদের নিয়ে আসা হবে সে বিষয় নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হবার সম্ভাবনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে করোনা উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে কিভাবে তা করা যায় তাও প্রাধান্য দেওয়া হবে। প্রদীপবাবু জানিয়েছেন, গত বছর অক্টোবর মাসে বৃষ্টিজনিত কারণে বোরো ধান রোপণে যেমন দেরী হয়, তেমনি নভেম্বর মাসে রাজ্যের ৬টি জেলায় প্রবল ঝড় বৃষ্টির ফলে সেখানেও বোরো ধান রোপণে দেরী হয়। এরই মাঝে গত সপ্তাহে কোনো কোনো জায়গায় শিলাবৃষ্টি এবং ঝড়ের ফলে বোরো ধানে আসা ফুল ঝরে গিয়ে ধানের শীষের ক্ষতি হয়েছে।
তিনি জানিয়েছেন, এবছর বর্ধমান সহ দুই মেদিনীপুর এবং বাঁকুড়া জেলায় বোরো চাষ ভাল হয়েছে। যাঁরা আগে ধান রোপণ করতে পেরেছিলেন তাঁদের ফলন আশাতীত হবার সম্ভাবনা। অন্যদিকে, প্রদীপবাবু জানিয়েছেন, একদিকে যেমন লকডাউনের জেরে চাষীদের মধ্যে ধান কাটা নিয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছে তেমনি ধান কাটার পর উৎপাদিত ধান সরকার যাতে কিনতে পারে সে ব্যাপারেও মুখ্যমন্ত্রী প্রয়োজনীয় চিন্তাভাবনা করছেন। সেক্ষেত্রে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে চাষী যাতে ধানের সঠিক মূল্য পান সে ব্যাপারেও নজর দেবার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত, প্রদীপবাবু জানিয়েছেন, লকডাউনের জেরে যেহেতু পরিবহণ ব্যবস্থাও বন্ধ রয়েছে তাই চাষীর ধান বিক্রি করতে পরিবহণ নিয়ে কোনো সমস্যা যাতে না হয় সে ব্যাপারেও আলাদা করে চিন্তাভাবনা চলছে।