ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: রাত পোহালেই জামাইষষ্ঠী। আর এরই মধ্যে বুধবার সন্ধ্যা থেকে শুরু হয়েছে নতুন করে ঝড় বৃষ্টি। তবে জামাইষষ্ঠীর বাজারে অন্যান্যবার এই সময় আগুন ছুটেলেও এবার
পরিস্থিতি ভিন্ন। করোনা আর আমফুনের দাপটের পরও বিশেষ করে কাঁচা শাকসব্জীর তেমন উল্লেখযোগ্য হারে দাম বৃদ্ধি হয়নি। ব্যতিক্রম খাসির মাংস এবং ইলিশ, ভেটকি, পাবদা বা গলদা চিংড়ির মত মাছগুলির ক্ষেত্রে। মুরগীর মাংসের দাম ঈদের আগে কিছুটা বেড়েছিল। তবুও মুরগীর মাংস কেজি প্রতি ২০০ -২৫০ টাকার মধ্যেই ঘোরাফেরা করছে। স্বাভাবিকভাবেই জামাই আদরের কোনো খামতি এবার শাশুড়িরা রাখতে দিতে চাইছেন না। যদিও লকডাউনের বিধিনিষেধ সরিয়ে জামাইরা এবছর এই সুযোগের সদ্ব্যব্যবহার কতটা করতে পারেন সেটাই এখন দেখার।
বর্ধমান শহরের তেঁতুলতলা মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক সামসুল আলম জানিয়েছেন, অন্যান্যবারের তুলনায় এবার জামাইষষ্ঠীর আগে লোকাল মাছের আমদানি যথেষ্টই ভাল। ফলে তুলনামূলক মাছের দাম অনেকটাই কম। তিনি জানিয়েছেন, বিশেষত দেশী রুই, কাতলা, মৃগেল প্রভৃতি মাছের দাম অন্যান্যবারের তুলনায় অনেকটাই কম। তবে করোনা এবং আমফুনের প্রভাবে এখনও বাজারে দেখা মেলেনি ইলিশ, ভেটকি, পাবদা বা গলদা চিংড়ি প্রভৃতি সামুদ্রিক মাছের।
তিনি জানিয়েছেন, বাজারে এখনও ইলিশের দেখা না মেলায় জামাইষষ্ঠীর বাজারে ইলিশের দাম বেশ চড়া থাকবে বলেই তাঁরা মনে করছেন। তিনি জানিয়েছেন, বড় বড় ব্যবসায়ীরা ইলিশ, ভেটকি প্রভৃতি মাছকে আগে থেকেই স্টোর করে রাখেন। কিন্তু তারপরেও বাজারে এই সব মাছের দেখা পাওয়া যায়। কিন্তু এবারে তা না পাওয়ায় যাঁরা মাছ স্টক করে রাখতে পেরেছেন তাঁরা কিছুটা হলেও দাঁও মারবেন জামাইষষ্ঠীর বাজারে।
বর্ধমান শহরের বিশিষ্ট মুরগী ব্যবসায়ী অরিন্দম কোনার জানিয়েছেন, মুরগীর আমদানি কমে যাওয়াতেই এই দাম বেড়েছে। তবে এটা সাময়িক। তিনি জানিয়েছেন, করোনার ভয়ে অনেকেই মুরগী খাওয়া ছেড়ে দেওয়ায় মুরগী মাংসের দাম হুহু করে কমে গেছিল। ২৫ টাকায় গোটা মুরগিও বিক্রি হয়েছে সেই সময়। এমনকি অনেক ছোট ছোট পোলট্রি ফার্মের মালিকরাও ভয়ে আতংকে পোলট্রি ফাঁকা করে কম দামে মুরগী বিক্রি করে দিয়েছিলেন। কিন্তু এখন বাইরের রাজ্য থেকে মুরগীর আমদানি অনেকটাই কম হওয়ায় ফের বাজারে দাম বেড়েছে। তবে আলাদা করে জামাই ষষ্ঠীর জন্য কোনো দাম বাড়েনি। বরং ঈদের আগে থেকেই এই দাম চড়েছে।
অপরদিকে, করোনা আবহের মাঝেই পূর্ব বর্ধমান জেলা জুড়ে প্রশাসনের টাস্ক ফোর্স লাগাতার নজরদারী চালিয়ে যাওয়ায় জামাইষষ্ঠীর বাজারে কাঁচা সব্জীর দাম যথেষ্টই নাগালের মধ্যে রয়েছে বলে জানিয়েছেন পূর্ব বর্ধমান চেম্বার অফ ট্রেডার্স এর সাধারণ সম্পাদক চন্দ্রবিজয় যাদব। তিনি জানিয়েছেন, গত কয়েকদিনে বর্ধমান শহরের বড় বাজারগুলোতে আমফুনের প্রভাবে কাঁচা সব্জীর দাম সামান্য কিছুটা বাড়লেও তা আয়ত্বের সীমা ছাড়ায়নি। আলু, পিঁয়াজ, রসুন, আদা প্রভৃতির দাম গত এক সপ্তাহ ধরে একই রয়েছে।
আমফানের প্রভাব পড়ায় টমেটোর দাম কেজি প্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়ে ২০-২৫ টাকা হয়েছে। পটলের দামও ৫-১০টাকা বেড়ে ২০-৩০-এর মধ্যেই রয়েছে। রীতিমত নজরকাড়া ভাবেই দাম প্রায় দ্বিগুণের কাছাকাছি হয়েছে কাঁচা লংকা, বেগুন, ঝিঙে প্রভৃতির সঙ্গে বিভিন্ন শাকের দামও কিছুটা বেড়েছে। জেলা টাস্ক ফোর্স সুত্রে জানা গেছে, যে সমস্ত সব্জীর দাম বেড়েছে তার মূল কারণ আমফানের প্রভাব। সব্জীতে জল বসায় তা পচতেও শুরু করছে। ফলে ব্যবসায়ীরা যা অনেক সময়ই স্টোর করে রাখতেন তা রাখতে পারছেন না। সরাসরি মাঠ থেকে সবজী নিয়ে এসে তা বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন চাষী থেকে ব্যবসায়ী সকলেই।
কিন্তু এতকিছুর পরেও করোনার প্রভাব কাটিয়ে শ্বশুরবাড়িতে কি পা রাখতে পারবেন জামাই রাজারা? যদিও অনেকেই জানিয়েছেন, এবারে জামাইষষ্ঠী হবে ভার্চুয়াল। পাওনাগণ্ডা বকেয়াই থাকবে – লকডাউন মিটলে তখন তার সদ্ব্যব্যবহার করা হবে।