রায়নার এক সময়ের জমিদার মিত্র পরিবারের দুর্গা মণ্ডপের পাশেই নরবলি দেওয়া হতো – কারণ কি জানেন?

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: পুজোর আর মাত্র হাতে গোণা ৪২দিন বাকি। করোনা আবহের জেরে গতবছর থেকেই রীতিমত গোটা রাজ্যবাসীর মুখ ভার। কিন্তু তা সত্ত্বেও কিছুটা তৃতীয় ঢেউয়ের ঝুঁকি নিয়েই এবারও শুরু হয়ে গেল বিভিন্ন ক্লাবের খুঁটিপুজো। সোমবার জন্মাষ্টমীর দিনেই বর্ধমান শহরের পদ্মশ্রী সংঘ, পারবীরহাটা নিবেদিতা সংঘ, আনন্দপল্লী দুর্গাপুজো কমিটি, জুবিলী সংঘ, খালুইবিল মাঠ দুর্গাপুজো কমিটির পক্ষ থেকে খুঁটি পুজো হয়ে গেল। রবিবার মেমারীর পাল্লারোড পল্লী মঙ্গল সমিতিও তাদের খুঁটি পুজো করেছেন।

এদিকে, একদিকে যখন বারোয়ারী দুর্গাপুজো নিয়ে আস্তে আস্তে প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে, তখন পারিবারিক দুর্গাপুজো নিয়ে চিন্তায় এখন বিভিন্ন পরিবার। পূর্ব বর্ধমান জেলার রায়না থানার রায়না বাজার এলাকার বাসিন্দা একদা বর্ধিষ্ণু পরিবারের বর্তমান বংশধর তাপস মিত্র জানিয়েছেন, প্রতিবারের মত এবছরও তিনি পারিবারিক প্রথা মেনেই পুজো করতে চলেছেন। দরিদ্র নারায়ণ সেবারও আয়োজন হবে। যদিও ঠিক কবে এই মিত্র পরিবারে দুর্গাপুজো প্রচলন হয়েছিল তার কোনো সঠিক সময় তাপসবাবু জানাতে পারেননি। তবে তিনি জানিয়েছেন, তাঁদের পূর্ব পূরুষ রাম মিত্রই প্রায় ৩০০বছর আগে সম্ভবত এই মা চণ্ডী নামে একচালার এই প্রতিমার পুজো প্রচলন করেন।

রায়না বাজার এলাকার বাসিন্দা এই মিত্র পরিবারের পুজো নিয়ে একটা মিথ চালু রয়েছে। তাপসবাবু জানিয়েছেন, স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময়ে তাঁদের এই বাড়িই (বর্তমানে ধ্বংসস্তূপ) ছিল স্বাধীনতা আন্দোলনের একটা আঁতুর ঘর। দুর্গামণ্ডপের পাশেই ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামীদের গোপন ডেরা। তাপসবাবু জানিয়েছেন, তিনি তাঁর ঠার্কুদার কাছে গল্প শুনেছেন, তাঁদের এই বাড়িতেই গোপনে আসতেন চিত্তরঞ্জন দাস, ক্ষুদিরাম বসু, রাসবিহারী বসুদের মত স্বাধীনতা সংগ্রামীরা। এমনকি কোনো একটা ঘটনায় তাঁদের বাড়িতে এসেছিলেন লর্ড কার্জনও।
তাপসবাবু জানিয়েছেন, তাঁদের ওই দুর্গামণ্ডপের (বর্তমানে ধ্বংসস্তূ) পাশেই ছিল বিশাল একটা হাঁড়িকাঠ। স্বাধীনতা আন্দোলনের পূর্বে যে সমস্ত ব্যক্তি ব্রিটিশের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করত তাঁদের ধরে আনা হত এই দুর্গামণ্ডপের পাশের ঘরে। পূর্ণ অমাবস্যায় তাঁদের ওই বিশাল হাঁড়িকাঠে বলি দেওয়া হত। সেদিনের ইতিহাসের সাক্ষী সেই হাঁড়িকাঠকে তুলে এনে এখন রাখা হয়েছে মা চণ্ডীর নতুন মন্দিরের মধ্যে। তাপসবাবু জানিয়েছেন, তিনি গল্প শুনেছেন, তাঁদের পূর্ব পুরুষ রাম মিত্রের আমলে আদালতে মামলা হয়। সেই মামলায় অবিবাহিত মেয়ের রূপ ধরে মা চণ্ডীই নাকি সাক্ষী দিয়েছিলেন।

 তিনি জানিয়েছেন, এখনও নিশুতি রাতে দুটি শিয়াল এবং একটি বিশালাকার গোখরো সাপ তাঁদের এই বাড়ির চারপাশে ঘুরে বেড়ায়। তবে তারা কোনো ক্ষতি করে না। তাপসবাবু জানিয়েছেন, মামলা মোকদ্দমায় একে একে তাঁদের প্রচুর সম্পত্তি হাতছাড়া হয়ে গেছে। জমিদারীত্বের সেই জৌলুস অনেকদিনই নষ্ট হয়ে গেছে। তবুও পারিবারিক ঐতিহ্য মেনে এখনও তিনি টিকিয়ে রেখেছেন দুর্গাপুজোকে। আগে মোষ, ছাগ বলি হত। এখন ফল বলি হয়। নবমীর দিন এলাকার মানুষদের দরিদ্র নারায়ণ সেবা করা হয় ষোলোআনা দান সহ। মা চণ্ডীর মন্দিরে রয়েছেন পারিবারিক কুলদেবতা নারায়ণ এবং শিব।

Recent Posts