ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: রেশনে মাল কম দেওয়া কোনোভাবেই বরদাস্ত নয়। প্রয়োজনে জেলও হতে পারে রেশন ডিলারের। বৃহস্পতিবার বর্ধমান জেলা প্রশাসন, এম আর ডিলার ও ডিষ্ট্রিবিউটর এবং রাইস মিল মালিকদের নিয়ে ম্যারাথন বৈঠক শেষে একথা জানিয়ে গেলেন রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। উল্লেখ্য, গত কিছুদিন ধরেই রেশনের মাল কম দেওয়া নিয়ে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে তীব্র উত্তেজনা, মারধর করার ঘটনা ঘটেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তৃণমূল নেতাদের দায়ী করে বিক্ষোভও দেখানো হয়েছে। মারধর করা হয়েছে তৃণমূল নেতাদেরও। বিজেপি ইতিমধ্যেই রেশনের মাল বণ্টন নিয়ে তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সরব হয়েছেন।
রেশনের মাল বণ্টন ব্যবস্থা নিয়ে বিরোধী এবং গ্রাহকদের অভিযোগের পাশাপাশি বুধবারই জেলাশাসকের কাছে রীতিমত রেশন নিয়ে অভিযোগ জানিয়ে যান রাজ্যের প্রাণী সম্পদ বিকাশ দপ্তরের মন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেসের পূর্ব বর্ধমান জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথ। স্বাভাবিকভাবেই গোটা বিষয়টি নিয়ে নড়েচড়ে বসে খাদ্য দপ্তর। এদিকে,বৃহস্পতিবার বৈঠক শেষে খাদ্যমন্ত্রী ফের জানিয়ে দেন যাঁদের রেশন কার্ড আছে তাঁরা মাল পাবেই। একইসঙ্গে রেশন নিয়ে ওঠা অভিযোগের ভিত্তিতে তিনি সাফ জানিয়ে দেন ওজনের কারচুপি বা রেশন দ্রব্যের গুণগত মান নিয়ে কোনো আপস চলবে না। রেশন ডিলাররা অসাধু কাজ করলেই তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে তাঁদের জেলও হবে।
তিনি জানিয়েছেন, রেশনের দুর্নীতি বা অভিযোগ নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজ্যের ৩০০ রেশন ডিলারের মধ্যে ২৮৫ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আপাতত তাঁদের চারধরণের শাস্তি দেওয়া হয়েছে। জরিমানা, বরখাস্ত ছাড়াও তাঁদের রেশন ডিলারসিপ খারিজ করে দেওয়া হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, বিজেপি প্রধানমন্ত্রী চাল, ডাল পাঠিয়েছে বলে চিৎকার করছে। অথচ ২৫ তারিখ থেকে লকডাউন হবার পর প্রধানমন্ত্রীর এই চাল দেবার অর্ডার রাজ্য খাদ্য ভবনে এসে পৌঁছেছে ১৬ এপ্রিল। জ্যোতিপ্রিয়বাবু এদিন রীতিমত কেন্দ্র সরকার তথা বিজেপি নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছিলেন প্রত্যেক পরিবারকে মুসুর ডাল দেওয়া হবে।
অথচ এখনও পর্যন্ত নাফেডের মাধ্যমে মাত্র ১৮৪৭ মেট্রিক টন ডাল এসেছে। যেখানে রাজ্যের প্রয়োজন প্রতি মাসে প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার মেট্রিক টন। ৩ মাস ধরে দিলে তা দাঁড়াবে প্রায় ৪৬ থেকে ৪৭ হাজার মেট্রিক টনে। তিনি বলেন, গোটা রাজ্যের মানুষ যখন করোনাকে প্রতিহত করার জন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন সেই সময় বাজার গরম করার জন্য বিজেপি কোথাও কোনো প্লাটফর্ম না পেয়ে নিজেদের বাড়ির দরজার সামনে বসে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে। খাদ্যমন্ত্রী এদিন জানিয়েছেন, আজ শুক্রবার থেকে রেশনের মাধ্যমে ৫ কেজি করে বিনামূল্যে চাল দেবার প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। একইসঙ্গে শুরু হচ্ছে সরকারী সহায়ক মূল্যে ধান কেনার কাজও।
শুক্রবার থেকেই গোটা রাজ্যের সমস্ত জেলা প্রশাসনের আধিকারিকরা সকাল ৮ টা থেকে রাত্রি ৮টা পর্যন্ত রাস্তায় থাকবেন। কড়া নজরদারী চলবে সর্বত্র। কোথাও কোনো ত্রুটি হলেও কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদিকে, এদিন রেশনের পাশাপাশি এদিন পূর্ব বর্ধমান জেলার ২৫টি রাইস মিলকে নিয়েও বৈঠক করেন খাদ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, এই রাইসমিলগুলি সরকারকে প্রত্যাশিত চাল দিচ্ছিলেন না। তাই তাঁদের নিয়ে বসা হয়েছে। তাঁদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে আগামী ১৫ মের মধ্যে সরকারের পাওয়া ১লক্ষ ৪০ হাজার মেট্রিক টন চাল তাঁরা সরকারকে দিতেই হবে। এরই পাশাপাশি খাদ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, শুক্রবার থেকে সরকারী সহায়ক মূল্যে আউশ, আমনের যে ধান চাষীরা লকডাউনের জেরে বিক্রি করতে পারেনি সেই ধান ছাড়াও বোরো ধান কেনা শুরু হচ্ছে। গোটা রাজ্যে এবছর ২০ লক্ষ মেট্রিক টন ধান কেনা হবে।
মন্ত্রী জানান, করোনা উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য খাদ্য দপ্তর একটি পোর্টাল চালু করেছে। সংশ্লিষ্ট চাষীকে সেই পোর্টালে গিয়ে জানাতে হবে তিনি কত বস্তা ধান বিক্রি করতে চান। আর তা্ জানালেই খাদ্য দপ্তরের লোক তাঁর বাড়ি থেকেই ধান সংগ্রহ করবেন। করোনার জেরে এবারে আর ধান দাও চেক নাও -এর পদ্ধতি থাকছে না।পরিবর্তে ধানের দাম নেট ব্যাঙ্কিংয়ের মাধ্যমে চাষীকে দেওয়া হবে বলে এদিন জানিয়ে যান খাদ্যমন্ত্রী। এদিন তাঁর সঙ্গে এই বৈঠকে হাজির ছিলেন মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ, মুখ্যমন্ত্রীর কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার সহ জেলাপরিষদের সভাধিপতি, জেলা শাসক ,জেলা পুলিশ সুপার এবং জেলা প্রশাসনের সমস্ত আধিকারিকরাও ।