ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: পূর্ব বর্ধমান জেলা জুড়ে করোনা উদ্ভূত পরিস্থিতিতে লকডাউনের জেরে অস্বাভাবিক হারে অন্যান্য অপরাধের ঘটনা কমলেও মহিলা সংক্রান্ত অভিযোগ কিন্তু বেডেছে। সেক্ষেত্রে অনেকেই মনে করছেন লকডাউনের কারণে পুরুষরা গৃহবন্দি থাকায় এই মহিলা নির্যাতনের ঘটনা বেড়েছে। যদিও গত তিনমাসের অপরাধ সংক্রান্ত জেলাভিত্তিক তথ্য পাওয়া গেলেও, এপ্রিল মাসের সমস্ত থানা ভিত্তিক সম্পূর্ণ রিপোর্ট এখনো তৈরি না হওয়ায় তা জানা যায়নি।
পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত জানুয়ারী মাসেও যেখানে জেলায় চুরির ঘটনা ছিল ৩৭টি। ফেব্রুয়ারী মাসে তা কমে দাঁড়ায় ২৭টিতে এবং মার্চ মাসে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২৩টিতে। এক্ষেত্রেও মনে করা হচ্ছে লকডাউনের জেরে গৃহস্থ সর্বদাই বাড়িতে থাকায় চোরেরা চুরির সুযোগ পায়নি। আর তাই সদ্য শেষ হওয়া লকডাউন মাস এপ্রিলে এই সংখ্যা আরও কমতে পারে।
আবার, এই তিন মাসে রীতিমত কমেছে খুনের ঘটনাও। জেলায় জানুয়ারী মাসে যেখানে খুনের ঘটনা ঘটেছিল ৬টি, ফেব্রুয়ারী মাসে তা হয় ৪টি এবং মার্চ মাসে তা কমে দাঁড়ায় ৩টিতে। জেলা পুলিশের বিশেষ সূত্রে জানা গেছে, এপ্রিল মাসে কার্যত খুনের ঘটনাও কমে দুটি তে এসেছে। একটি খুনের ঘটনা ঘটেছে জেলার মঙ্গলকোট থানা এলাকায়, অপরটি পূর্বস্থলীতে।
জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, জানুয়ারী মাসে জেলায় মোট অপরাধজনিত ঘটনা ঘটেছিল ৭৩০টি। ফেব্রুয়ারী মাসে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৭৫৮টিতে এবং মার্চ মাসে তা কমে দাঁড়ায় ৬৭৮টিতে। অপরাধজনিত বা দুর্ঘটনাজনিত ঘটনাও এই সময়কালে রীতিমত কমেছে। জেলা পুলিশ সূত্রে অন্যান্য খাতে জানুয়ারী মাসে মোট ঘটনা ছিল ৫২৪টি। ফেব্রুয়ারী মাসে তা কিছুটা বেড়ে ৫৫১টি হলেও মার্চ মাসে কমে দাঁড়ায় ৪৭০টিতে। জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এই সময়কালে একদিকে যেমন চুরির ঘটনা কমেছে তেমনি ডাকাতির কোনো ঘটনাই ঘটেনি জানুয়ারী থেকে মার্চ মাসের মধ্যে।
এই তিন মাসের মধ্যে জানুয়ারীতে ১টি এবং ফেব্রুয়ারী ও মার্চ মাসে ২টি করে রবারির ঘটনা ঘটেছে। একইভাবে বাগলারির কোনো ঘটনাই ঘটেনি এই তিন মাসে। জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, লকডাউনের জেরে সবথেকে কমেছে পথ দুর্ঘটনার সংখ্যা। যেহেতু এই সময়কালে লকডাউনের জেরে গাড়ি চলাচল বন্ধ তাই অনেকটাই কমেছে পথ দুর্ঘটনার ঘটনা। তবে অন্যান্য অপরাধজনিত ঘটনা কমলেও এই সময়কালে মহিলা নির্যাতনের ঘটনা কিন্তু কার্যতই বেড়েছে।
জানুয়ারী মাসে যেখানে জেলায় মোট মহিলা নির্যাতন সংক্রান্ত ঘটনা ঘটেছিল ১৫২টি। ফেব্রুয়ারী মাসে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৭২টিতে এবং মার্চ মাসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭৭টিতে। সব থেকে বেশি মহিলা নির্যাতন সংক্রান্ত অভিযোগ জমা পড়েছে বর্ধমান মহিলা থানায়। এই থানায় জানুয়ারী মাসে অভিযোগ জমা পড়ে ২২টি, ফেব্রুয়ারী মাসে ২০টি এবং মার্চ মাসে ২৬টি। জেলার অন্যান্য থানাগুলির মধ্যে জানুয়ারী মাসে গলসী থানায় ১৩টি, কালনা থানায় ১২টি, বর্ধমান থানায় ১১টি এবং মন্তেশ্বর থানায় ১১টি অভিযোগ জমা পড়ে মহিলা নির্যাতন সংক্রান্ত বিষয়ে।
ফেব্রুয়ারী মাসে গলসী থানায় ১৫টি, বর্ধমান থানায় ১৭টি, কালনা থানায় ২০টি,মেমারী থানায় ১১টি এবং নাদনঘাট ও পূর্বস্থলী থানায় ১১টি করে অভিযোগ জমা পড়ে। মার্চ মাসে বর্ধমান ও কালনা থানায় এই সংক্রান্ত অভিযোগ জমা পড়ে ১৮টি করে, গলসী থানায় ১৫টি এবং কেতুগ্রাম ও নাদনঘাট থানায় ১২টি করে অভিযোগ জমা পড়ে। জেলার মোট ২০টি থানার বাকিগুলির ক্ষেত্রে এই ধরণের মহিলা সংক্রান্ত অভিযোগ জমা পড়লেও তা অনেকটাই কম বলে জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
একইসঙ্গে জেলার সাইবার ক্রাইম থানায় এই সময়কালের মধ্যে জানুয়ারীতে ২টি, ফেব্রুয়ারীতে ২টি এবং মার্চ মাসে ১টি অভিযোগ জমা পড়ে। যদিও এপ্রিল মাসে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুয়ো তথ্য ছড়ানোর একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে সাইবার ক্রাইম দপ্তরে। পূর্ব বর্ধমান জেলা সমাজকল্যাণ আধিকারিক প্রশান্ত রায় জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত জেলার মহিলা নির্যাতন সংক্রান্ত ঘটনার বিষয় সম্পর্কে পুরোপুরি তাঁদের কাছে রিপোর্ট এসে পৌঁছায়নি।
তিনি জানিয়েছেন, লকডাউনের জেরে হয়ত অনেকেই অভিযোগ জানাতে আসতে পারছেন না। এই লকডাউন পর্যায়ে জেলার বিভিন্ন ব্লকের মোট ১৬টি নাবালিকা বিয়ের ঘটনা বন্ধ করা গেছে। এর মধ্যে সরাসরি চাইল্ড লাইন খবর পেয়ে বন্ধ করেছে ২টি ঘটনা। সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ বন্ধ করেছে১০টি ঘটনা এবং স্থানীয় বিডিও এবং স্থানীয় মানুষ বন্ধ করেছে ৪টি ঘটনা।