শিশুদের কোভিড পরবর্তী জটিলতা নিয়ে দুশ্চিন্তায় চিকিৎসকরা

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: শিশুদের কোভিড আক্রান্তের পর এবার কোভিড পরবর্তী জটিলতা মাল্টিপল ইনফ্লেমেটরী সিনড্রোম অফ চিলড্রেন বা এমআইএ-সি নিয়ে চিন্তার ভাঁজ দেখা দিল বর্ধমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের শিশু বিভাগের চিকিৎসকদের মধ্যে। জানা গেছে, কোভিড আক্রান্তের পর মাল্টিপল ইনফ্লেমেটরী সিনড্রোম অফ চিলড্রেন বা এমআইএ-সিতে শিশুদের ফুসফুস নয় গুরুতর ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে হৃৎপিন্ড। সঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু করতে না পারলে হৃদযন্ত্র বিকল হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে শিশুদের। 

বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত ২মাসে এই সমস্যা নিয়ে প্রায় ৩০ জন শিশু বর্ধমান হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছে। সঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু হওয়ায় এখনও পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে মাত্র ১ জনের। তবে এতে আত্মতুষ্টির কোনো জায়গা নেই বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। কেননা এই সমস্যা নিয়ে আক্রান্ত শিশুর চিকিৎসা করাতে সামান্য দেরী হলেই তা চিকিৎসকদের আয়ত্বে বাইরে চলে যাবার সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, শুধু জ্বর বা সর্দিকাশী নয় তার পাশাপাশি চোখ, মুখ,জিভ লাল হলে, হাত, পা ও গায়ের চামড়া উঠলে এবং ২ দিনের বেশী অতিরিক্ত পরিমানে পায়খানা হলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, করোনা আক্রান্তের পর পরবর্তী জটিলতার সব থেকে বড় সমস্যা হচ্ছে এক্ষেত্রে আরটি-পিসিআর-এ কোভিড ধরা পড়ছে না। সেক্ষেত্রে একমাত্র ভরসা অ্যান্টিজেন টেস্ট বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা। বর্ধমান হাসপাতালের সুপার প্রবীর সেনগুপ্ত জানিয়েছেন, করোনার একেবারে প্রথম পর্যায়েই বর্ধমান হাসপাতালের শিশুবিভাগে করোনা ওয়ার্ড খোলা হয়। পাশাপাশি খোলা হয় শিশুদের জন্য সারি ওয়ার্ডও। দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় করোনা ও সারি ওয়ার্ড পুরোপুরি ভর্তি থাকলে এখন অনেকটাই ফাঁকা।
তবে নতুন করে ভাবাচ্ছে এই এমআইএ-সি। এজন্য ইতিমধ্যেই বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বাড়ানো হয়েছে বেড সংখ্যা, টেকনোলজিস্ট, অক্সিজেন ও ভেন্টিলেটর। সচল রাখা হচ্ছে জরুরী ওষুধ পরিষেবা।তবে সঠিক সময়ে চিকিৎসার ফলে এমআইএ-সিতে আক্রান্ত শিশুদের সুস্থতার হার স্বস্তি দিচ্ছে। বর্ধমান হাসপাতালের কোভিড নোডাল অফিসার তথা শিশু বিভাগের প্রধান কৌস্তভ নায়েক জানিয়েছেন, কোভিডে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা কমলেও পোষ্ট কোভিডে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বাড়ছে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, এই পোষ্ট কোভিডে শিশুদের ফুসফুস নয়, আক্রান্ত হচ্ছে হৃদযন্ত্র। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু না হওয়ায় হৃদযন্ত্র বিকল হয়ে শিশুর মৃত্যু পর্যন্ত ঘটছে। তবে সঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু হলে বেশীরভাগ শিশুই সুস্থ হয়ে উঠছে।
তিনি জানিয়েছেন, বর্ধমান হাসপাতালে কোভিড উপসর্গ থাকলে ওই শিশুকে প্রথমে সারি ওয়ার্ডে রেখে তার করোনা পরীক্ষা করানো হচ্ছে। করোনা পজিটিভ হলে তাকে কোভিড ওয়ার্ডে না হলে তাকে জেনারেল ওয়ার্ডে রাখা হচ্ছে। এমনকি সদ্যজাত শিশুর ক্ষেত্রে এসএনসিইউতে ৫ টি বেড রাখা হয়েছে করোনা আক্রান্তদের জন্য। বর্তমানে শিশুদের করোনা নয় করোনা পরবর্তী কমপ্লিকেশনই বেশী ভাবিয়ে তুলছে। কেননা তা সহজে বোঝা যাচ্ছে না। তা সরাসরি হৃৎপিণ্ডের ক্ষতি করে দিচ্ছে। চিকিৎসায় দেরী হলে শিশুর প্রভূত ক্ষতি সাধন করছে। যদিও এর চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল তবুও বর্ধমান হাসপাতালে এই চিকিৎসা হচ্ছে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এবং এই চিকিৎসার ফলে সুস্থতার হারও স্বস্তি দিচ্ছে হাসপাতালের চিকিৎসকদের।