ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: অসামাজিক কার্যকলাপের আখড়ায় পরিণত হয়েছে বর্ধমান পুরসভার ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের খোসবাগান এলাকার শ্যামসায়র পার্ক। পুরসভা ও প্রশাসনের নজরদারির অভাবেই শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত শিশু ও প্রবীণদের জন্য ২৭বছর আগে তৈরি করা এই পার্ক আজ মদ, গাঁজা, হেরোইনের নিশ্চিন্ত ঠেকে পরিণত হয়েছে বলেই স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ অভিযোগ জানিয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
আজ আর এই পার্কে কোনো শিশু কিংবা প্রবীণদের দেখা পাওয়া যায় না। তবে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই পার্কের ভিতর অবাধেই যাতায়াত করে নেশাখোর একদল যুবক, যুবতী। এদের মধ্যে যেমন স্কুল, কলেজ পড়ুয়ারা রয়েছে, তেমনি তাদের কাছে এই সমস্ত নেশার দ্রব্য পৌঁছে দেওয়ার জন্য অনেক মাদক দ্রব্যের কারবারিরও আনাগোনা রয়েছে বলে অভিযোগ। অভিযোগ পার্কের দু প্রান্তের গেটে তালা ঝুললেও সেই গেট রীতিমত টপকে যুবক, যুবতীরা পার্কের ভিতরে ঢোকে। স্থানীয়দের অনেকেই জানিয়েছেন, প্রায়ই এই সব কপোত কপোতি দের অশালীন অবস্থায় দেখা যায়। যদিও এই সমস্ত অসামাজিক কার্যকলাপ দিনের পর দিন চলতে থাকলেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
যদিও স্থানীয় কাউন্সিলার রত্না রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘পার্কের ভিতরে নোংরামি চলছে সেটা আমি জেনেছি কিছুদিন আগেই। গোটা বিষয়টি নিয়ে বর্ধমান থানার আইসির সঙ্গে কথা হয়েছে আমার। পার্কটিকে আমরা আবারও নতুন করে সাজিয়ে তুলতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছি। গোটা শ্যামসায়র দীঘি কে ঘিরেই সৌন্দর্য্যয়ন করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। পার্কের ভিতরে নজরদারি বাড়াতে সিসি ক্যামেরাও বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে।’ যদিও সংবাদ মাধ্যমের কাছে খবর পেয়ে রবিবার রাতেই পুলিশ পার্কে অভিযান চালিয়ে ৬জন কে আটক করেছে। পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘একদল ছেলে মেয়ে পার্কের ভিতরে অসভ্যতামী করছে। আমরা নজর রাখছি পরিস্থিতির দিকে। এরপরে পার্কের ভিতরে নিয়ম না মেনে ঢুকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
প্রসঙ্গত পার্কের একদিকে রয়েছে হরিসভা হিন্দু বালিকা বিদ্যালয় অন্যদিকে রামকৃষ্ণ স্কুল। এই দুটির স্কুলের কাছেই রয়েছে পুরসভার এই পার্কটি। জানা গেছে, স্কুল খোলা থাক বা বন্ধ এই মাদকাসক্ত দের আনাগোনা বন্ধ থাকেনা এই এলাকায়। স্বাভাবিক ভাবেই এলাকার মানুষের কাছে এমনকি ছাত্র ছাত্রীদের অভিভাবকদের কাছে আতঙ্কের জায়গা হয়ে উঠেছে এই পার্কটি। পার্কের গেট দুদিক থেকেই বন্ধ থাকে। এমনকি যাতে কেউ গেট টপকে ভিতরে ঢুকতে না পারে তারজন্য আলাদা করে লোহার খাঁচা বানিয়ে লাগানো হয়েছে গেটের উপর। কিন্তু এদিনও দেখা গিয়েছে গেট টপকে পার্কের ভিতরে ঢুকে একদল যুবক যুবতী ঘনিষ্ঠভাবে বসে রয়েছে।
উল্লেখ্য ১৯৯৫ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর পার্কটি তৈরী করেছিল তৎকালীন বাম পরিচালিত পুরবোর্ড। এলাকার শিশু ও প্রবীন দের জন্যই এই পার্কটি তৈরী হয়েছিল। পরে ১৯৯৭ সালে পার্কটিকে নতুন করে সাজিয়েও তোলা হয়। এই পার্কে একটা সময়ে বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডের অনেক প্রবীন মানুষরা এসে সময় কাটাতেন। শিশুরা এসে খেলা করত। তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ডের পক্ষ থেকেও এই পার্কটিকে সাজিয়ে তোলা হয়। কিন্তু গত দুবছরে করোনা পরিস্থিতির সুযোগে এই পার্কটি অসামাজিক কার্যকলাপের আখড়ায় পরিণত হয় বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। বর্তমানে নজরদারির অভাবে শহরের বিভিন্ন প্রান্তের যুবক যুবতীরা দিনে ও সন্ধ্যার সময় এখানে এসে নানা ধরণের অসামাজিক কাজ চালাচ্ছে। বসছে মদের আসর। কোন নজদারি নেই। নির্জনতার সুযোগ নিয়েই অবাধেই চলছে এই কাজ বলে মত প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসীদের একাংশ।