শীতে বর্ধমানের নতুন আকর্ষণ, এভারেস্ট পার করে পরিযায়ীদের ঠিকানা এখন দামোদর নদের চর

Souris  Dey

Souris Dey

সৌরীশ দে,পূর্ব বর্ধমান: উত্তুরে হাওয়া এখনো বইতে শুরু হয়নি। নিম্নচাপের প্রভাবে বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি হয়ে চলেছে। এদিকে দক্ষিনবঙ্গে শীত পড়তে এখনো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে বলেই আবহাওয়া দপ্তর জানাচ্ছে। আর এরই মধ্যে পরিযায়ীরা তাদের পুরোনো আস্তানা খুঁজে ভিড় করতে শুরু করেছে এই বাংলার বিভিন্ন জলাশয়, নদ, নদী, খালবিলের জলে। পূর্ব বর্ধমান জেলার বড়শুলের দামোদর নদের বিস্তীর্ণ চরে ইতিমধ্যেই দেখা মিলতে শুরু করেছে সাইবেরিয়া, চীন, তিব্বত, লাদাখ, বার্মা, মায়ানমার, আফ্রিকা, রাজস্থান, মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশ এর মতো দেশ বিদেশের পরিযায়ী পাখিদের। 

বিজ্ঞাপন
বর্ধমানের পশুপ্রেমী সংস্থা সোস্যাইটি ফর এনিম্যাল ওয়েলফেয়ার এর সদস্য অর্ণব দাস জানিয়েছেন, বর্ধমানের হাটশিমুল এলাকা থেকে বরশুলের কাছে দামোদরের চর বরাবর গত কয়েকবছর ধরে প্রচুর দেশি বিদেশি পরিযায়ী পাখির দেখা পাওয়া যাচ্ছে। তিনি জানিয়েছেন, কয়েকবছর আগেও এই পাখিরা এখানে আসতো, কিন্তু চোরা শিকারিদের উপদ্রবে ধীরে ধীরে পরিযায়ীদের এই এলাকায় আসা উল্লেখযোগ্য ভাবে কমতে শুরু করে। আর এরপরই সংস্থার উদ্যোগে কয়েকজন নদের ধারে বসবাসকারী মানুষ, মাঝি, জেলেদের সঙ্গে কথা বলে এই চোরা শিকারিদের কিভাবে আটকানো যায় তার উদ্যোগ নেওয়া হয়। আর এই প্রচেষ্টা টানা বছর তিনেক চালানোর পর অবশেষে গত বছর থেকে ফের পরিযায়ীরা তাদের পুরোনো আস্তানায় ফিরতে শুরু করে। 
অর্ণব জানিয়েছেন, তাঁরা লক্ষ্য করেছেন গত বছর প্রচুর পরিযায়ী পাখির আগমন হয়েছিল দামোদরের চরে। তিনি জানিয়েছেন, এটা সম্ভব হয়েছে স্থানীয় মানুষ, মাঝি, জেলেদের সদিচ্ছায়, যৌথ প্রচেষ্টায়। তাঁরাই সেইসব চোরা শিকারিদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে শুরু করেছিলেন। কাউকে পাখিদের বিরক্ত করতে দেখলেই তাদের কে এলাকা থেকে তাড়িয়ে দিতেন তাঁরা। আর এরই ফলস্বরূপ এবছর শীত পড়তে না পড়তেই দামোদর ঘিরে ভিড় বাড়াতে শুরু করেছে পরিযায়ীরা। 
অর্ণব দাস জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই চীন এবং তিব্বত থেকে প্রচুর রুডি সেল ডাক(Ruddy Shell Duck) ভিড় জমিয়েছে দামোদরে। সুদূর সাইবেরিয়া থেকে এসে পৌঁছেছে মাছ মুরাল(Ospray), লাল গলা ফিদ্দা(ruddy throte), টাইগা ফ্লাইক্যাচার(Taiga Flycatcher) এর মতো পরিযায়ীরা।  অর্ণব জানিয়েছেন, এভারেস্টের উপর দিয়ে সুদূর পথ এবং উচ্চতা অতিক্রম করে লাদাখ থেকে এসেছে বার হেডেড হাঁসের (bar headed gooses) দল। তিনি জানিয়েছেন, আফ্রিকা মহাদেশ থেকে আসা দামোদরের শান্ত বালির চরে ঘুরে বেড়াতে দেখা যাচ্ছে গ্লেসি আইবিআইএস। এছাড়াও বার্মা, মায়ানমার প্রদেশ থেকে দামোদরের চরে ভিড় করতে শুরু করেছে সরাল(lesser whiseling), ব্লু বি-ইটার(blue bee eater) প্রজাতির পাখিরা। দেখা পাওয়া যাচ্ছে রাজস্থান, মহারাষ্ট্র থেকে আসা সাদা চোখের বাজ(white eye buzard),দুধরাজ, বুলবুল এর মতো পরিযায়ীদের।
অর্ণব দাস জানিয়েছেন, তাঁরা আশা করছেন আগামী সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যেই আরো বেশ কয়েকটি প্রজাতির পরিযায়ী পাখি দামোদরের এই বিস্তীর্ণ এলাকায় এসে পৌঁছবে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল সাইবেরিয়ার রাঙামুটি(red pochard),নীল কাটকাটিয়া, নীল গলা ফিদ্দা(blue throte), লাদাখ এলাকার গ্রে লেগ হাঁস, (grey leg gooses), বার্মার প্যাটিনেকোল সহ অন্ধ্র প্রদেশের চাতক(jocobin cuckoo) এর মতো পরিযায়ী পাখিরা।
অর্ণব দাস জানিয়েছেন, প্রধানত দামোদর নদের বালির চরে আটকে যাওয়া বা জমে থাকা জলের ধারেই এই পরিযায়ীরা ভিড় করে। জলের শ্যাওলা, গেরী, গুগলি বা ছোট পোকামাকড় এই পাখিদের প্রধান খাদ্য। তিনি জানিয়েছেন, নভেম্বরের শুরু থেকে এই পরিযায়ীদের আনাগোনা শুরু হয়ে যায়। আগামী ফ্রেব্রুয়ারীর শেষ কিম্বা কোনোকোনো সময় মার্চ মাস অবধি এই পরিযায়ীরা দামোদরের বুকে থেকে যায়। তিনি জানিয়েছেন, তাঁদের সংস্থা এবং এলাকার মানুষ আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছেন যাতে পরিযায়ীদের আনাগোনা এই এলাকায় আরো বাড়ে। পাশাপাশি চোরা কারবারি বা পাখি শিকারিদের আটকাতেও তাঁরা বদ্ধপরিকর বলে জানিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, মানুষ সচেতন হলে এই এলাকাই একদিন বিশ্বের পাখিদের জন্য সেরা ঠিকানা হয়ে উঠতে পারে।

আরো পড়ুন