সাবধান, আলুতে মেশানো হচ্ছে ক্ষতিকারক রং! জেলা জুড়ে জোরদার নজরদারী অভিযান শুরু

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: চন্দ্রমুখী, জ্যোতি আলু বলে যা কিনছেন তা কি আদৌ স্বাস্থ্যসম্মত? পর্যবেক্ষণ বলছে, মোটেই তা নয়। কারণ আলুতেও রঙের মোড়কে বিষ মেশাচ্ছে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। শুধুই প্যাকেটজাত বা কেনা খাবারে নয়, কাঁচা শাকসবজিও আর নিরাপদ নয়। পচা, বাসি আনাজ রঙ করে তাকে টাটকা বলে বিক্রি করে চালানোর প্রবণতা তৈরি হয়েছে। প্রশাসনের নজর এড়িয়ে দিব্যি চলছে এই কারবার। রাসায়নিক মিশ্রিত সেইসব রং মানবশরীরে গিয়ে ক্ষতি সাধন করছে। বিভিন্ন রোগ ছড়াচ্ছে। এমনকী দীর্ঘদিন ধরে সেইসব রং ও রাসায়নিক শরীরে প্রবেশ করলে মৃত্যুর সম্ভাবনাও তৈরি হচ্ছে।

প্রসঙ্গত প্রত্যেক বছরই আলুতে ক্ষতিকারক রং মেশানোর ঘটনা সামনে আসে। জোরদার প্রশাসনিক অভিযানও হয়। ধরাও পরে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। বড়সড় জরিমানাও করা হয় তাদের। কিন্তু এরপরও প্রতিবছর একই সমস্যায় সাধারণ মানুষকে সম্মুখীন হতে হয়। তাই এবার কড়া হাতে তা মোকাবিলা করতে মাঠে নেমে পড়ল পূর্ব বর্ধমানের রেগুলেটেড মার্কেট কমিটি। শুক্রবারেই তাঁরা জামালপুর ব্লকের বিভিন্ন আলু ব্যবসায়ী, হিমঘর পরিদর্শন করেছেন। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, যে সমস্ত এলাকায় আলুর উৎপাদন বেশি সেই সমস্ত জায়গাগুলি ছাড়াও যাঁরা আলুর ব্যবসা করেন তাঁদের কাছেও নজরদারী চালানো হচ্ছে। শুধু জামালপুরই নয়, জানা গেছে, ইতিমধ্যেই শুক্রবার থেকে রেগুলেটেড মার্কেট কমিটির একাধিক টিম বিভিন্ন ব্লকে ব্লকে ছড়িয়ে গেছেন এই বিষয়ে খোঁজখবর নিতে।
পূর্ব বর্ধমান জেলা রেগুলেটেড মার্কেট কমিটির সম্পাদক এস কে দাস জানিয়েছেন, গোটা বিষয়টি নিয়ে তাঁরা খুব শীঘ্রই জেলাশাসককে একটি রিপোর্ট দিতে চলেছেন। তিনি জানিয়েছেন, গোটা জেলায় এই মুহূর্তে ৯৭টি হিমঘরে আলু মজুদ রয়েছে। সেগুলিতেও নজরদারী চালানো হচ্ছে। উল্লেখ্য, গত ১৫ জুলাই রাজ্য কৃষি বিপণন দপ্তরের যুগ্ম সচীব রাজ্য দুর্নীতি দমন শাখার এডিজিকে রাজ্য জুড়ে ফের আলুতে ক্ষতিকারক রং এবং রাসায়নিক পদার্থ মেশানো হচ্ছে বলে বিষয়টি নজরদারী করার জন্য জানান। একইসঙ্গে সমস্ত জেলার জেলাশাসকদেরও এব্যাপারে কড়া নজরদারী করার নির্দেশ দেন।

আর তারপরেই শুরু হয়েছে এব্যাপারে জেলা জুড়ে নজরদারী। উল্লেখ্য, গোটা রাজ্যে হুগলীর পরই পূর্ব বর্ধমান জেলা আলুর উৎপাদনে দ্বিতীয় স্থান দখল করে আছে। গত বছর জেলায় ৭৩ হাজার ৬৭৬ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছিল। প্রতি হেক্টরে ৪৩.৮৪৬ মেট্রিক টন আলু উৎপাদন হয়েছিল। গড়ে গতবছর ২৪ লক্ষ ৯৩ হাজার ৬৬৭ মেট্রিক টন গোটা জেলায় আলু উৎপাদন হয়েছিল বলে জেলা কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা গেছে।

এদিকে প্রশাসন ওইসব অসাধু কারবারিদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেবে বা নিচ্ছে তা না ভেবে, ক্রেতাকেই সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। আলু কেনার আগে হাতে নিয়ে ভালভাবে পরীক্ষা করে নিতে বলছেন বিশেষজ্ঞরা। রংমিশ্রিত আলু হাতে নিয়ে একটু ঘষলেই বোঝা যাবে তাতে রং মেশানো রয়েছে কি না। রংমিশ্রিত থাকলে তা না কেনারই পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। আবার কেউ হয়তো বুঝতে পারলেন না রংমিশ্রিত কি না, তাহলে আলু কেনার পর বাড়িতে এনে ভালভাবে জলে ধুয়ে নিতে পরামর্শ দিচ্ছেন। প্রয়োজনে আলু শোধন করে নিতেও বলছেন তাঁরা।

Recent Posts