ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: ভিনরাজ্যের একটি সশস্ত্র দুস্কৃতি দল এই রাজ্যে ঢুকে নানান অপরাধমূলক কাজ করছে। গোয়েন্দা সূত্রে এই খবর পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশের কাছে পৌছতেই নড়েচড়ে বসেছেন আধিকারিকরা। রাজ্যের বেশ কয়েকটি জেলায় ইতিমধ্যেই তারা অপরাধমূলক কাজ করেছে বলে পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশের কাছে খবর এসেছে। বিশেষ করে সোনার দোকানগুলিকে এই গ্যাং টার্গেট করছে বলেই খবর। আর এরপরই বর্ধমানের স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সতর্ক এবং সচেতন করতে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করল বর্ধমান থানার পুলিশ।
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার বর্ধমানের মিঠাপুকুর এলাকার একটি অনুষ্ঠান বাড়িতে পূর্ব বর্ধমান স্বর্ণকার সমিতির সদস্যদের নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ন বৈঠক করল জেলা পুলিশের আধিকারিকরা। এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সমিতির সভাপতি তথা বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক খোকন দাস, সহ সভাপতি জগন্নাথ দে, সাধারণ সম্পাদক রাজেন্দ্রনাথ দে সহ বর্ধমান থানার আইসি সুখময় চক্রবর্তী, ডি এস পি হেড কোয়ার্টার অতনু ঘোষাল সহ সমিতির প্রায় কয়েকশ সদস্য।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কল্যাণ সিংহ রায় জানিয়েছেন, গোয়েন্দা বিভাগ সূত্রে তাদের কাছে খবর এসেছে ভিনরাজ্যের একটি গ্যাং আমাদের রাজ্যের কয়েকটি জেলায় ক্রাইম সংগঠিত করছে। পূর্ব বর্ধমানের সাম্প্রতিক বেশ কয়েকটি অপরাধমূলক ঘটনার তদন্ত চলছে। দুষ্কৃতীদের খোঁজে তল্লাশিও চলছে। তিনি জানিয়েছেন, এই সমস্ত অপরাধের সঙ্গে এই গ্যাংএর কেউ যুক্ত আছে কিনা তারও তদন্ত চলছে। জানা গেছে দুষ্কৃতীদের এই গ্যাং কলকাতা, হাওড়া, হুগলির বেশ কয়েকটি সোনার দোকানে ডাকাতির ঘটনায় যুক্ত থাকতে পারে বলে পুলিশের প্রাথমিক অনুমান। আর এই কারণে বর্ধমান শহরের সোনার দোকানদারদের সতর্ক করার জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সোনার দোকানগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো জোরদার করার জন্য এদিন আলোচনা করা হয়েছে।
পূর্ব বর্ধমান স্বর্ণকার সমিতির সহ সভাপতি জগন্নাথ দে জানিয়েছেন, বর্ধমান জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে এদিন তাদের সংগঠনের সদস্যের নিয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তারা খুবই উদ্বিগ্ন বৈঠকে আলোচনার বিষয়বস্তু জানার পর থেকে। তিনি জানিয়েছেন, পুলিশ তাদের জানিয়েছে ভিন রাজ্যের একটি সশস্ত্র দল এই রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় সোনার দোকান লুট সহ নানান ধরনের অপরাধ সংগঠিত করছে। এই জেলাও নিরাপদ নয়। তাই বর্ধমানের কয়েকশ সোনার দোকানের মালিকদের আরো বেশি সচেতন এবং সতর্ক হওয়ার আবেদন জানিয়েছে।
পাশপাশি বিগত ১০-১৫ বছর আগে যেমন সোনাপট্টি এলাকায় দল তৈরি করে আর জি পার্টি পাহারা দিতো, সেই ব্যবস্থা ফের ফিরিয়ে নিয়ে আসার জন্য সমিতিকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। জগন্নাথ দে জানিয়েছেন, তারা পুলিশের আবেদনে সাড়া দিয়ে খুব শীঘ্রই সকলের সঙ্গে আলোচনা করে রাতে রাত পাহারার ব্যবস্থা করছেন। তিনি জানিয়েছেন, এদিনের বৈঠকে সমিতির সভাপতি খোকন দাস প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, সোনাপট্টি এলাকার নিরাপত্তা আরো জোরদার করতে বিভিন্ন রাস্তায় সিসি ক্যামেরা লাগানোর জন্য তাঁর বিধায়ক তহবিল থেকে ১৫লক্ষ টাকা দেবেন।
জগন্নাথ দে আরো জানিয়েছেন, এটা খুবই উদ্বেগের বিষয়, কারণ পুলিশের পক্ষ থেকেই জানানো হয়েছে এই গ্যাংয়ের দুষ্কৃতীরা প্রয়োজনে প্রাণঘাতী হামলাও চালাচ্ছে। তাই সমস্ত ব্যবসায়ীকে সতর্ক হওয়ার আবেদন জানানো হয়েছে। পাশপাশি প্রত্যেক দোকানদার যাতে রাত্রি ৮টার মধ্যে দোকান বন্ধ করে দেয় সে ব্যাপারেও সকলকে জানানো হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, সেক্ষেত্রে দোকান বন্ধের পর দোকানের ভিতরে কাজকর্ম করা যেতেই পারে। কারণ আচমকা কোনো অঘটন ঘটে গেলে সাময়িক কেউ হা হুতাশ করবে, কিন্তু দুর্ঘটনার ফল কিন্তু ভুগতে হবে সেই ব্যক্তিকেই।
তাই সকলকে আরো বেশি সতর্ক, সচেতন হতে হবে। প্রত্যেক দোকানে সিসি ক্যামেরা লাগাতে হবে। প্রয়োজনে সিকিউরিটি গার্ড নিয়োগ করতে হবে। দোকান বন্ধের পর রাতে কেউ যদি দোকানের সাটারে স্পর্শ করে সেক্ষেত্রে এমন ডিভাইস দোকানে লাগাতে হবে যাতে ঘরে বসেই মোবাইল ফোনে তার টের পাওয়া যায়। সার্বিকভাবে ভিন রাজ্যের অপরাধীদের গ্যাং কে নিয়ে একদিকে যেমন ঘুম ছুটছে পুলিশের অন্যদিকে উদ্বেগ বাড়ছে স্বর্ণ ব্যবসায়ী মহলেও।