ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: সিএএ নিয়ে নিজের কবর নিজেই খুঁড়েছে বিজেপি। দিল্লীর ভোট সেটা দেখিয়ে দিয়েছে। তাই আসন্ন পুরভোট নিয়ে তাঁরা মোটেও চিন্তিত নন। বরং যেহেতু তাঁরা সারাবছর মানুষের সঙ্গে কাজ করেন তাই মানুষই বিচার করবে তাঁদের। জাতপাতের রাজনীতি দিয়ে মানুষকে ভোলানো যাবে না। সোমবার বর্ধমান শহরের কাঞ্চননগর কঙ্কালেশ্বরী কালীমন্দির প্রাঙ্গণে নবনীড় নামে ১০০ শয্যার আধুনিক বৃদ্ধাশ্রমের উদ্বোধন করতে এসে একথা বলেন রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।
এদিন বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি ভূয়সী প্রশংসা করেছেন এই বৃদ্ধাশ্রমের মূল কারিগর প্রাক্তন কাউন্সিলার খোকন দাসের। তিনি বলেন, কলকাতায় এই বিশাল পরিমাণ জায়গা পাওয়াই দুস্কর। কলকাতায় এক চিলতে জায়গা নিয়েই কাড়াকাড়ি। সেখানে এই বিশাল জায়গার ওপর আধুনিক এই বৃদ্ধাশ্রম তৈরী সত্যিই প্রশংসার কাজ। ফিরহাদ হাকিম এদিন বলেন, খোকন দাস এদিন কার্যতই মুখ্যমন্ত্রীর আদর্শকে বাস্তবে রুপায়িত করেছেন। মমতা বন্দোপাধ্যায়ের আদর্শ হল মানুষের জন্য কাজ করা। খোকন তাই করেছে।
এদিন বক্তব্য রাখতে গিয়ে ফিরহাদ হাকিম বলেন, তিনি ভেবেছিলেন অবসর নেওয়ার পর গায়ে কম্বল চাপিয়ে বেঞ্চে বসে শিশুদের খেলা দেখবেন। কিন্তু তাঁর সেই স্বপ্ন পূরণ হবে না। কারণ মৃত্যুই তাঁর জীবনের অবসর। কিন্তু এই বৃদ্ধাশ্রমে যাঁরা থাকবেন তাঁরা সত্যিই নিজের মত করে ভাল থাকবেন। এদিকে, এদিন সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে পুরমন্ত্রী জানিয়েছেন, কাঞ্চননগর এলাকাটি উদ্বাস্তু কলোনী হিসাবে চিহ্নিত। এই এলাকার অনেক উন্নতি হয়েছে। কিন্তু খোকন দাস আব্দার করেছে এখানে উপনগরী তৈরী করতে। তাই এদিন তিনি বর্ধমান উন্নয়ন পর্ষদকে একটি পরিকল্পনা করে তাঁকে পাঠাতে বলেছেন। তিনি তা পেলে ধাপে ধাপে সাহায্য করবেন।
আগামী পুরভোট সম্পর্কে পুরমন্ত্রী এদিন বলেন, দিল্লীর ভোট দেখিয়ে দিয়েছে এলাকার উন্নয়নই বড় কথা। বর্ধমানেও প্রচুর উন্নয়ন হয়েছে তাই তাঁরা বিশেষ চিন্তিত নন। গত লোকসভা নির্বাচনে বর্ধমান পুরসভার ৩৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডেই পিছিয়ে রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। এব্যাপারে তিনি বলেন, বিযষয়টি তিনি জানেন, কিন্তু তাঁরা চিন্তিত নন। জাতপাতের আবেগ দিয়ে কিংবা পুলওয়ামা কাণ্ড করে একবার জেতা যায়, বারবার জেতা যায়না। তিনি জানান, বিজেপিকে জিততে হলে তৃণমূল কংগ্রেস যেভাবে সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের মত মানুষকে নিয়ে মানুষের জন্য আন্দোলন করে উঠে এসেছে তাই আগে করে দেখাক। সর্বোপরি রাজ্যে সম্প্রতি ৩টি উপনির্বাচনে খুঁজে পাওয়া যায়নি বিজেপিকে। তাই আসন্ন পুরভোটেও তাদের খুঁজে পাওয়া যাবে না।
এদিন এই অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন রাজ্যের অপর মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ, বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি শম্পা ধাড়া, সহকারী সভাধিপতি দেবু টুডু, জেলাশাসক বিজয় ভারতী প্রমুখরাও। কাঞ্চননগরের অনুষ্ঠান সেরে এদিন পুরমন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেসের পূর্ব বর্ধমান জেলার পর্যবেক্ষক ফিরহাদ হাকিম দলের নেতৃত্বকে নিয়ে বর্ধমান ভবনে বৈঠকও করেন। বৈঠকে আসন্ন পুরভোটে সকলকে নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ দেন। দলীয় শৃঙ্খলা বজায় রেখে সকলকে মিলিতভাবে কাজ করার নির্দেশ দিয়ে যান বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। তবে পুরভোট ঠিক কবে হতে পারে সে ব্যাপারে কমিশনের সিদ্ধান্তের ওপরই ছেড়ে দিয়েছেন।
অন্যদিকে, কাঞ্চননগরে যে জায়গার ওপর এই নবনীড় তৈরী হয়েছে সেই সমস্ত জমিদাতাদের অনেকেই এদিন জানিয়েছেন, তাঁদের জমি গেছে নবনীড়ের জন্য, কিংবা বেশ কয়েকজনের জমি গেছে কাঞ্চন উৎসব মাঠে ঢোকার রাস্তার জন্য – যার জন্য তাঁরা কোনো ক্ষতিপূরণ পাননি। কিন্তু সেইসব জমির মালিকরা এও জানিয়েছেন, খোকন দাস আজ যে কাজটি করে দেখালেন তাতেই তাঁদের ক্ষতি পুষিয়ে গেছে। এই ভাল কাজে তাঁদের জমি কাজে লাগায় তাঁরা সত্যিই আনন্দিত। তবে এদিন যদি অনুষ্ঠানে তাঁরা আমন্ত্রণ পেতেন এবং নবনীড় ট্রাষ্টে থাকতে পারতেন তাহলে তাঁরা আরও খুশী হতেন, ভাল লাগত। তবে ভাল কাজে জমি লাগায় এবং খোকন দাসের মত ব্যক্তির এই মহত উদ্যোগে তাঁরা পাশে আছেন।