ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে এবার বর্ধমান (দক্ষিণ)-র তৃণমূল বিধায়ক খোকন দাসকে ডেকে পাঠালো সিবিআই। বিধায়কের ‘ঘনিষ্ঠ’ বর্ধমান আদালতের আইনজীবী উদয় কোনারকেও সিবিআই তলব করেছে বলে সূত্র মারফৎ জানা গিয়েছে। সিবিআই সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার দুর্গাপুরে ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি’ (এনআইটি) অতিথি নিবাসে সিবিআইয়ের কার্যালয়ে তাঁদের ডেকে পাঠানো হয়। বিধায়ক ও আইনজীবী দু’জনেই সিবিআইয়ের ডাক পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
পাশাপাশি ভোট পরবর্তী হিংসার ঘটনায় তাঁদের ডেকে পাঠানোর বিষয়টি একেবারেই ঠিক নয় বলেই জানিয়েছেন বিধায়ক খোকন দাস। খোকন দাস বলেন,” ২০২১বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণা হয়েছিল ২মে। ওইদিন বীরভূমের ইলামবাজারে একটি খুনের ঘটনা ঘটেছিল। ওইদিনই আমি তৃণমূল কংগ্রেসের বিপুল ভোটে জয়ের জন্য বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি তথা আউশগ্রাম-কেতুগ্রাম-মঙ্গলকোটের পর্যবেক্ষক অনুব্রত মণ্ডলের (কেষ্ট) কে ফোন করে শুভেচ্ছা অভিনন্দন জানিয়েছিলাম। আমার মতো রাজ্যের আরো ৫৬জন কেষ্ট দা কে ফোন করেছিলেন। খুনের ঘটনার তদন্ত করছে সিবিআই। আর সেই সূত্র ধরেই যাঁরা অনুব্রত মণ্ডলের ফোনে সেদিন ফোন করেছিলেন প্রায় সবাইকে একবার করে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন সিবিআই আধিকারিকরা। বৃহস্পতিবার আমি দুর্গাপুর গিয়েছিলাম দেখা করতে। ১০মিনিট আমার সঙ্গে কথা বলেছেন অফিসারেরা, জানতে চেয়েছেন সেদিন ফোন করার কারণ সম্পর্কে। আমি সবই জানিয়ে এসেছি।”
উল্লেখ্য গত সোমবারই এনআইটিতে বীরভূম ও বর্ধমানের আউশগ্রাম ২ ব্লক সভাপতি আহমদ শামস তাবরিজ ওরফে অরূপ মির্ধা-সহ ১০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল সিবিআই। প্রত্যকেই অনুব্রত মণ্ডলের (কেষ্ট) ‘অনুগামী’ বলে পরিচিত। জিজ্ঞাসাবাদের পরে তাঁরা দাবি করেছিলেন, ভোট পরবর্তী হিংসার কারণে তাঁদের ডাকা হয়েছে। এ ছাড়াও ‘কেষ্টদার’ সঙ্গে কখন কোন সময়ে কী কথা হয়েছে, সেটাও জানতে চেয়েছিলেন। ঘটনাচক্রে, পূর্ব বর্ধমান জেলায় অনুব্রত মণ্ডলের ‘কাছের লোক’ হলেন বিধায়ক (বর্ধমান দক্ষিণ) খোকন দাস। তাঁর ‘ঘনিষ্ঠ’ আইনজীবী হলেন উদয় কোনার। বুধবার উদয় কোনার জানিয়েছিলেন, “আমাকে সিবিআই নোটিস দিয়ে বৃহস্পতিবার দুর্গাপুরের এনআইটিতে দেখা করতে বলেছে। আমি যাব। তবে কী কারণে দেখা করতে বলেছে জানি না। আমি কোনও ভাবেই হিংসা বা বেআইনি কার্যকলাপে যুক্ত নই।“
এদিকে এই তলব নিয়ে রাজনৈতিক চাপান-উতোর শুরু হয়েছে। দলের পূর্ব বর্ধমানের জেলা সভাপতি তথা বিধায়ক (কাটোয়া) রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “সামনে পঞ্চায়েত ও লোকসভা ভোট। সে জন্যে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলিকে দিয়ে আমাদের দলের নেতা-কর্মীদের অহেতুক হেনস্থা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে আইন আইনের পথেই চলবে।“ বিজেপির সাংগঠনিক জেলার সহ সভাপতি (বর্ধমান সদর) সৌম্যরাজ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, “সিবিআইয়ের উপরে মানুষের আস্থা রয়েছে। রাজ্য জুড়ে তৃণমূল বিরোধীদের উপরে ভোট পরবর্তী যে হিংসা চালিয়েছে ও চালাচ্ছে, এ সব তারই ফল। সিবিআই যে সমস্ত ঘটনার তদন্ত করছে সেইসবই আদালতের নির্দেশে করছে। এর সঙ্গে বিজেপির কোন যোগ নেই। তদন্তে প্রমাণিত হলে শাস্তি পাবে নয়তো ক্লিনচিট পাবে। সুতরাং আইনের পথেই সব কিছু করছে তদন্তকারী সংস্থা।”