সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিবন্ধী যুবকের পোস্ট ঘিরে আলোড়ন বর্ধমানে, অভাবে কিডনি দিতে চেয়ে আবেদন

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: লক ডাউনে কাজ গিয়েছে। স্ত্রী, সন্তানকে নিয়ে সংসার চালাতে পারছেন না। শেষমেশ নিজের কিডনি বেচতে চেয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করলেন প্রতিবন্ধী যুবক। আর মর্মস্পর্শী এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আলোড়ন ছড়িয়েছে বর্ধমান শহর জুড়ে। শারীরিক ভাবে বিশেষভাবে সক্ষম ওই যুবকের নাম সম্রাট গোস্বামী। তাঁর স্ত্রী ও একটি সন্তান রয়েছে। তাঁরা বর্ধমানের টিকরহাট এলাকায় ভাড়া বাড়িতে থাকেন। 

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, সম্রাট একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটারের কাজ করতেন। লক ডাউনে সেই কাজ চলে গিয়েছে। আর তারপর থেকেই চরম আর্থিক সংকটের মধ্যে পড়েন পরিবার কে সংসার চালাতে। সম্রাটের স্ত্রী মনীষা পরিস্থিতির কথা ভেবে বাধ্য হয়েছেন পরিচারিকার কাজ বেছে নিতে। দুটি বাড়ি কাজ করে পান চব্বিশশো টাকা। সেখানে বাড়ি ভাড়া মেটাতে খরচ হয় প্রতি মাসে তিন হাজার টাকা। এরপর রয়েছে খাওয়া ও অন্যান্য খরচ। অনেক ভেবে উপায় না দেখতে পেয়ে কিডনি বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সম্রাট। আশা, ক্রেতা পাওয়া গেলে মিলতে পারে মোটা টাকা। তাতে যদি কিছুটা সুরাহা হয়!

সম্রাটের বাবা মুর্শিদাবাদ জেলায় পুরসভার কর্মী ছিলেন। সেই পুরসভা এই সঙ্কটে পাশে দাঁড়ায়নি। অভিযোগ, সব শুনে মুখ ফিরিয়েছেন সেখানকার বিধায়কও। এক হাজার টাকা প্রতিবন্ধী ভাতা পান সম্রাট। তবে এই অগ্নিমূল্যের বাজারে তা এই অভাবের সংসারে কিই বা কাজে আসে। তাই ছেলে বউয়ের মুখ চেয়ে এখন সোস্যাল মিডিয়ায় কিডনির ক্রেতা খুঁজছেন সম্রাট।

ভাই কিডনি বিক্রি করতে চাইছে জানতে পেরে তাঁর কাছে এসেছেন বোন বনশ্রী দেবনাথ। তিনি বলেন, আমি ও আমার স্বামী এই কিডনি বিক্রির সিদ্ধান্ত আগেই নিয়েছিলাম। আমরাও স্বামী স্ত্রী বেসরকারি সংস্থায় কাজ করতাম। লক ডাউনে সে কাজ চলে গিয়েছে। এর মাঝে মা অসুস্থতায় মারা গিয়েছেন। আমরা সংসার চালাতে পারছি না। তাই আমরা কিডনি বিক্রি করার কথা ভেবেছিলাম। এখন দেখছি ভাইও সেই সিদ্ধান্তের কথা সোশ্যাল মিডিয়ায় জানিয়েছে। বনশ্রী বলেন, শুনেছি কিডনি বিক্রি করলে মোটা টাকা পাওয়া যায়। কিন্তু চাইলেই তো হবে না, ক্রেতা পেতে হবে। তাছাড়া ভাই মানসিক ও শারীরিক দিক দিয়ে অসুস্থ। সেদিকটাও মাথায় রাখতে হবে।

এদিকে সংবাদ মাধ্যমের কাছ থেকে বিষয়টি জানার পর ওই পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন বর্ধমান উত্তর মহুকুমার শাসক তীর্থঙ্কর বিশ্বাস। বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক খোকন দাস বলেন, ” এই ঘটনার কথা আপনাদের মুখে শুনলাম, রবিবার সকালে আমি নিজে ওনাদের বাড়ি যাবো। কথা বলবো। একটা কাজের ব্যবস্থা করে দেবো। অবশ্যই চেষ্টা করবো ওনাদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর।”

Recent Posts