স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে চিকিৎসার সম্পূর্ণ টাকা দিচ্ছে না টিপিএ কোম্পানী, ভয়াবহ সংকটের মুখে নার্সিংহোম মালিকরা, অভিযোগ গেল নবান্নে

Souris  Dey

Souris Dey

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে ভর্তি হওয়া রোগীদের বিলের টাকা দিতে চাইছে না সংশ্লিষ্ট থার্ড পার্টি এসিওরেন্স বা টিপিএ কোম্পানী। আর এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাঁকুড়া, বীরভূম, পুরুলিয়া এবং বর্ধমান জেলায় রীতিমত ভয়ংকর রকম সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সরাসরি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সহ স্বাস্থ্যকর্তাদের হস্তক্ষেপ চাইলেন বর্ধমান শহরের একাধিক নার্সিংহোম মালিক। একইসঙ্গে প্রোগ্রেসিভ নার্সিংহোম এণ্ড হসপিটাল এ্যসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে আগামী শনিবার জরুরী ভিত্তিতে কলকাতায় সভাও ডাকা হয়েছে বলে জানিয়েছেন, সংগঠনের রাজ্য চেয়ারম্যান সেখ আলহ্বাজউদ্দিন। 

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার বর্ধমানের সান হসপিটালে ডাকা সাংবাদিক বৈঠকে সেখ আলহ্বাজউদ্দিন সহ বর্ধমানের বেশ কয়েকটি নার্সিংহোম মালিক অভিযোগ করেছেন, এফএইচপিএল নামে এসিওরেন্স সংস্থা রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের সুফলকে বানচাল করার খেলায় মেতেছে। এমনকি তাঁরা রীতিমত উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে রোগীদের সঙ্গে নার্সিংহোম মালিকদের ঝগড়া, অশান্তি এমনকি সংঘর্ষ বাধিয়ে দেবার খেলা শুরু করেছে। এমতবস্থায় নার্সিংহোম মালিকরা চুড়ান্ত অসহায় অবস্থার মধ্যে পড়েছেন। সেখ আলহ্বাজউদ্দিন জানিয়েছেন, ওই সংস্থাটির দাবী না মানায় তাঁরা ইচ্ছাকৃতভাবে রোগী এবং নার্সিংহোম মালিকদের হয়রানি করছেন। 

তাই অবিলম্বে মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্প স্বাস্থ্যসাথীর সুফলকে বজায় রাখতে ওই সংস্থাকে কালো তালিকাভুক্ত করার জন্য তাঁরা গোটা রাজ্য জুড়েই তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলতে চলেছেন। আর তার আগে তাঁরা রাজ্য সরকারের কাছে হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। যদি রাজ্য সরকার দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করেন তাহলে তাঁরা আন্দোলন থেকে পিছিয়ে আসবেন, অন্যথায় তাঁরা বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলবেন। এদিন তিনি জানিয়েছেন, তাঁর নার্সিংহোমে মুরারী ধাড়া নামে এক রোগী (সিভিএ) ভর্তি হন গত ৩০ জুন। তাঁর ছুটি হয় ১৬ জুলাই। তাঁর চিকিৎসার জন্য নার্সিংহোমের বিল হয় ৯৬ হাজার ১৩১ টাকা। কিন্তু টিপিএ কোম্পানী এই খাতে বিল অনুমোদন করেছেন মাত্র ৩৪ হাজার টাকা। শুধু এই একটা রোগীই নয়, সেখ নুরালি নামে এক রোগীর বিল হয় ৬৯ হাজার ৫৫৬ টাকা। কিন্তু ওই এসিওরেন্স কোম্পানী তার জন্য অনুমোদন করেছে মাত্র ৪০ হাজার টাকা। 

আলহ্বাজউদ্দিন জানিয়েছেন, বাঁকুড়া, বীরভূম এবং পুরুলিয়া জেলা থেকে সংকটজনক রোগী বর্ধমানে বেশি আসেন। তাঁদের চিকিৎসাও স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে যথারীতি হয়। কিন্তু গত প্রায় ২ মাস ধরে ওই সংস্থা এই ধরণের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে শুরু করেছে। ফলে রোগীদের ছুটি হলেও তাঁদের ছাড়া যাচ্ছে না। এমতবস্থায় নার্সিংহোমগুলিতে তীব্র সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি ছুটি পাবার পরও বাড়ি যেতে না পারায় অনেক রোগীই মানষিক চাপের শিকার হয়ে পড়ছেন। তিনি জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, কোনো রোগীকে ভর্তি বা চিকিৎসার জন্য ফেরানো যাবে না। 

তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ যথাযথভাবে পালন করছেন। কিন্তু তাঁরা লক্ষ্য করছেন ওই এসিওরেন্স সংস্থাটি রীতিমত কৌশল করে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের সুফলকে বানচাল করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। তাঁদের এই প্রতিবন্ধকতার জন্য রোগীদের মনে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নিয়ে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হচ্ছে। তাই অবিলম্বে ওই সংস্থাকে তাঁরা কালো তালিকাভূক্ত করার জন্য বাধ্য হয়েছেন। শুধু তাই নয়, আলহ্বাজউদ্দিন জানিয়েছেন, ওই সংস্থার এক ব্যক্তি রীতিমত অন্যায় আবদার করছেন নার্সিংহোম মালিকদের কাছে। তাঁর আবদার মানা হলে তিনি বিল পাস করছেন। আর তাঁর অন্যায় আবদার মানা না হলেই হয়রানি করা হচ্ছে। কার্যত এই ব্যবস্থায় চরম অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে পড়েছেন একাধিক নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ।

আরো পড়ুন