---Advertisement---

স্বাস্থ্য সাথী নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারিই সার, বর্ধমানের অনাময় হাসপাতালে ২০ দিনেও বসেনি রোগীর পেসমেকার-ক্ষোভ

Souris Dey

Published

বিজ্ঞাপন
ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: মাত্র কয়েকদিন আগেই দুর্গাপুরের প্রশাসনিক সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় হুঁশিয়ারী দিয়ে নির্দেশ দিয়েছেন 
সরকারি হাসপাতালে স্বাস্থ্য সাথী কার্ড নিয়ে কোনো রোগী আসলে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হলে 
সেই হাসপাতালের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই খোদ সরকারী হাসপাতালে ধরা পড়ল স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের সুযোগ সুবিধা প্রদানের করুণ চিত্র। 
পূর্ব বর্ধমানের মঙ্গলকোট থানার যবগ্রাম থেকে প্রায় ২৬দিন ধরে খোদ বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উইং অনাময় সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে বুকের সমস্যা নিয়ে ভর্তি রয়েছেন এক বৃদ্ধা। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তাঁর পেসমেকারের দরকার। কিন্তু আজ নয় কাল করতে করতে প্রায় তিন সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও আজও বৃদ্ধা তুলসী দাসের বুকে পেসমেকার বসানো হয়নি। অন্যান্য চিকিৎসা চললেও কবে তাঁর পেস মেকার বসবে কিংবা আদপেই তাঁর জীবিত অবস্থায় তিনি পেস মেকার বসানোর সুযোগ পাবেন কিনা – তানিয়ে ঘোর দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তুলসীদেবীর পরিবারের লোকজন। 
তুলসী দেবীর নাত বৌ অপর্ণা দাস জানিয়েছেন, ১৮দিন ধরে একই অবস্থা চলছে। তিনি জানিয়েছেন, প্রথমে শ্বাসকষ্ট নিয়ে তুলসীদেবীকে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে চিকিৎসকরা পেস মেকার বসানোর নির্দেশ দিয়ে তাঁকে বর্ধমানের অনাময় হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। গত ২৭ ফেব্রুয়ারী তুলসী দেবীর স্বাস্থ্য সাথীর কার্ড জমাও দিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু তারপরে ১৮দিন পার হয়ে গেলেও পেস মেকার বসানো হয়নি। 
অপর্ণাদেবী জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে তাঁরা কর্তব্যরত চিকিৎসকদের সঙ্গে একাধিকবার এই বিষয়ে কথা বলেছেন। অভিযোগ, এব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তাঁরা জানিয়েছেন, বাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে পেসমেকার কিনে আনলে তাঁরা তা বসিয়ে দেবেন। কিন্তু এখন হাসপাতালে পেস মেকার মেশিন না থাকায় বসানো যাচ্ছে না। অপর্ণাদেবী জানিয়েছেন, সরকারী হাসপাতালে যদি টাকা দিয়েই যন্ত্র কিনতে হয় তাহলে কেন এটা সরকারী হাসপাতাল ? 
একই ঘটনায় ভুক্তভোগী শুধু অপর্ণাদেবীই নন, এই সমস্যায় এখন জেরবার জেলার বিভিন্ন প্রান্তের একাধিক রোগীর পরিবার। মন্তেশ্বরের তাজপুরের বাসিন্দা মহিরুদ্দিন সেখ জানিয়েছেন, তিনিও গত ১৮দিন ধরে বর্ধমানের অনাময় সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। বুকের সমস্যার জন্য চিকিৎসক তাঁরও পেসমেকার বসানোর নির্দেশ দিয়েছেন। ইতিমধ্যেই তাঁর স্বাস্থ্য সাথীর কার্ড জমাও দিয়েছেন। কিন্তু তারপরে ১৮দিন পেরিয়ে গেলেও এখনও পেসমেসার বসানো হয়নি। 
অন্যদিকে, স্বাস্থ্য সাথীর কার্ড না থাকলেও পেস মেকারের সমস্যায় রীতিমত ছটফট করছেন বর্ধমানের বাদামতলার বাসিন্দা দোলা সরকারের পরিবার। দোলা সরকারের মেয়ে দীপাঞ্জনা সরকার জানিয়েছেন, গত ২৮ ফেব্রুয়ারী থেকে তাঁর মাকে তিনি ভর্তি করেছেন অনাময়ে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তাঁরও পেস মেকার বসানো দরকার। এমনকি চিকিৎসকরা আজ নয় কাল এভাবেই বলে চলেছেন, কিন্তু আজও পেসমেকার বসানো হয়নি। 
দীপাঞ্জনা সরকার জানিয়েছেন, শুধু তাই নয়, তিনি তাঁর মাকে যে অবস্থায় অনাময় হাসপাতালে ভর্তি করেছিলেন, তাঁর শারীরিক অবস্থা ভালর জায়গায় ক্রমশই খারাপ হচ্ছে। একই অবস্থা সুমন্ত পোড়েলেরও। বর্ধমানের সেহারাবাজার এলাকার বাসিন্দা সুমন্ত পোড়েলের পেস মেকার বসানোর জন্য গত ১৪দিন ধরে অনাময় হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। কিন্তু চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এখনও এক সপ্তাহ দেরী আছে। 
সুমন্তবাবুর ভাই হেমন্ত পোড়েল জানিয়েছেন, তাঁর দাদা চাষবাস করেন। কিন্তু শারীরিক সমস্যার জন্য এখন তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ফলে সংসারে চরম সংকট সৃষ্টি হয়েছে। দাদার এই চিকিতসার জন্য সুমন্তবাবুর স্বাস্থ্য সাথীর কার্ডও জমা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাতেও কোনো সুরাহা মেলেনি। এমনকি সুমন্তবাবুর চিকিৎসা সঠিকভাবে হচ্ছে না বলে দাবী করেছেন হেমন্ত পোড়েল। 
সবমিলিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য এবং সরকারী হাসপাতালগুলিতে স্বাস্থ্য পরিষেবার যে হাল তার তফাৎ বাস্তবে এই ধরণের ঘটনায় ফের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। কার্যতঃ স্বাস্থ্য পরিষেবায় যে ঘাটতি রয়েই গেছে, খোদ সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের এই চিত্রই প্রমাণ করে দিচ্ছে বলে শনিবার রোগীদের পরিবারের লোকজন অভিযোগ করেছেন। 
রাজ্য ঘোষ ও গাভী কল্যাণ সমিতির সম্পাদক বাপ্পাদিত্য ঘোষ জানিয়েছেন, বর্ধমানের অনাময় সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে কার্ডিওলজি বিভাগে বর্তমানে এমন ৮জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। যাঁদের দ্রুততার সঙ্গে পেস মেকার বসানো দরকার। এর মধ্যে তাঁদের কয়েকজন সদস্যও রয়েছেন। কিন্তু একটা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের এই পেস মেকারের অভাবে দীর্ঘদিন রোগীদের ফেলে রাখার এই বিষয়টি সরকারী ভাষ্যের বিপরীত। তিনি জানিয়েছেন, সরকারের উচিত দ্রুত এব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা। তিনি জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী সাস্থ্য সাথীর কার্ডকে সম্মান দেওয়া এবং তার সুফল যত্ন সহকারে পৌঁছে দেবার কথা বলেছেন, কিন্তু বাস্তবে ঘটছে তার ঠিক উল্টো। এটা কখনই কাম্য নয়। 
অন্যদিকে, এব্যাপারে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডেপুটি সুপার তথা অনাময় সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের দায়িত্বে থাকা ডা. অমিতাভ সাহা জানিয়েছেন, পেস মেকার নিয়ে কিছু সমস্যা রয়েছে। তাঁরা প্রয়োজনীয় পেস মেকারের জন্য রাজ্য সরকারকে জানিয়েছেন। কিন্তু এখনও তা মেলেনি। তবে তাঁরা আশা করছেন আগামী সপ্তাহের মধ্যেই এই সমস্যা মিটে যাবে। যদিও তিনি জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য সাথী কার্ডে বিনামূল্যেই রোগী তাঁর পরিষেবা পাবেন- এখানে অর্থ খরচের কোনো বিষয়ই নেই। যাঁরা রোগীদের টাকা খরচ করার কথা বলেছেন, এব্যাপারে রোগীরা তাঁকে জানালে তিনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। 
See also  মেমারিতে গ্যাস সিলিণ্ডার বিস্ফোরণ, আহত ৬
শেয়ার করুন 🤝🏻

Join WhatsApp

Join Now
---Advertisement---