ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: যতদিন যাচ্ছে ততই বিষধর সাপের উপদ্রব এবং প্রাণহানির ঘটনা বাড়তে থাকায় রীতিমত উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হচ্ছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। শুধু তাইই নয়, ক্রমশই সমাজে উল্লেখ্যযোগ্যভাবে জায়গা করে নিচ্ছে চন্দ্রবোড়া এবং গোখরো প্রজাতির সাপ। ফলে এই সমস্ত সাপের উপদ্রবে বাংলার বহু নাম জানা পরিচিত সাপেরা আস্তে আস্তে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন সর্প বিশারদরা। পূর্ব বর্ধমান জেলা বনাধিকারিক নিশা গোস্বামী জানিয়েছেন, গতবছর বনদপ্তরের কর্মীরা প্রায় ৩৫০টি সাপ উদ্ধার করে নিয়ে এসেছিল। এখনও পর্যন্ত প্রায় জুলাই মাস পর্যন্ত উদ্ধার হয়েছে ১৫০টি সাপ।
বিজ্ঞাপন
তিনি জানিয়েছেন, সাধারণত, গরমকাল এবং বর্ষাকালেই সাপের দেখা বেশি পাওয়া যায়। উল্লেখ্য, খোদ বনদপ্তর সূত্রেই জানা গেছে, সাধারণ মানুষের আতংকের আরও কারণ হয়ে উঠতে শুরু করেছে দোতলা বা তিনতলা বাড়িতেও অবাধে দেখা মিলছে বিষধর সাপের। বনাধিকারিক জানিয়েছেন, যেহেতু সাপ পেঁচিয়ে ওঠে। তাই কখনও গাছ বা কখনও বিভিন্ন পাইপ বেয়েও উঠতে পারে। তিনি জানিয়েছেন, উদ্ধার হওয়া সাপেদের তাদের পছন্দের জায়গায় ছেড়েও দেওয়া হচ্ছে লোকালয়ের বাইরে।
বিশিষ্ট সর্প বিশারদ ধীমান ভট্টাচার্য্য জানিয়েছেন, বর্তমান সময়কালে অনেকাংশে কমে গেছে কেউটে প্রজাতির সাপ। এর অন্যতম কারণ সাধারণ মানুষের সর্পভীতি। সাপ দেখলেই মেরে দেওয়ার প্রবণতায় আস্তে আস্তে কমছে কেউটে প্রজাতি। তিনি জানিয়েছেন, প্রতিদিনই পূর্ব বর্ধমান জেলায় কোথাও না কোথাও একাধিক ব্যক্তি সাপের ছোবল খাচ্ছেন। যার অধিকাংশই সরকারী খাতায় লিপিবদ্ধ হয়না। এখনও গ্রাম গঞ্জে সাপে কামড়ালে ডাক্তারের থেকে ওঝাদের ওপর বিশ্বাস বেশি করা হয়। আবার অনেক সময় সঠিক সময়ে আক্রান্ত ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে না যাওয়ার ফলেও তাঁর মৃত্যু হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত প্রায় একমাসে কেবলমাত্র বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাপের কামড়ে মারা গেছেন প্রায় ১৪জন। ধীমানবাবু জানিয়েছেন, এক্ষেত্রে চিকিৎসকদেরও একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। গ্রামাঞ্চলে ডাক্তারদের অনেকেই সাপের কামড়ের চিকিৎসা করাতে চাননা। অনীহা প্রকাশ করেন। এব্যাপারেও সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজন। একইসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, সাপের কামড়ের বিষয় নিয়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে সমস্ত পাড়ায় পাড়ায় সচেতনতামূলক প্রচার করা অত্যন্ত প্রয়োজন। তবেই এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। একইসঙ্গে সাপের কামড়ে আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রতিষেধকের জোগানও পর্যাপ্ত থাকা প্রয়োজন।