ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: হার না মানার লড়াই। তিনি কোনো হেভিওয়েট প্রার্থী নন। এমনকি অন্য যুযুধান রাজনৈতিক দলের ঘুম ছুটিয়ে দেবার মত ব্যাপক জনসমর্থনের প্রমাণও দিতে পারেন নি এখনও। তবু তিনি লড়াইয়ের ময়দান ছাড়েননি। ২০২১ সালের লড়াইয়েও তিনি এসইউসিআই-এর আউশগ্রামের প্রার্থী। তাবর প্রার্থীদের ভিড়েও গোটা পূর্ব বর্ধমান জেলায় রীতিমত নজর কাড়ছেন পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামের এসইউসিআই-এর প্রার্থী মনসা মেটে। হাতে মাত্র ১০৪৫টাকা নিয়ে তিনি মঙ্গলবার করে গেলেন মনোনয়ন পেশ। বাকি টাকা জোগাড় করলেন এসইউসিআই-এর নেতৃত্বরা।
এসইউসিআই নেত্রী তথা মনসা মেটের প্রস্তাবক ঝর্ণা কুণ্ডু জানিয়েছেন, অনেক কষ্ট করে বাকি টাকা জোগাড় করতে হয়েছে তাঁদের। রীতিমত কষ্টেই সেই জোগাড়। কারণ আর যাই হোক সেই সমস্ত ব্যবসাদার বা ফাইনান্সররা দুহাত তুলে সাহায্যের হাত এসইউসিআই-এর দিকে বাড়িয়ে দেবেন এমনটা এখনও ভাবাও ভুল – বলছেন এসইউসিআই নেতৃত্বরা। তাই অনেক কষ্ট করেই সেই টাকা জোগাড় করতে হয়েছে। যাইহোক, তবুও আবার লড়াইয়ের ময়দানে মনসা মেটে। দিন মজুর পরিবার। স্ত্রী সুনীতা মেটে, দুই ছেলে সৈকত ও সুব্রত মেটেকে নিয়ে দিন আনি দিন খাইয়ের সংসার।
দীর্ঘদিন ধরেই তিনি পঞ্চায়েত নির্বাচন থেকে বিধানসভা নির্বাচনে এসইউসিআই-এর মনোনীত প্রার্থী। এসেছে অনেক প্রলোভন। আদর্শ ত্যাগ করেননি। অত্যাচার লাগাতার হয়েছে। আর তাই প্রত্যেক বিধানসভা নির্বাচনে মনোনয়ন পত্র জমা দেবার পরই তিনি বাড়ি ছাড়া হয়ে যান। বিগত নির্বাচনগুলিতে এমনটাই হয়েছে – জানিয়েছেন মনসা মেটে। ২০০৬ সালের নির্বাচনে তিনি পেয়েছিলেন ১৭৪১টি ভোট। ২০১১ সালে প্রবল তৃণমূল হাওয়ায় তিনি পেয়েছিলেন ২৩২১টি ভোট। ২০১৬ সালে পেয়েছিলেন ১৪৮৫টি ভোট। মনসা মেটের ছেলে সৈকত মেটে জানিয়েছেন, ২০১১ সালের নির্বাচনে তাঁর ভাই সুব্রত মেটেকে কিডন্যাপ করার চক্রান্ত হয়েছিল। কোনোরকমে আত্মগোপন করে থাকতে হয় তাকে। শুধু সুব্রত মেটেই নয়, সৈকত মেটেকেও হন্যে হয়ে খুঁজেছে তৃণমূলের লোকজন ২০১১ সালে, ২০১৬ সালে।
মনসা মেটে জানিয়েছেন, ভোটের ময়দান থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য এসেছে অনেক প্রলোভন, ভয়। এমনকি লালচোখ, সবুজ চোখকে পরোয়া না করে লড়াইয়ের ময়দানে থেকে যাওয়ায় জুটেছে মার। এমনকি আদর্শচ্যুত হতে না পারায় আজও তাঁর কপালে জোটেনি সরকারী সাহায্যের সব সুফল। কিন্তু তবুও না খেতে পেয়ে মরে যাবেন, তবুও লড়াইয়ের ময়দান ত্যাগ করবেন না। জানিয়েছেন জেদি, একরোখা মনসা। মঙ্গলবার মনোনয়নপত্র দাখিল করে মনসা মেটে জানিয়েছেন, প্রত্যেকবার তাঁকে ভোটের জন্য ঘরছাড়া হতে হয়। এবারে কি হবে তিনি জানেননা।
গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে তিনি আউশগ্রামে জেলা পরিষদ আসনে প্রার্থী হয়েছিলেন। অন্যান্য এসইউসিআই প্রার্থীদের জোর করে প্রার্থীপদ প্রত্যাহার করিয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস – এমনটাই অভিযোগ তাঁর। কিন্তু তাঁকে পারেননি। যদিও তার জন্য খোদ বর্ধমান শহরের কোর্ট কম্পাউণ্ডেই মনোনয়ন জমা করতে এসে তাঁর কপালে জুটেছিল তৃণমূলী মার। ভুলে যাননি। বরং চোয়াল আরও শক্ত হয়েছে তাঁর। জানিয়েছেন, লড়ে যাবেন তিনি। শোষণের বিরুদ্ধে, বেকারত্বের বিরুদ্ধে, জমির অধিকার নিয়ে লড়াই, কৃষি ও কৃষকের স্বার্থে লড়াই তিনি চালিয়েই যাবেন – আমৃত্যু।