৫০ বছরেও ভাইদের হত্যাকাণ্ডের বিচার পাইনি – ক্ষোভ উগরে দিলেন সাঁইবাড়ির মেয়ে

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: বর্ধমানের সাঁইবাড়ি হত্যাকাণ্ডের ৫০ বছর পর সাঁইবাড়ির নামে একটি রাস্তা তৈরীর প্রস্তাব দিলেন ৯ বছর ধরে রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে আসীন মমতা বন্দোপাধ্যায়। উল্লেখ্য, ১৯৭০ সালের ১৭ মার্চ সকালে সিপিএমের সংগঠিত মিছিল আক্রমণ চালিয়েছিল বর্ধমানের প্রতাপেশ্বর শিবতলা লেনের কংগ্রেসী পরিবার সাঁইবাড়িতে। কুপিয়ে নৃশংস্যভাবে সেদিন খুন করা হয়েছিল মলয় সাঁই, প্রণব সাঁই এবং বাড়ির গৃহশিক্ষক জীতেন রায়কে। এই ঘটনায় গোটা দেশ জুড়ে সেদিন নিন্দার ঝড় বয়ে গিয়েছিল।
সাঁইবাড়ির সেদিনের সেই হত্যাকাণ্ড নজীর হয়ে গিয়েছিল সিপিএমের সংগঠিত আক্রমণের অন্যতম নজীর হিসাবেই। সেই ঘটনার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে মঙ্গলবার কলকাতা থেকে বর্ধমানের সাঁইবাড়ির প্রতাপেশ্বর শিবতলা লেনে একটি ফলক উন্মোচন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। তাঁর দূত হয়ে এদিন বর্ধমানে এই ফলক উন্মোচন করলেন রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের প্রাণী সম্পদ বিকাশ দপ্তরের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ সহ জেলার সমস্ত তৃণমূল নেতৃরাই।
এদিন কলকাতা থেকেই ফিরহাদ হাকিমের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী সাঁইবাড়ির ঘটনা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যও রাখেন। একইসঙ্গে এদিন তিনি ফিরহাদ হাকিমকে জানান, যদি সাঁইবাড়ির নামে একটি সড়ক করা যায় তা ভাবনাচিন্তা করার জন্য।
অপরদিকে, গোটা বিশ্বজুড়ে যখন করোনা ভাইরাসের জেরে সমস্ত জমায়েতকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সেই সময় মঙ্গলবার সন্ধ্যেয় বর্ধমানের প্রতাপেশ্বর শিবতলা লেন ছিল ভিড়ে ভর্তি। অনেকেই এদিন এই জমায়েত না করার পক্ষেই মত দিয়েছেন। যদিও এব্যাপারে খোদ পুরমন্ত্রীর দাবী, কোনো পরিকল্পিত জমায়েত এটা নয়। সাধারণ মানুষ নিজেরাই এসে হাজির হয়েছেন। পরিকল্পিত জমায়েত হলে বিরাট জমায়েত হত। সিপিএমের এটা খারাপ লাগছে।
এদিন ফিরহাদ হাকিম বলে যান, যে সিপিএমের সংগঠিত অত্যাচার কংগ্রেসী পরিবার সাঁইবাড়িতে ঘটিয়েছে এখন সেই সিপিএমের সঙ্গেই হাত মিলিয়েছে কংগ্রেস। তিনি বলেন, মমতা বন্দোপাধ্যায় তৃণমূল কংগ্রেস তৈরী করেছিলেন বলেই সাঁইবাড়ির শহিদরা শান্তিতে রয়েছেন। নাহলে তাঁরা ছটফট করতেন। কারণ যে কংগ্রেস করার অপরাধে সাঁইবাড়ির হত্যাকাণ্ড হয়েছিল সেই কংগ্রেস সব ভুলে গিয়ে সিপিএমের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। উল্লেখ্য, মমতা বন্দোপাধ্যায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে আসীন হবার পরই সাঁইবাড়ি হত্যাকাণ্ডের জন্য কমিশন গঠন করেছিলেন। কিন্তু সেই কমিশনের রিপোর্ট এখনও প্রকাশ্যে আসেনি।
এব্যাপারে ফিরহাদ হাকিম জানান, সাঁইবাড়ির সেই অত্যাচারের বিচারের বিষয়টি মমতা বন্দোপাধ্যায় দেখছেন। যদিও এদিন খোদ সাঁইবাড়ির বড় মেয়ে বৃদ্ধ স্বর্ণলতা যশ রীতিমত ক্ষোভ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, তাঁর ভাইদের হত্যাকাণ্ডের কোনো বিচার তাঁরা এখনও পাননি। অনেকেই এসেছিলেন, কথাও দিয়েছিলেন, প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন – কিন্তু ভাইদের হত্যাকাণ্ডের কোনো বিচার ৫০ বছরেও পাওয়া গেল না। তাঁরা তো শুধু বিচারই চেয়েছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, তাঁদের কোনো কিছুর অভাব নেই। তাঁর ভাইরা তো ভিখারী ছিলেন না। কিন্তু বিচার পেলাম না কেন?
এরই পাশাপাশি এদিন বর্ধমান জেলার তৃণমূল কংগ্রেসের পর্যবেক্ষক ফিরহাদ হাকিম সরাইটিকরে শ্মশানের জমি বিক্রি করার ঘটনায় যাঁরা জড়িত তাঁদের আইন অনুযায়ী শাস্তি হবে বলে জানিয়ে যান। উল্লেখ্য, এদিনই সরাইটিকরে শ্মশানের জমি তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য বিক্রি করে দিচ্ছে এই অভিযোগ তুলে ব্যাপক বিক্ষোভ, রাস্তা অবরোধ এবং ওই পঞ্চায়েত সদস্যকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে।
এদিন সেই প্রসঙ্গে ফিরহাদ হাকিমকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি সাফ জানিয়ে যান, মমতা বন্দোপাধ্যায়ের কড়া নির্দেশ অন্যায় করলে কাউকে ছাড়া হবে না, তা তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা হলেও। অন্যদিকে, পুরসভা নির্বাচন নিয়ে দলের গোষ্ঠী কোঁদল সম্পর্কে তিনি বলেন, অনেকেই আশা করতে পারেন প্রার্থী হওয়া নিয়ে, কিন্তু যিনি মানুষের সেবা করেন তিনিই প্রার্থী হবেন।

Recent Posts