ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,রায়না: পরিস্থিতি তৈরিই ছিল। কিছুদিন আগেই ২১ জুলাইয়ের ধর্মতলার সভা থেকে ফেরার পর সেই রাতেই রায়নার বড়কয়রাপুর এলাকার তৃণমূলের একটি পার্টি অফিসে অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটেছিল। সেই ঘটনায় রায়নার বিধায়ক শম্পা ধারা গোষ্ঠীর লোকেদের অভিযোগের তীর ছিল ব্লক সভাপতি বামদাস মণ্ডলের কর্মীদের দিকে। যদিও ব্লক সভাপতি সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, রায়নায় তৃণমূল কোন গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই। সিপিএম এবং বিজেপি থেকে দুদিন আগে যারা দলে ঢুকেছে এই কাজ তারাই ঘটিয়েছে। এলাকাকে অশান্ত করার উদ্দেশ্যে।
এরপর কয়েকদিন ঠিকঠাক থাকার পর মঙ্গলবার বিকেলে ফের যুযুধান দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে উঠল রায়নার হিজলনা পঞ্চায়েতের বড় কয়রাপুর এলাকা। স্থানীয় তৃণমূলেরই একাংশ দুষ্কৃতীদের হামলার শিকার হলেন এলাকার দীর্ঘদিনের নেতা গোলাম মোস্তফা মল্লিক। অভিযোগ দুষ্কৃতীদের হামলায় তাঁর দুটো পায়ের হাড় ভেঙে গেছে। শরীরের অন্যান্য জায়গায় লাঠি, রড, বাঁশ প্রভৃতি অস্ত্র দিয়ে গুরুতর আঘাত করা হয়েছে। হামলার খবর পেয়ে দলের কর্মীরা তাঁকে উদ্ধার করে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন। বর্তমানে সেখানেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন গোলাম মোস্তফা মল্লিক।
এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই ১৬জন সহ আরো অনেকের বিরুদ্ধে রায়না থানায় অভিযোগ জানানো হয়েছে। এদের মধ্যে সাত জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বাকিদের খোঁজে পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে। বুধবার ধৃতদের বর্ধমান আদালতে পেশ করা হয়। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঘটনায় যুক্ত গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা হল নিতাই মাল (২৭), বাড়ি শক্তিগড় থানা এলাকার বড়শুলে। বাবর আলী মল্লিক (৬৭), বাড়ি রায়না থানার যোৎসাদি এলাকায়। শেখ আনারুল (৪০), বাড়ি রায়নার বাঁধগাছা। শেখ সুকুর মহম্মদ(৬০), বাড়ি রায়না থানার যোৎসাদি। শেখ নুরুল হক(২৭), বাড়ি রায়না থানার বামুনিয়া এলাকায়। শেখ শামসের আলি (৫৯), বাড়ি রায়নার যোৎসাদি। এবং মানিক মন্ডল ওরফে আবির হোসেন মন্ডল(৩৮), বাড়ি রায়নার যোৎসাদি এলাকায়।
তৃণমূলের রায়না ১ ব্লক সভাপতি বামদাস মন্ডল জানান, “গোলাম মোস্তফা মল্লিক এলাকার দীর্ঘদিনের জনপ্রিয় নেতা। তার নেতৃত্বে গত বিধানসভা নির্বাচনে বিশাল ব্যবধানে জয়লাভ করেছে দল। এই এলাকায় আমাদের কোনো গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই। এলাকার বিজেপি সমর্থিত দুষ্কৃতীরা তার ওপর আক্রমণ চালিয়েছে।” যদিও স্থানীয় এলাকাবাসীদের একাংশ অভিযোগ করেছেন, এই ঘটনার পিছনে তৃণমূলের বিধায়ক ও ব্লক সভাপতির গোষ্ঠীর লড়াই দায়ী। আগামী বছর পঞ্চায়েত নির্বাচন, আর তার আগে হিজলনা পঞ্চায়েতের বিভিন্ন এলাকায় দলের দুটি গোষ্ঠীর বিরোধ বারবার প্রকাশ্যে চলে আসায় কার্যত ঘোর বিরম্বনায় পড়েছে খোদ শাসক দলের জেলা নেতৃত্ব। আর এলকাবাসীদের অধিকাংশই ফের সিঁদুরে মেঘ দেখছেন। অনেকেই জানিয়েছেন, তাঁরা ঘর পোড়া গরু, এই অঞ্চলে বাম আমলে যে অত্যাচার তাঁরা ভোগ করেছেন নতুন করে আর যেন সেই অবস্থার তৈরি না হয়।