পশ্চিমবঙ্গ

বর্ধমানে ৮০০কেজি বেআইনি শব্দবাজি আটক, মেমারিতে অভিযান গিয়ে খালি হাতে ফিরল পুলিশ

FOCUS BENGAL

FOCUS BENGAL

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: যখনই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে, তখনই টনক নড়ে পুলিশের। বেআইনি বাজি কারখানা থেকে শুরু করে অবৈধ মজুদের বিরুদ্ধে অভিযানে নামে পুলিশ। এগড়ার বিস্ফোরণের পর সমস্ত বাজি কারখানা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু দত্তপুকুরের ঘটনার পর সেই নির্দেশ যে আদপেই কার্যকর হয়নি তা প্রকাশ্যে চলে আসে। এমনকি রাজ্য জুড়ে এরপর বিভিন্ন জেলায় অভিযান চালিয়ে প্রচুর পরিমাণ নিষিদ্ধ শব্দবাজি, আতশবাজি উদ্ধার করছে পুলিশ। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, যখনই কোন বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে তারপরই তৎপর হয় পুলিশ। তাহলে তার আগে কি ‘সেটিং’ করে ব্যবসা চলে? এই প্রশ্নই সামনে এসেছে। এগরায় বিস্ফোরণের পরেও অভিযোগ উঠেছিল, পুলিশকে ‘তুষ্ট’ করেই চলত বাজির বেআইনি কারবার।

বিজ্ঞাপন

সোমবার রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীও প্রশ্ন তোলেন, চার মাস আগে যে নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছিল, তার পরেও কেন পুলিশ নজরদারি করেনি! ২০১৫ সালে জাতীয় পরিবেশ আদালত নির্দেশ দিয়েছিল, বিস্ফোরণের জেরে মৃত্যু এড়াতে এবং পরিবেশ বাঁচাতে সমস্ত বেআইনি বাজি কারখানা ভেঙে ফেলতে হবে। রাজ্য সরকারের তরফেও ঘোষণা হয়, সমস্ত বাজি কারখানা ভেঙে নতুন করে ক্লাস্টার তৈরি করে বাজি কারখানা আইনসিদ্ধ করার পাশাপাশি নজরদারি চালানো হবে। পরিবেশকর্মীরা দাবি তুলেছিলেন, আদালতের নির্দেশে সবুজ বাজি ছাড়া কোনও বাজিই বৈধ নয়। ফলে যতদিন না রাজ্যে সবুজ বাজির কারখানা হচ্ছে, ততদিন সব বাজি কারখানা ও মজুদ বন্ধ করা হোক।

সোমবার বর্ধমানের ডাঙাপাড়া থেকে পুলিশ অভিযান চালিয়ে একটি গোডাউন থেকে প্রায় ৮০০ কেজি শব্দ ও আতশবাজি উদ্ধার করেছে।যদিও এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি বলেই পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। ডিএসপি ট্রাফিক ২ রাকেশ কুমার চৌধুরী বলেন, পূর্ব বর্ধমানের রায়ান ডাঙ্গাপাড়া এলাকায় কোন নিয়ম না মেনে অবৈধভাবে বাজি মজুদ করা হচ্ছে বলে গোপন সূত্রে জানতে পারে পুলিশ । সোমবার রাত্রে ডাঙ্গাপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে মোহম্মদ লাবু নামে এক ব্যক্তির গোডাউন থেকে উদ্ধার হয় অবৈধভাবে মজুদ করা প্রায় ৮০০ কেজি আতশবাজি ও শব্দবাজি।

পুলিশ জানিয়েছে, ওই ব্যক্তি বিভিন্ন জায়গা থেকে বাজি এনে মজুদ করতেন গোডাউনে।  পরে বর্ধমান শহর ও আশেপাশের বিভিন্ন জায়গায় সেই বাজি সরবরাহ করতেন। পুলিশ জানিয়েছে, উদ্ধার হওয়া বাজি গুলোকে নিরাপদ ভাবে নিষ্ক্রিয় করার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। অন্যদিকে,  সারা রাজ্যের বিভিন্ন জেলার পাশাপশি পূর্ব বর্ধমান জেলার মেমারি থানার পুলিশ মঙ্গলবার দুপুরে গৌরীপুরে বেআইনি বাজি তৈরির কারখানায় অভিযান চালায়।

 

এর আগে এগরায় বিস্ফোরণের পর এই এলাকার কয়েকটি বাজি কারখানা সিল করে দিয়েছিল পুলিশ। এদিন অভিযানে গিয়ে পুলিশ দেখে যেভাবে কারখানা গুলোকে সিল করে দেওয়া হয়েছিল, সেগুলো সেইভাবেই রয়েছে। কোন বেআইনি কার্যকলাপ পুলিশের নজরে আসেনি। এদিনের এই অভিযানে উপস্থিত ছিলেন, বর্ধমান সদর দক্ষিণ এসডিপিও সুপ্রভাত চক্রবর্তী, সিআই অরুপ ভৌমিক, মেমারি থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক সুদীপ্ত মুখার্জী সহ বিশাল পুলিশ বাহিনী। আর এরপরই ফের প্রশ্ন উঠেছে, গত পাঁচ, ছয় মাস আগে গৌরীপুরে যে বেআইনি বাজি কারখানা গুলোকে পুলিশ সিল করে দিয়েছিল, সেগুলো এই সময়কালে ফের কোন বেআইনি কারবার চালাচ্ছে কিনা তার কোনো নজরদারি পুলিশের আদৌ ছিলনা। আর সেই কারণেই এলাকার পরিস্থিতি না জেনেই এদিন অভিযানে গিয়ে মেমারি থানার পুলিশ কে খালি হাতেই ফিরতে হয়। স্থানীয়দের অনেকেই অভিযোগ করেছেন, পুলিশের কাছে খবর থাকা উচিত ছিল যে এই এলাকার বাজি কারখানা গুলো দীর্ঘদিন বন্ধ হয়ে পড়ে আছে। কিন্তু সঠিক তথ্য না থাকায় গতানুগতিক অভিযানে চলে আসে পুলিশ আধিকারিকরা। 

বিজ্ঞাপন

Advertisement