ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: বর্ধমান রমনা বাগান মিনি জু থেকে শুক্রবার প্রায় ৯০ টি স্পটেড ডিয়ার (চিত্রা বা চিতল হরিণ) কে পাঠানো হলো বক্সা অভয়ারণ্যে। বনদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এই মুহূর্তে ১৪০ টি স্পটেড ডিয়ার রয়েছে রমনা বাগান মিনি জু তে। সেখান থেকেই প্রায় ৮০ থেকে ৯০টি হরিণ কে সরিয়ে পাঠানো হলো বক্সার জঙ্গলে। এরপরেও প্রায় ৫০টি চিতল হরিণ রমনা বাগানে থাকছে। শুক্রবার এই হরিণগুলোকে বন দপ্তরের নির্দিষ্ট একাধিক গাড়িতে করে বিশেষ পদ্ধতিতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।
যদিও এই মুহূর্তে রমনা বাগানে নতুন কোনো বন্য প্রাণী নিয়ে আসা হচ্ছে না বলেই বিভাগীয় বনাধিকরিক নিশা গোস্বামী জানিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, রমনা বাগানের পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ চলছে। তবে নতুন পশু পক্ষী নিয়ে আসার বিষয়ে কিছু প্রস্তাব পাঠানো রয়েছে। পরিকাঠামোগত কাজ শেষ হলে তারপর পর্যবেক্ষকেরা পরিদর্শন করে ঠিক করবেন নতুন কোন পশু পক্ষী কে বর্ধমানে পাঠানো হবে।
প্রসঙ্গত, চিত্রা বা চিতল হরিণের প্রজননের জন্য নির্দিষ্ট কোন সময় নেই। উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন সময়ে এই প্রজাতির হরিণ বংশবৃদ্ধি করে। তবে বর্ষার আগে যখন সবুজ ঘাসের সমারোহ ঘটে এবং গাছের চারা ও লতা-পাতায় বন ছেয়ে যায় তখনই বাচ্চা প্রসবের প্রকৃষ্ট সময়। প্রজনন ঋতুতে পুরুষ চিত্রা হরিণ উত্তেজিত হয় ও দলে একাধিক পুরুষ হরিণ থাকলে তারা একের সাথে অপরের শিং ঠেকিয়ে দ্বন্দ্বযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। প্রচন্ড লড়াইয়ের সময় অনেক সময় শিং ভেঙে যায় বা খসে পড়ে। চিত্রা হরিণী ২১০-২২৫ দিন গর্ভধারণের পর একটিমাত্র বাচ্চা প্রসব করে। শিশু হরিণ ৬ মাস পর্যন্ত মা হরিণের স্তন পান করে।
চিত্রা হরিণের দেহ লালচে বাদামী লোমযুক্ত চামড়া দ্বারা আবৃত যাতে সাদা সাদা ফোঁটা দেখা যায়। ফোঁটাগুলো ইতস্ততঃ বিক্ষিপ্ত না থেকে আনুভূমিক রেখার উপর অনিয়মিতভাবে বিন্যাস্ত রয়েছে বলে মনে হয়। গলার নিচে, পেট, লেজের নিচে ও চার পায়ের ভেতরের চামড়ার বর্ণ সাদা। হাঁটু থেকে পায়ের খুর অবধি হাল্কা সাদা বা ধূসর রং এর থাকে। এদের রেখা পিঠ দিয়ে লেজ পর্যন্ত চলে গিয়েছে। পুরুষ হরিণের রেখাটি অধিক দৃশ্যমান আর গাঢ় হয়।
পূর্ণবয়স্ক চিত্রা হরিণের কাঁধ পর্যন্ত উচ্চতা ৩০ থেকে ৩৮ ইঞ্চি হয়। দেহ লম্বায় ৪২ থেকে ৫৫ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়। লেজের দৈর্ঘ্য ৮ থেকে ১২ ইঞ্চি। ওজন ৭৫ থেকে ১০০ কেজি (১৬৫ থেকে ২২০ পাউণ্ড) পর্যন্ত হয়। পুরুষ হরিণের উচ্চতা ও ওজন স্ত্রী হরিণের চেয়ে বেশি হয়। কেবলমাত্র পুরুষ হরিণের শিং থাকে। সাধারণ শিঙের দৈর্ঘ্য ২২ থেকে ২৭ ইঞ্চি হলেও কোন কোন ক্ষেত্রে ৭৫ ইঞ্চি (প্রায় আড়াই ফুট) পর্যন্তও হয়।
শিং শাখা-প্রশাখা যুক্ত, সর্বমোট তিনটি শাখা দেখা যায়। হরিণের শিং অনেকসময় পড়ে যায় আর আবার গজায়। শিং গজানো এবং শিং পড়ে যাবার সময়সীমা এক অঞ্চলে একেক রকম। বয়স এবং খাদ্যের উপরও শিং বেশি দিন থাকা বা পড়ে যাওয়া বা লম্বা হওয়া নির্ভর করে। পুরুষ হরিণের ঘাড় সরু ও বুক তুলনামূলক স্ফীত থাকে। পুরুষ হরিণের মুখে গাঢ় চিহ্ন থাকে যা দ্বারা এদের বয়সও নির্ধারণ করা যায়।