ভাড়াটিয়ার তথ্য নেই, বর্ধমানে এবার নকল নোট ও ডলার তৈরীর কারখানার হদিশ, গ্রেপ্তার ৩, চাঞ্চল্য

Souris  Dey

Souris Dey

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: ফের খবরের শিরোনামে বর্ধমান শহরের খাগড়াগড় সংলগ্ন এলাকা। এবার খাগড়াগড় লাগোয়া মাঠপাড়া এলাকার শেখ সিরাজুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির বাড়ি ভাড়া নিয়ে নকল টাকা ও বিদেশি ডলার তৈরির কারখানা চালানোর হদিস পেল বর্ধমান থানার পুলিশ। গোপন সূত্রে পাওয়া খবরের সূত্র ধরে গত কয়েকদিন নজরদারি চালানোর পর বৃহস্পতিবার বর্ধমান থানার প্লেল ক্লথ বা পিসি পার্টির অফিসারেরা বমাল ধরে ফেলে তিন জন জাল নোট কারবারি কে।ধৃতদের নাম গোপাল সিং, দীপঙ্কর চক্রবর্তী ও বিপুল সরকার। 

বিজ্ঞাপন

পুলিশ সুপার কামনাশিস সেন বলেন,”ঘরের ভিতর থেকে ১২হাজার টাকার জাল নোট উদ্ধার করেছে পুলিশ। এছাড়াও পাঁচশো টাকার নোট ছাপানোর একাধিক ডাইস, একটি টাকা গোনার যন্ত্র, কিছু মেশিন, সাদা কাগজ, কিছু আই কার্ড, পাউডার ও ক্যামিক্যাল বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ।” পুলিশ জানিয়েছে, আপাতত যে ঘরে এই নোট ছাপার কাজ চলত, সেই ঘরটি সিল করে দেওয়া হয়েছে। ধৃতদের শুক্রবার আদালতে তুলে আরও তথ্য জানতে ধৃতদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানানো হবে। এদিকে খাগড়াগড় কান্ড থেকে শিক্ষা না নিয়ে ফের বাড়িওয়ালাকে এবং এলাকাবাসী দের অন্ধকারে রেখে বাড়ি ভাড়া নিয়ে জাল নোট ছপানোর কারবার চালানোয় রীতিমত শোরগোল পড়েছে গোটা এলাকা জুড়ে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, অভিযানে মোট ১২হাজার টাকা উদ্ধার হয়েছে। যাতে ২৪টি নকল ৫০০টাকার নোট রয়েছে। নকল টাকা ছাপানোর জন্য কাগজের চল্লিশ টি বান্ডিল বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। এছাড়াও আমেরিকান ব্যাঙ্ক নোট ছাপানোর দুটি ভিন্ন সাইজের জাল ডাইস উদ্ধার হয়েছে। সিবিআই ও অ্যান্টি করাপশন ফাউন্ডেশন এর জাল পরিচয়পত্র, কিছু রাসায়নিক এবং  নকল টাকা ছাপানোর সরঞ্জাম, কয়েকটি মোবাইল এবং সিম উদ্ধার করা হয়েছে। সমস্ত জিনিস বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।  

পুলিশ প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছে, ধৃত দীপঙ্কর চক্রবর্তীর বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার বাগদা থানার পাথুরিয়া কলোনী এলাকায়। গোপাল সিং এর বাড়ি বর্ধমান থানার লোকো মোড়ের কাছে কালিতলা এলাকায় এবং বিপুল সরকারের বাড়ি শক্তিগড় থানার বড়শুলের বামুনপুকুর পাড়ায়। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সেখ সিরাজুল ইসলামের বাড়িতে অসুস্থ স্ত্রী ও বৃদ্ধা মা কে নিয়ে প্রায় ছয় মাস ধরে ভাড়া নিয়ে থাকছিল গোপাল সিং। পাড়ার লোকেদের গোপাল সিং জানিয়েছিল সে বিভিন্ন লাইসেন্স, কার্ড ইত্যাদি তৈরির কাজ করে। বেশ ধোপদুরস্ত জামাকাপড় পড়েই এলাকায় তাকে দেখা যেত। 

স্বাভাবিকভাবেই এলাকার মানুষের মধ্যে সেইভাবে সন্দেহ তৈরি হয়নি। তবে স্থানীয় বেশ কয়েকজন জানিয়েছেন, মাঝে মধ্যে বাইরের কিছু লোক এই বাড়িতে আসা যাওয়া করতো। বৃহস্পতিবার পুলিশ এই বাড়ি থেকে জাল নোটের কারবারি তিনজনকে গ্রেপ্তারের পর কার্যত আতঙ্ক ছড়িয়েছে এলাকা জুড়ে। কারণ খাগড়াগড় কাণ্ডে অভিযুক্তরাও কাপড়ের ব্যবসার আড়ালে সেখানে বাড়ি ভাড়া নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে জঙ্গি কার্যকলাপ চালিয়ে গেলেও প্রতিবেশীরা কোন টের পায়নি। আর তারপরের ঘটনা আজও এলাকার বাসিন্দাদের কাছে বিভীষিকা। 

এদিকে বাদশাহী রোডের মাঠপাড়া এলাকার বাসিন্দা সেখ সিরাজুল ইসলামের বাড়ি বর্ধমান পুরসভার ১নং ওয়ার্ডের মধ্যে, নাকি সরাইটিকর পঞ্চায়েতের মধ্যে পড়ে তা নিয়ে দেখা দিয়েছে বিভ্রান্তি। এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য শেখ ফিরোজ জানিয়েছেন, এই এলাকা পুরসভার লাগোয়া। খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে ওই ব্যক্তির বাড়ি পঞ্চায়েতের মধ্যে কিনা। অন্যদিকে বর্ধমান পুরসভার ১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুমিত শর্মা জানিয়েছেন, যে বাড়ি থেকে পুলিশ জাল নোট কারবারের হদিস পেয়েছে এবং তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে সেই সেখ সিরাজুল ইসলামের বাড়ি সরাইটিকর পঞ্চায়েতের অন্তর্ভুক্ত। ফলে খাগড়াগড় কান্ডের মতো জঙ্গি কার্যকলাপের ঘটনার পরেও এলাকার বাড়িওয়ালারা ভাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে এখনও যে সচেতন হয়নি সেবিষয়ে কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন পঞ্চায়েত সদস্য সেখ ফিরোজ। 

তিনি জানিয়েছেন, এলাকার এক শ্রেণীর বাড়িওয়ালা বেশি টাকা রোজগারের তাগিদে সঠিক পরিচয় পত্র না নিয়েই এমনকি বর্ধমান থানায় ভাড়াটিয়া দের কোনো তথ্য না জানিয়েই ভাড়া দিয়ে দিচ্ছেন। ফলে বিপদের আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। তিনি এও বলেন, ” জনপ্রতিনিধি হিসেবে এই ব্যাপারে কিছু বলতে গেলে এলাকাবাসীদের একাংশই প্রতিবাদ করতে শুরু করেন। ফলে জেলা পুলিশের দেওয়া নির্দেশ অমান্য করেই এলাকার বহু বাড়িতে বহিরাগতরা ভাড়া নিয়ে থাকার সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে। তবে আমরাও এবার এলাকাজুড়ে মাইকিং করে ভাড়াটিয়াদের তথ্য জানানোর জন্য প্রচার চালাবো। পুলিশের কাছে সহযোগিতা চাইবো।”

পুলিশি নজরদারি প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার বলেন, ‘যার বাড়িতে এই অবৈধ কারবারের হদিস পাওয়া গেছে এবং পুলিশকে ভাড়াটিয়া দের তথ্য না জানানোয় তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেবে পুলিশ। পাশাপাশি আগামীকাল থেকেই এলাকায় বর্ধমান থানার আই সি নিজে আবারও প্রচার চালিয়ে সতর্ক করবেন। তবে পুলিশের নজরদারি ছিল বলেই পুলিশ দ্রুত এই জাল নোট কারবারের হদিস পেয়েছে।’ এদিকে বারবার বর্ধমান শহরের খাগড়াগড়  ও সংলগ্ন এলাকা থেকে জঙ্গি কারবার বা জাল নোট চক্রের হদিস খুঁজে পাওয়ায় পুলিশি নজরদারি নিয়েও প্রশ্ন তুলছে শহরবাসীর একাংশ।

আরো পড়ুন