---Advertisement---

মারণ নেশায় ডুবছে বর্ধমানের যুব সমাজ, হেলদোল নেই রাজনৈতিক দাদাদের

Souris Dey

Published

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: নেশায় ডুব দিয়েছে আজকের যুব সমাজ। দেখেও না দেখার ভান সমাজ রক্ষীদের। দাদাদের দৌলতে গোটা বর্ধমান শহর জুড়েই চলছে দেদার নেশার দ্রব্য বিক্রি। কিন্তু তার জন্য কোনো হেলদোল নেই তথাকথিত রাজনৈতিক নেতাদের। অথচ কমবেশি প্রতিটি রাজনৈতিক দলেরই যুব সংগঠন রয়েছে। একটা সময় অপসংস্কৃতির অভিযোগ তুলে খোদ বর্ধমানের সংস্কৃতি লোকমঞ্চে মিস জোজোর অনুষ্ঠান রুখে দিয়েছিল বামেদের সেই যুব সংগঠন ডিওয়াই এফ আই। কমবেশী বাম ছাত্র সংগঠন এসএফআইও কলেজে কলেজে স্কুলে স্কুলে ছাত্র সমাজকে অপসংস্কৃতির হাত থেকে বাঁচাতে লোকদেখানো লড়াই করেছেন। কিন্তু বর্তমান সময়ে সে সবই অতীত। এখন গোটা শহর জুড়েই দিনের আলো কমতে না কমতেই যুব সমাজ ঢলে পড়ছে নেশার কবলে। আর ক্রমবর্ধমান এই ঘটনায় রীতিমত নাভিশ্বাস উঠছে সাধারণ থেকে উচ্চবিত্ত সংসারের অভিভাবকদের। ক্রমশই ভিড় বাড়ছে নেশামুক্তি কেন্দ্রে। আর প্রশাসনের কাছে নাকি এইনিয়ে তেমন কোনো অভিযোগই নেই।

বিজ্ঞাপন

বর্ধমানের একাধিক অভিভাবক জানিয়েছেন, বাবা-মাদের এখন একটা সন্তান। ফলে সন্তান তা সে ছেলে অথবা মেয়ে যাই হোক না কেন তারা যা চাইছে তাই তাদের হাতে তুলে দিচ্ছে। আর সেই সুযোগটাকেই কাজে লাগাচ্ছে আজকের যুব সমাজ। কারা যেন প্রায়ই বলেন যুবরাই দেশের ভবিষ্যৎ! কিন্তু বর্ধমান শহরের উল্লাস মোড় থেকে শহরের অলিগলি হয়ে নবাবহাট পর্যন্ত চোখ খুলে লক্ষ্য করলেই নজরে আসবে সদ্য কৈশোর পেরিয়ে যৌবনে পা রাখা অসংখ্য যুবক যুবতীদের চায়ের বা পান,বিড়ি,সিগারেটের দোকানে নিত্য সকাল সন্ধ্যায় ভিড় করে আড্ডা মারতে। এদেরই মধ্যে কিছুজনের এই আড্ডার ঠেকের ঠিকানা ঘন ঘন বদল হয়। তবে সবটাই সতর্কভাবে নেশা করার জন্যই। এদের সতর্ক করার জন্যও আছে ‘উপযুক্ত’ দাদারা। তাদের নাকি অনেক যোগাযোগ! স্বাভাবিকভাবেই ভরসা পায় উঠতি যুবরা। এমনকি পুলিশি ধরপাকড়েরও বালাই নেই। যদিও পুলিশের কাছে সেইভাবে কোনো অভিযোগই নেই। কিন্তু শহরবাসীর একাংশের অভিযোগ, শহরের অলিতেগলিতে কোথাও সামনাসামনি তো কোথাও গোপনে দেদার বিক্রি হচ্ছে গাঁজা, হেরোইন, চরস এর মত মারাত্মক মাদকদ্রব্য। আধুনিক প্রযুক্তির এই যুগে আবার এই অবৈধ মাদক কারবারীরা কাস্টমারদের ভাল সার্ভিস দিতে হোম ডেলিভারীরও ব্যবস্থা রেখেছে। অর্ডার ফোন মারফত দিলেই পৌঁছে যাবে খদ্দেরের কাছে। ক্যাশ অন ডেলিভারি।

উল্লেখ্য যুব সমাজের এই ‘মন্দ’ দেখার জন্য কোনো রাজনৈতিক দলের যুব সংগঠনেরও সামান্যতম হেলদোল নেই। তারা নাকি দলের উচ্চ নেতৃত্বের নির্দেশে নিজ নিজ দলের কর্মসূচি পালন করেন। অন্ন্যদিকে উঠতি এই যুবক যুবতীদের লাগামহীন,বিশৃঙ্খল জীবনযাপন আর মানসিকতা নিয়ে অতিষ্ঠ, তিতিবিরক্ত খোদ এই সমস্ত ছেলেমেয়েদের পরিবারের সদস্যরা। লোকলজ্জার ভয়ে যেমন তাঁরা তাঁদেরই সন্তানের বিরুদ্ধে কাউকে কিছু বলতে পারছেন না, অন্যদিকে ছেলে মেয়েদের নানান কীর্তিকলাপ, আর্থিক চাপের কাছে প্রতিদিন সংসারের ভারসাম্য একটু একটু করে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। বিশিষ্ট সমাজবিদ এবং মনোবিদদের মতে এই অবক্ষয়ের অন্যতম কারণ অবসাদ। এছাড়াও উচ্চাকাঙ্ক্ষা, বেকারত্ব, পারিবারিক ঝামেলা, একাকিকত্ব ইত্যাদি নানা বিষয় কাজ করে বর্তমান যুব সমাজের একশ্রেণীর ছেলে মেয়েদের বিপথগামী করতে। তাঁদের মতে ছেলে মেয়েদের এই ধরণের আচরণের পিছনে তাদের বাবা মায়েদেরও জীবনযাপন অনেকাংশে প্রভাব ফেলছে।

উল্লেখ্য, কেবলমাত্র শহরের উল্লাস মোড় থেকে নবাবহাট মোড়ের মধ্যেই এই নেশার দুনিয়া সীমাবদ্ধ নয়, বরং জাতীয় সড়কের ওপর চা, পান, বিড়ি, সিগারেটের গুমটিগুলোর অধিকাংশেই নিয়মিত বিক্রি হচ্ছে মদ,গাঁজা, হিরোইন, চরসের মতো মাদক দ্রব্য। ফলে শহরেরপরিচিত মুখেদের এড়িয়ে সহজেই, নিশ্চিন্তে,আরামে নেশার সামগ্রী জোগাড় করে নিচ্ছে এই যুব নেশারুরা। বিভিন্ন থানার গাড়ি নিয়মিত এই সমস্ত রাস্তায় টহল দিলেও কোন অজ্ঞাত কারণে নাকি তাদের নজরে কিছুই আসেনা। এমনিই মতামত ব্যক্ত করেছেন নেশাগ্রস্ত কিছু যুবক যুবতীদের পরিবারের আত্মীয়রা।
যুব সমাজের এই মাদকাসক্ত হয়ে পরা এবং উৎশৃঙ্খল জীবনযাপনের কারণ জানতে চাওয়া হলে পূর্ব বর্ধমান তৃণমূল যুব কংগ্রেসের জেলা সভাপতি রাসবিহারী হালদার জানিয়েছেন, প্রশাসন যথেষ্ট সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। তবে কোথায় কোথায় এই ধরণের মাদক বিক্রি হচ্ছে তার খোঁজ খবর পেলে দলের পক্ষ থেকে প্রশাসনকে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য জানানো হবে। অন্যদিকে এসএফআই-এর জেলা সম্পাদক অনির্বান রায়চৌধুরী জানিয়েছেন, ২০১১সালের আগে এই রাজ্যের হাল এইরকম ছিলোনা। কঠোর অনুশাসন ছিল। আর আজ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কোষাগারের আয় বাড়াতে খোদ যুব সমাজকে সুলভে ২০টাকার পাউচে মদ বিক্রি করছেন। স্বাভাবিকভাবেই মুখ্যমন্ত্রীর পুলিশ এই অবৈধ মাদক কারবারীদের বিরুদ্ধে যে কোনো ব্যবস্থা নেবে না তা বলাইবাহুল্য। তিনি জানান, যুবরা আজ বেকারত্বের জ্বালায় অবসাদে ভুগছেন। অনির্বান জানিয়েছেন, খুব শীঘ্রই এই ইস্যুতে তারা রাস্তায় নামবেন।

এদিকে ভারতীয় জনতা যুব মোর্চার পূর্ব বর্ধমান জেলার সভাপতি শুভম নিয়োগী জানিয়েছেন, এই সমস্যা শুধু এই জেলার নয়, সারা রাজ্যজুড়ে এই সমস্যার সৃষ্টির মূল মাথা খোদ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শিক্ষার হাল বেহাল, কর্মসংস্থান নেই, এদিকে ভুঁড়ি ভুঁড়ি মদের দোকানের লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে। সস্তায় যাতে মাদকাসক্ত হতে পারে তার জন্য ২০টাকার পাউচ মদ বাজারে নিয়ে আসা হয়েছে। তিনি জানান, বিজেপির যেখানে সরকার আছে সেই সব রাজ্যে মদ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই রাজ্যেও তারা ক্ষমতায় আসলে মাদক দ্রব্যের বিক্রি সম্পুর্ন নিষিদ্ধ করা হবে। শুভম জানিয়েছেন, এই নিয়ে আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই তারা জোরদার আন্দোলনে নামছেন। অন্যদিকে যুব কংগ্রেসের পূর্ব বর্ধমান জেলার সভাপতি গৌরব সমাদ্দার জানিয়েছেন, যুব সমাজের মাদকাসক্ত হয়ে পড়ার ঘটনা ভীষণ মারাত্মক। অবিলম্বে শহর জুড়ে প্রশাসনের অভিযান চালানো উচিত। অবৈধ মাদক কারবারীদের গ্রেফতার করা উচিত। তিনি জানিয়েছেন, আগামী ৪৮ঘন্টার মধ্যে দলের পক্ষ থেকে প্রশাসনের কাছে এই বিষয়ে স্বারকলিপি জমা দেওয়া হবে।
                                           ছবি – ইন্টারনেট
See also  ইদিলপুর থেকে কখনও বিনা চালানে, কখনও ভিন জেলার চালানে চলছে দেদার বালি পাচার, উদাসীন প্রশাসন
শেয়ার করুন 🤝🏻

Join WhatsApp

Join Now
---Advertisement---