---Advertisement---

বর্ধমান শহর জুড়ে করোনার প্রকোপ রুখতে প্রশাসনের নতুন নির্দেশিকা নিয়ে শহরবাসী ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিভ্রান্তি

Souris Dey

Published

বিজ্ঞাপন
ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: শেষমেশ পূর্ব বর্ধমান জেলায় এবং বিশেষত বর্ধমান পুর এলাকায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুতহারে ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় বুধবার থেকে একগুচ্ছ নয়া নির্দেশিকা জারী করল জেলা প্রশাসন। মঙ্গলবার পর্যন্ত গোটা জেলায় মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১৪৯৮ জন। এরমধ্যে কেবলমাত্র এদিনই জেলায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৫৪জন। যার মধ্যে বর্ধমান পুর এলাকাতেই আক্রান্ত হয়েছেন ২৪ জন। গোটা জেলায় এখনও পর্যন্ত করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৩৪জনের। 
এরই পাশাপাশি মঙ্গলবার মেমারী থানার পালসিট পুলিশ ক্যাম্পের ৪জন পুলিশ কর্মী, ২জন সিভিক ভলেণ্টিয়ার এবং একজন পুলিশের গাড়ির চালকও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এই ঘটনায় পুলিশ মহলে রীতিমত উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল অর্থাৎ সোমবার আরও দুজন পুলিশ কর্মী করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন। ফলে ২দিনে মোট ৯জন আক্রান্ত হলেন। 
এদিকে, করোনা সংক্রমণের ঘটনা বাড়তে থাকায় সোমবার রাতেই পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক বিজয় ভারতী নতুন একটি নির্দেশিকা জারী করেছেন। নির্দেশিকা অনুসারে বুধবার থেকে আগামী ৩১ আগষ্ট পর্যন্ত বর্ধমান পুর এলাকার ৩৫টি ওয়ার্ডের সমস্ত স্কুল, কলেজ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার নির্দেশ জারী করেছেন। একইসঙ্গে বর্ধমান শহরের বিভিন্ন বাজার, মার্কেট সহ দোকান খোলা বন্ধের জন্যও নির্দেশিকা জারী করা হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে রাজনৈতিক বা ধর্মীয় সমস্ত জমায়েতকেই বন্ধ করা হয়েছে। 
যদিও জেলাশাসকের এই নির্দেশিকাকে ঘিরে জনমানসে রীতিমত বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। চলতি সময়ে প্রায় প্রতিটি স্কুলেই মিড ডে মিলের খাবার দেওয়া শুরু হতে চলেছে বুধবার থেকেই। একইসঙ্গে নতুন ছাত্রছাত্রী যাঁরা একাদশ বা দ্বাদশ শ্রেণীতে উঠেছে তাঁদেরও ভর্তি প্রক্রিয়া চলছে। চলছে আগামী বছরের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের রেজিষ্টেশন প্রক্রিয়াও। যে প্রক্রিয়াকে আগামী ১৭ আগষ্টের মধ্যে সম্পূর্ণ করার নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য শিক্ষা বোর্ড। ফলে ৩৫টি ওয়ার্ডেই সমস্ত স্কুল বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার এই নির্দেশ নিয়ে রীতিমত দ্বন্দ্বে পড়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। 
যদিও এব্যাপারে এদিন জেলার অতিরিক্ত জেলাশাসক (শিক্ষা) হুমায়ুন বিশ্বাস জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত তিনি নির্দেশিকা দেখেননি। তাই এব্যাপারে তিনি কিছু বলতে পারবেন না। অন্যদিকে, বাজার দোকান খোলা নিয়েও যে নির্দেশিকা জারী করা হয়েছে তারই পাশাপাশি বর্ধমান শহরের বিসিরোডের দুপাশের দোকানগুলিকে ফের একদিন অন্তর পর্যায়ক্রমে খোলার নির্দেশও জারী করা হয়েছে। ফলে তা নিয়েও বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে ব্যবসায়ী মহলে। আর এই ব্যাপারে ব্যবসায়ী সংগঠন গুলির পক্ষ থেকে এদিনই লিখিতভাবে আপত্তিও জানানো হয়েছে জেলাশাসকের কাছে।
জেলা ব্যবসায়ী সুরক্ষা সমিতির পক্ষ থেকে এদিন জেলাশাসক কে দেওয়া স্বারকলিপি তে জানানো হয়েছে, সপ্তাহের প্রত্যেকদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সমস্ত ব্যবসা খোলা রাখা হোক। পাশাপাশি বিসি রোড ও জিটি রোডের দুপাশের দোকানপাট একদিন অন্তর খোলার নির্দেশিকা প্রত্যাহার করা হোক।কেবলমাত্র রাজ্যের নির্ধারিত লকডাউনের দিনগুলি বাদে। আর নয়তো সম্পূর্ণ লকডাউন করে দেওয়া হোক। কারণ যে কারণে বাজার খোলা বা বন্ধের সময়সীমা পরিবর্তন করা হয়েছে অর্থাৎ বেলাগাম করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে, তাতে কোনোভাবেই ভিড় নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। বরং এতে ব্যবসাদারদের প্রভুত ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।

জেলা ব্যবসায়ী সুরক্ষা সমিতির সম্পাদক বিশ্বেশর চৌধুরী জানিয়েছেন, শহরের ব্যবসায়ীদের সকলের সঙ্গে আলোচনা করে এই নতুন নির্দেশিকা পরিবর্তনের আর্জি জানিয়েছেন জেলাশাসকের কাছে। জেলার অন্য সংগঠন পূর্ব বর্ধমান চেম্বার অফ ট্রেডার্সের সম্পাদক চন্দ্রবিজয় যাদব জানিয়েছেন, গতকাল রাতে জেলা প্রশাসনের জারি করা নির্দেশিকা পাওয়ার পরই তাঁরা এব্যাপারে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তিনি এদিন জানিয়েছেন, বিভিন্ন বাজার এলাকা খোলা ও বন্ধের নতুন সময়সীমা জারি করার পাশাপাশি একদিন অন্তর দোকান খোলার যে সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে তাতে শহরের বেশিরভাগ ব্যবসায়ী আপত্তি জানিয়েছেন। আর তাই ব্যবসায়ীদের স্বার্থে এই নির্দেশিকা পরিবর্তনের জন্য তাঁরাও জেলাশাসকের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। 
এদিকে, খোদ বর্ধমান শহরের বাসিন্দাদের একাংশ প্রশাসনের এই নতুন নির্দেশিকা নিয়ে একপ্রকার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অনেকেই জানিয়েছেন, বিকেল ৫টার পর সমস্ত ব্যবসা বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়ার পর রাত ন’টা পর্যন্ত হোটেল এবং রেস্টুরেন্ট যদি খোলাই থাকে তাহলে কিভাবে রাস্তায় মানুষের ভিড় নিয়ন্ত্রণ করা যাবে! আবার ভোর ৪টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত চায়ের দোকান খোলা রাখার কারণ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। ফলে জেলা প্রশাসনের জারি করা নতুন নির্দেশিকা নিয়ে শহরবাসী তথা ব্যবসায়ী মহল ফের বিভ্রান্তির স্বীকার হতে চলেছে বলে মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল।  
See also  বর্ধমানে সরকারি গাড়ির ধাক্কা টোটো কে, গুরুতর জখম দুই মহিলা যাত্রী
শেয়ার করুন 🤝🏻

Join WhatsApp

Join Now
---Advertisement---