বিজ্ঞাপন
ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: রোগীকে অজ্ঞান না করেই রীতিমত ব্রেনের জটিল সফল অস্ত্রোপচার করে সাড়া ফেলে দিলেন বর্ধমানের গোদা হেল্থ সিটিতে অবস্থিত বেঙ্গল ফেথ হাসপাতালের চিকিৎসকরা। আর এই এওয়েক(স্বজ্ঞানে) ব্রেন সার্জারি কেবলমাত্র দক্ষিনবঙ্গেই বিরল নয়, গোটা দেশেই বিরল বলে চিকিৎসক মহল জানাচ্ছেন। স্বাভাবিকভাবেই খোদ বর্ধমান শহরের বুকে এই বেসরকারি হাসপাতালে এই ধরণের জটিল অস্ত্রোপচারে সাফল্য আসায় ভরসা যোগাচ্ছে রোগীদের।
বর্ধমান শহরের বেঙ্গল ফেথ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. ও পি গর্গ জানিয়েছেন, গত ২৪ জুলাই বর্ধমানের গলসী থানার মনোহর সুজাপুর এলাকার বাসিন্দা ফজলে হক পেশায় ছুতোর মিস্ত্রী রীতিমত আশঙ্কাজনক অবস্থায় বিভিন্ন হাসপাতাল, নার্সিংহোম ঘুরে তাঁদের কাছে আসেন। কিন্তু চলতি সময়ে করোনা উদ্ভুত পরিস্থিতিতে করোনা পরীক্ষা ছাড়া এই অপারেশন করা অসুবিধাজনক ছিল। কিন্তু রোগীর অবস্থা এতটাই সংকটজনক ছিল যে দ্রুত অপারেশন না হলে কোনো অঘটন ঘটতে পারত।
ডা. গর্গ জানিয়েছেন, এরপরই নিউরো স্পাইন কনসালট্যাণ্ট ডা. নভনীত কুমারকে নিয়ে দ্রুততার সঙ্গে রোগীর অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু এই অস্ত্রোপচার করা হয় কোনোরকম এ্যানাসথেটিক ছাড়াই। শুধুমাত্র ব্রেনের বিশেষ কিছু স্নায়ু কে অবশ করে দিয়ে সম্পূর্ণ স্বজ্ঞানেই রোগীর মাথার ডানদিক থেকে বার করা হয় রক্তজমাট অংশকে। ডা. গর্গ জানিয়েছেন, প্রায় এক ঘন্টার এই এওয়েক ক্রানিওটমি করার সময় রোগী সম্পূর্ণ সচেতন ছিলেন। বলেছিলেন কথাও। এমনকি তিনি হাত-পা নেড়ে তাঁর সুস্থতার কথা জানান দিয়েছেন প্রতি মূহূর্তে।
ডা. গর্গ জানিয়েছেন, বর্ধমানে এই ধরণের অপারেশন আগে কখনও হয়েছে কিনা তাঁরা জানেন না। অন্যদিকে, ডা. নভনিত কুমার জানিয়েছেন, প্রতি মূহূর্তেই ব্রেনের ঝুঁকিপূর্ণ অস্ত্রোপচার নিয়ে গবেষণা চলছে। বর্তমানে এই স্বজ্ঞানে অস্ত্রোপচারে রোগীর ঝুঁকির পরিমাণ অনেকটাই কম হয় বলে ডা. কুমার জানিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, এক্ষেত্রে রোগী প্রতিমূহূর্তে তাঁদের সঙ্গে কথা বলায় রোগী কোনো অসুবিধা উপলব্ধি করছেন কিনা তা তাঁরা জানতে পারেন। ফলে আত্মবিশ্বাসও অনেক বেড়ে যায়।
অপরদিকে, এই সফল অস্ত্রোপচারের পর খোদ ফজলে হক জানিয়েছেন, কিছুদিন আগে দুপুরে খেতে বসার পর আচমকাই তিনি মাটিতে পড়ে যান। মাথায় আঘাত পান। এরপর গ্রামের একজন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকের কাছে যাওয়ায় তিনিই বর্ধমানের বেঙ্গল ফেথ হাসপাতালের খবর দেন। ফজলে হক জানিয়েছেন, দ্রুততার সঙ্গে তাঁকে বেঙ্গল ফেথ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।
তিনি জানিয়েছেন, অনেকেই তাঁকে বলেছিলেন, তাঁর এই অপারেশন বর্ধমানে করা সম্ভব নয়। এই ধরণের জটিল, ব্যয়বহুল অপারেশন দক্ষিণ ভারত বা ব্যাঙ্গালোরে হতে পারে। কিন্তু হাতের কাছেই বর্ধমানে এই হাসপাতালেই এই সফল অস্ত্রোপচার তাঁকে যেমন নতুন জীবন দান করেছে, পাশাপাশি তাঁর চোখ খুলে দিয়েছে। কারণ তিনি জানিয়েছেন, বেঙ্গল ফেথ হাসপাতালে না এলে তিনি জানতেই পারতেন না খোদ বর্ধমানে ঘরের কাছে এই ধরণের বিশ্বমানের চিকিৎসা পরিষেবা এবং চিকিৎসক রয়েছে।