বিজ্ঞাপন
ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: শুক্রবার দুপুরে বর্ধমান শহরের বিসিরোডে প্রকাশ্য দিবালোকে জনবহুল এলাকায় গোল্ড লোন সংস্থা থেকে সোনা লুট করে পালাবার সময় ডাকাতদলের গুলিতে গুরুতর জখম হন এক টোটো চালক। তুমুল চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে এই ঘটনায়। আর সেই ঘটনার পর ২৪ ঘন্টা কেটে গেলেও এখনও কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছিলো, সশস্ত্র দুষ্কৃতীরা সংখ্যায় প্রায় সাত জন ছিলো।
এদিকে, এই ঘটনার পর খোদ বর্ধমান শহরের ব্যবসায়ী মহলে রীতিমত আতংক দেখা দিয়েছে। কারণ এর আগেও খোদ বর্ধমান শহরের কয়েকটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে বোমাবাজি করা, দোকানের সামনে বোমা রেখে তোলার টাকা চাওয়ার মত ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু তারই মাঝে শুক্রবার যেভাবে দিনের বেলায় ডাকাতদল বিসিরোডের বেসরকারি গোল্ড লোন সংস্থায় ঢুকে কেজি কেজি সোনা নিয়ে চম্পট দিল এবং রীতিমত হিন্দি সিনেমার কায়দায় বাধাপ্রদানকারী এক টোটো চালকে গুলিবিদ্ধ করল তা নিয়ে রীতিমত আতঙ্ক ছড়িয়েছে বর্ধমান শহরের ব্যবসায়ী মহলে।
এদিকে, শুক্রবার সোনা নিয়ে চম্পট দেবার কিছুক্ষণ পরেই পুলিশ জানতে পারে আততায়ীরা খন্ডঘোষের বাদুলিয়ায় একটি পুকুরে ওই সোনার ব্যাগ ফেলে দিয়ে গেছে। সূত্র মারফৎ জানা গেছে, গোল্ড লোন সংস্থার ভল্টে যে ট্রে তে সোনার গহনা রাখা থাকে সেগুলিতে জিপিএস ট্র্যাকার লাগানো থাকে। দুষ্কৃতীরা এই রকম বেশ কয়েকটি ট্রে নিয়ে চম্পট দিয়েছিল বলে সংস্থার কর্মীদের অভিযোগ। সূত্রে জানা গেছে, লুট হওয়া সোনার পরিমান ২৯ কেজি ৫৮৭ গ্রাম। সূত্র মারফৎ এও জানা গেছে, ভল্টের বিভিন্ন লকার মিলিয়ে মোট সোনা ছিল ৩০কেজি ৫৮৭ গ্রাম। ডাকাত দল কোনো কারণে একটি লকার খুলতে না পারায় এক কেজি সোনা লুট করতে পারেনি।
জানা গেছে, ডাকাত দলের দুস্কৃতীদের উদ্দেশ্যেই ছিলো সোনা লুট করা। তাই সংস্থার বিভিন্ন লকারে প্রায় সাত লক্ষ টাকা থাকলেও সেই টাকা তারা নেয়নি। আর সোনার ট্রে গুলির জিপিএস ট্র্যাকারের মাধ্যমে খবর পাওয়ার পরই শুক্রবার রাতে পুলিশ অভিযান চালায় বাদুলিয়ার ওই পুকুরে। কিন্তু রাতে কিছু পাওয়া যায়নি। এরপর শনিবার সকাল থেকেই ফের অভিযান চালানো হয়। পুকুরের পানা পরিষ্কার করে, সমস্ত জল বার করে তন্নতন্ন করে খোঁজা হয়। কিন্তু কিছু মাছ ছাড়া আর কিছু মেলেনি।
এদিকে, এব্যাপারে জেলা পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, এই ঘটনার পিছনে আন্তরাজ্য কোনো চক্র রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আততায়ীদের ধরতে এই রাজ্যের সমস্ত থানাকে সহ অন্য রাজ্যকেও জানানো হয়েছে। অপরদিকে,শনিবার এই ঘটনায় ফ্রিঙ্গার প্রিন্ট বিশেষজ্ঞরা বিসি রোডের ওই গোল্ড লোন সংস্থায় আসেন। তাঁরা কিছু নমুনাও সংগ্রহ করেন। সংস্থার সিকিউরিটি গার্ড সহ অন্যান্য কর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জানবার চেষ্টা করেন ঘটনার দিন ঠিক কিভাবে কি হয়েছিলো। এদিকে দুস্কৃতিরা কোন পথে পালিয়েছে তারও অনুসন্ধান চালাচ্ছে জেলা পুলিশ।
সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার দিন ডাকাতদল ভল্ট থেকে সোনা লুট করার আগেই ভুল জায়গায় হাত বা পা পরে যাওয়ায় ভল্টের সাইরেন বেজে ওঠে। আর তাতেই ভয় পেয়ে প্রথমে পালিয়ে যাবার চেষ্টা করে দুষ্কৃতীরা। কিন্তু ডাকাতদলের একজন সংস্থার ম্যানেজার কৌশিক ঘোষের মুখে বন্দুকের নল ঢুকিয়ে দিয়ে হুমকি দিয়ে বলে সাইরেন বন্ধ করার জন্য। আর এরপরেই সাইরেনের তার ছিঁড়ে দেয় দুষ্কৃতীরা। ভল্টের চাবি নিয়ে লকারের ভিতর থেকে একের পর এক ট্রে বার করে ব্যাগে ঢুকিয়ে নিয়ে ডাকাতদলের দুজন সিঁড়ি দিয়ে নেমে পালিয়ে যায়। বাকি দুষ্কৃতীরা এরপর এক এক করে নীচে নেমে পালাতে থাকে।
শেষ দুজন যখন পালাবার জন্য সিঁড়ি দিয়ে নীচে নামছিল সেই সময়ই এই সংস্থার প্রাক্তন সিকিউরিটি গার্ড তথা বর্তমানে টোটো চালক হিরামন মন্ডল সংস্থায় তাঁর নিজের কাজে উঠছিলেন। তাঁর সন্দেহ হওয়ায় সবুজ জামা পরিহিত এক দুস্কৃতিকে বাধা দেন। আর এরপরই সেই দুস্কৃতি পালাবার জন্য গুলি চালায় বলে অভিযোগ। এমনকি সিঁড়ি দিয়ে নেমে বাইকে চেপে পড়লেও স্থানীয় এক বয়স্ক মানুষ ওই দুস্কৃতিকে আটকানোর চেষ্টা করেন। তখনই ফের গুলি চালায় ওই দুষ্কৃতী। আর তাতেই আহত হন ওই টোটো চালক। এরপরই দুষ্কৃতী নিজেকে বাঁচাতে বন্দুকের বাঁট দিয়ে হিরামন মন্ডলের মাথা ফাটিয়ে দেয় এবং একটি পালসার ২২০ বাইক নিয়ে চম্পট দেয়।