বিজ্ঞাপন
ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: বর্ধমান শহরের তেজগঞ্জ এলাকায় বৃদ্ধ খুনের ঘটনায় সিআইডির ফিঙ্গারপ্রিণ্ট বিশেষজ্ঞদের পর এবার সম্ভাব্য খুনীর ছবি এঁকে তল্লাশি শুরুর কাজ শুরু করতে চলেছে পূর্ব জেলা পুলিশ। উল্লেখ্য, গত ২ জুলাই বিকাল প্রায় ৪টে নাগাদ বর্ধমান শহরের তেজগঞ্জ হাইস্কুল পাড়ার বাসিন্দা গোরাচাঁদ দত্ত (৮৪)কে বাড়ির ভিতরে ঢুকে নৃশংসভাবে খুন করে পালায় এক দুষ্কৃতী। এই ঘটনায় শহর জুড়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। দেরি না করে দ্রুত খুনের তদন্তে নেমে পড়ে জেলা পুলিশ। পুলিশ কুকুর নিয়ে এসে চষে ফেলা হয় এলাকা। যদিও খুনের ঘটনার দশ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো খুনির হদিস পায়নি পুলিশ।
মৃত গোরাচাঁদ দত্তের স্ত্রী মীরা দত্ত জানিয়েছেন, ঘটনার দিন সকালেই তিনি বেড়িয়ে যান। বিকাল ৪ টে নাগাদ তাঁকে ভগ্নীপতি বাড়ির সামনে নামিয়ে চলে যান। এরপর বাড়িতে ঢুকতে গিয়েই দেখেন বাড়ির গেট খোলা। দরজার সামনে টিভিটা রয়েছে দেখে তিনি ভেবেছিলেন টিভির মিস্ত্রি এসেছে হয়তো। এরপর বাড়ির ভেতর ঢুকতে যেতেই হলুদ গেঞ্জি পরিহিত এক অপরিচিত যুবক ঘর থেকে বেড়িয়ে যান। তাকে কি হয়েছে জিজ্ঞাসা করায় ওই যুবক তাঁকে জানান, ভেতরে গিয়ে দেখুন কি হয়েছে। এরপরেই সে বেড়িয়ে যায়। মীরা দেবী ঘরে ঢুকতেই দেখেন রক্তাক্ত গোরাচাঁদবাবুর মৃতদেহ পড়ে রয়েছে।
কি কারণে এই খুন মীরাদেবী বলতে পারেননি। মৃতের পরিবারের লোকজন জানিয়েছেন, প্রায়ই মীরাদেবী তাঁর আত্মীয়ের বাড়ি অথবা কোথাও না কোথাও চলে যেতেন। তখন গোরাচাঁদবাবু একাই থাকতেন। এমনকি গোরাচাঁদবাবু কখনই কোনো অপরিচিত কাউকে বাড়িতে ঢুকতে দিতেন না বলে পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই সেই দিন খুনি কিভাবে বাড়িতে ঢুকলেন? খুনী কি গোরাচাঁদবাবুর পরিচিত ছিলেন? এইসব প্রশ্ন নিয়েও ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে।
৩জুলাই বৃদ্ধ খুনের তদন্তের স্বার্থে সিআইডির ফিঙ্গার প্রিন্ট বিশেষজ্ঞ শৈবাল দত্তের নেতৃত্বে একটি টিমও আসে। তাঁরা বাড়ির মধ্য থেকে কিছু নমুনা সংগ্রহ করেন। প্রাথমিক অবস্থায় আলমারীতে মেলে ফিঙ্গার প্রিন্টের দাগ। উল্লেখ্য, এই খুনের ঘটনার পর মীরাদেবীর ভাইঝি সুপর্ণা সেনগুপ্ত জানিয়েছিলেন, ঘরের আলমারি তছনছ অবস্থায় দেখেছিলেন তিনি। যদিও মৃতদেহ ময়নাতদন্তে পাঠানোর পরই ওই ঘরটিকে সিল করে দেয় পুলিশ। এদিকে, শনিবার এই ঘটনার তদন্তে সিআইডির ৩ সদস্যের একটি ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ দল দত্তবাড়িতে আসেন। তাঁরাও কিছু নমুনা সংগ্রহ করেন।
যদিও সংবাদ মাধ্যমের কাছে তাঁরা মুখ না খুললেও এদিন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের আসার খবরে হাজির ছিলেন মৃত গোরাচাঁদ দত্তের ছেলে তুহিন দত্ত। মীরাদেবী এদিন জানিয়েছেন, তদন্তকারী অফিসাররা তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছেন কোনো জিনিসপত্র খোয়া গেছে কিনা। কিন্তু ওই ঘটনার পর পুলিশ গোটা ঘরটিকেই সিল করে দেওয়ায় তিনি ওই ঘরে ঢুকতেই পারেননি। গোরাচাঁদ বাবুর ছেলে তুহিন দত্ত দুর্গাপুরের এনআইটির সিনিয়র টেকনিসিয়ান। তিনি জানিয়েছেন, এখনও অপরাধীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে না পারলেও তাঁরা পুলিশী তদন্তে খুশী।
তিনি জানিয়েছেন, এদিন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা আততায়ীর ছবি আঁকার কথা বলেছেন। এব্যাপারে তিনি নিজেও এই ধরণের ছবি আঁকার কাজ জানেন। তাই তিনিও সেই ছবি আঁকার কাজে পুলিশকে সাহায্য করতে চান। এদিন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের টীমের পাশাপাশি হাজির ছিলেন বর্ধমান থানার আইসি পিণ্টু সাহা এবং থানার সেকেণ্ড অফিসার আকাশ মুন্সীও। জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মীরা দেবী এদিনও খুনির প্রকৃত চেহারার বর্ণনা দিতে পারেননি। ফলে খুনির চেহারার নকশা আঁকার ক্ষেত্রেও সমস্যা তৈরি হয়েছে বলে জানা গেছে।