বিজ্ঞাপন
ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,কালনা: অবশেষে চেন কিলার
কামরুজাম্মান সরকার কে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিলেন পূর্ব বর্ধমান জেলার কালনা মহকুমা আদালতের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক। গত বছরের ৩০ মে কালনার সিঙ্গেরকোন এলাকার এক নাবালিকা কে ধর্ষণ ও নৃশংস ভাবে খুনের অভিযোগে অভিযুক্ত কামরুজাম্মানের বিরুদ্ধে মামলা চলছিল। গত শুত্রুবার ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৪৮ / ৩৭৬A / ৩০২ এবং পকসো আইনের ৬ ধারায় অভিযুক্ত কামরুজাম্মান সরকার কে দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন বিচারক। আর আজ অর্থাৎ সোমবার সেই মামলার চুড়ান্ত সাজা ঘোষণা করা হয়।
কালনা আদালত সূত্রে জানা গেছে, ৩০২ ধারায় মৃত্যুদন্ড, ৩৭৬A ধারায় যাবজ্জীবন, ৪৪৮ ধারায় এক বছরের কারাদণ্ড এবং পকসো আইনের ৬ ধারায় অভিযুক্তের সাজা ঘোষণা করেন বিচারক। পাশাপাশি আদালত সূত্রে জানা গেছে, এই মামলা চলাকালীন ৩৫জন সাক্ষীর বয়ান রেকর্ড করা হয়েছে। প্রায় ৫৫টি আলামত অর্থাৎ বাজেয়াপ্ত করা মালপত্র পরীক্ষা করা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই এই রায় ঘোষণার পর খুশি মৃত ছাত্রীর মা।
উল্লেখ্য, একা থাকার সুযোগ নিয়ে বাড়িতে ঢুকে কালনার সিঙ্গেরকোন এলাকার এক নাবালিকা ছাত্রীকে গত বছর ৩০ মে প্রথমে ধর্ষণের চেষ্টা করে কামরুজ্জামান, বাধা দেওয়ায় ওই ছাত্রীকে একটি ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথায় নৃশংস ভাবে কোপ মারে ও গলায় লোহার শিকল পেঁচিয়ে ধরে। এরপর নাবালিকা মৃত ভেবে সেই অবস্থায় ফেলে চম্পট দেয় অভিযুক্ত কামরুজ্জামান। আশংকাজনক অবস্থায় নাবালিকা ছাত্রীকে প্রথমে কালনা মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। চিকিৎসা চলাকালীন কয়েকদিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ার পর শেষে মৃত্যু হয় ওই ছাত্রীর।
আর এর পরই নড়েচড়ে বসে কালনা থানার পুলিশ সহ জেলা পুলিশ। শুরু হয় খুনির তল্লাশি,খুনিকে ধরতে বিভিন্ন থানায় তথ্য পাঠায় কালনা পুলিশ। শুরু হয় নাকা চেকিং। ২০১৯ সালের ২জুন কালনার কাঁকুরিয়া গ্রামে কর্তব্যরত অবস্থায় দুজন সিভিক ভলান্টিয়ার সন্দেহজনক এক বাইক আরোহীকে আটক করেন। এরপর বিভিন্ন সিসি টিভি ফুটেজ পরীক্ষা করে এবং আটক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ উক্ত খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত হিসেবে কামরুজ্জামান সরকারকে গ্রেফতার করে।
সেই বছরের ৩ জুন অভিযুক্তকে কালনা আদালতে পেশ করে পুলিশ। ছাত্রী খুনের ঘটনার কিনারা করতে পুলিশ অভিযুক্তকে নিজেদের হেপাজতে চেয়ে আদালতে আবেদন জানায়। ধীরে ধীরে ছাত্রী খুনের কিনারা হয়, পাশাপাশি খুনের কথা স্বীকার করে নেয় অভিযুক্ত কামরুজাম্মান। বাড়িতে একাকী মহিলাদের ধর্ষণ ও খুনই ছিল কামারুজ্জামানের মূল উদ্দেশ্য বলে খোদ অভিযুক্ত কালনা পুলিশ কে জানায়। এমনকি তদন্তে উঠে আসে শুধু এই ঘটনাই নয়, হুগলী সহ পূর্ব বর্ধমান জেলার বিভিন্ন থানা এলাকায় কামরুজ্জামান সরকার একের পর এক অপরাধ সংগঠিত করেছিল।
এদিন অভিযুক্তের সাজা ঘোষণার পরই পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখার্জী সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, মাত্র ১৩মাসের মধ্যে অভিযুক্তের সাজা ঘোষণা করেছেন মাননীয় বিচারপতি। তিনি জানিয়েছেন, অভিযুক্ত কামরুজ্জামান সরকারের বিরুদ্ধে মোট ১৫টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তারমধ্যে পূর্ব বর্ধমান জেলায় রয়েছে ৮টি মার্ডার কেস। একটি হুগলি জেলায়। ৮টির মধ্যে ২টি ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা রয়েছে। তার মধ্যে সিঙ্গেরকোন এলাকার এক নাবালিকা ধর্ষণ ও খুনের মামলায় সাজা ঘোষণা হয়েছে। এছাড়াও আরও ৬টি খুনের চেষ্টার মামলা চলছে।
পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, তদন্তে জানা গেছে প্রথম দিকে অভিযুক্ত কামরুজ্জামান সরকার শুধু একটি সাইকেলের চেন জড়িয়ে খুনের ঘটনা ঘটালেও পরবর্তীকালে খুনি এই ধরণ পাল্টে ফেলে। পরের দিকে যৌন নির্যাতনের পাশাপাশি ভারী কোন বস্তু দিয়ে মাথায় আঘাত করে গলায় চেন পেঁচিয়ে খুন করতো অভিযুক্ত।