বিজ্ঞাপন
ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: খোদ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যখন দিনরাত জেগে আমফানের ক্ষতি মেটাতে প্রাণপাত পরিশ্রম করে চলেছেন আর তাঁরই পদাঙ্ক অনুসরণ করে দলীয় নির্বাচিত প্রতিনিধিরাও সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাইছেন, তখন অভিযোগ উঠেছে কতিপয় সরকারী আমলাদের
অসহযোগীতায় আর্ত মানুষের সাহায্য করতে গিয়ে কোনো সরকারি সাহায্যই পাচ্ছেন না তাঁরা। ফলে আমফানে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষদের কাছে পৌঁছনো যাচ্ছে না কোনো সরকারী সাহায্য। ক্ষতিগ্রস্থ মানুষরা জনপ্রতিনিধিদের কাছে গিয়ে সরকারী সাহায্য চাইলেও তাঁরা তা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগকে ঘিরে এবার ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ালো পূর্ব বর্ধমান জেলা জুড়ে।
এমনকি জনপ্রতিনিধি হিসাবে তাঁদের থাকার যৌক্তিকতা নিয়েই এবার উঠতে শুরু করল প্রশ্ন। আর এই প্রশ্নকে সামনে রেখেই গোটা রাজ্যের মধ্যে নজির সৃষ্টি করে মেমারী ১নং ব্লকের বাগিলা গ্রাম পঞ্চায়েতের এক তৃণমূল সদস্য সরাসরি পদত্যাগ পত্র পাঠিয়ে দিলেন। শুধু তাইই নয়, তাঁর মতই মেমারী ১নং ব্লকের অধীন আরও বেশ কয়েকটি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রায় ৭১ জন পঞ্চায়েত সদস্যও পদত্যাগের জন্য তৈরী হয়েছেন বলে দাবী করা হয়েছে।
বাগিলা গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য প্রলয় পাল জানিয়েছেন, সম্প্রতি আমফানে তাঁর সংসদ এলাকায় ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েন বেশ কিছু পরিবার। গোটা বিষয়টি তিনি জানান পঞ্চায়েত প্রধানকে। গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান বাগিলা গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৭টি সংসদের জন্য প্রথম দফায় প্রায় ২০০ ত্রিপল চান মেমারী ১-এর বিডিও বিপুল মণ্ডলের কাছে। কিন্তু তাঁকে দেওয়া হয় মাত্র ২২টি ত্রিপল। প্রলয়বাবু জানিয়েছেন, প্রধানের কাছ থেকে অপ্রতুল ত্রিপল পাওয়ার বিষয়টি জেনে তিনি বিডিওকে ফোন করলে বিডিও তাঁকে সরাসরি নিজের টাকায় ত্রিপল কিনে দান করার কথা বলেন বলে দাবী করেছেন প্রলয়বাবু।
তিনি জানিয়েছেন, তিনি নির্বাচিত সদস্য। মমতা বন্দোপাধ্যায় প্রতিটি ব্লকে ব্লকে ত্রাণের পর্যাপ্ত সামগ্রী পাঠিয়েছেন, কিন্তু চরম বিমাতৃসুলভ আচরণ করে চলেছেন বিডিও। শুধু এবারই নয়, এর আগেও বাগিলা গ্রাম পঞ্চায়েত সহ মেমারী ১ ব্লকের একাধিক গ্রাম পঞ্চায়েতের সঙ্গেই তিনি এই অসহযোগিতা করে চলেছেন।
প্রলয়বাবু জানিয়েছেন, যেহেতু জনগণ তাঁকে নির্বাচিত করেছেন এবং সেই জনগণ যখন অসহায় অবস্থার মধ্যে রয়েছেন এবং তিনি কিছু করতে পারছেন না – তাই পঞ্চায়েত সদস্য হিসাবে তাঁর এই পদ ধরে রাখার কোনো যৌক্তিকতা নেই। আর তাই শনিবার তিনি ই-মেলের মাধ্যমে বিডিওর কাছে তাঁর পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন। একইসঙ্গে বিডিও-র এই অসহযোগিতার বিষয়টি তিনি মহকুমাশাসক এবং জেলাশাসককেও জানিয়েছেন। জানিয়েছেন, দলের উর্ধতন নেতৃত্বের কাছেও।
প্রলয়বাবু দাবী করেছেন, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে মেমারী ১ ব্লকের আরও ৭১জন পঞ্চায়েত সদস্য বিডিওর এই অসহযোগিতার কারণে পদত্যাগ করতে চলেছেন। এদিকে, প্রলয়বাবুর এই অভিযোগকে সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে দাবী করেছেন বিডিও বিপুল মণ্ডল। তিনি জানিয়েছেন, প্রলয়বাবুর সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। তিনি প্রাথমিকভাবে যা দেবার দিয়েছেন। পরে আবার দেবেন বলেছেন। কিন্তু এক্ষেত্রে অসহযোগিতার কোনো বিষয় নেই। বিপুলবাবু জানিয়েছেন, এর আগেও তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক পঞ্চায়েতকে অসহযোগিতা করা হয়েছে বলে যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে তাও ভিত্তিহীন, মিথ্যা।
যদিও কেবলমাত্র প্রলয়বাবুই নন, মেমারী ১এর বিডিও-র একাধিক কাজকর্ম নিয়ে ফুঁসছে বাগিলা গ্রামপঞ্চায়েতের একাধিক সদস্যই। করোনা আক্রান্তদের কোয়ারেণ্টাইন সেণ্টার বা তাঁদের জন্য সরকারী সাহায্য নিয়েও সরব হচ্ছেন তাঁরা। এদিকে, শুধু বাগিলা গ্রাম পঞ্চায়েতই নয়, আমফানে ক্ষতিগ্রস্থদের পাশে দাঁড়াতে খোদ পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সদস্যরা ৫টি করে ত্রিপল সদস্যপিছু চেয়েও না পাওয়ায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। কারণ এই জেলা পরিষদ সদস্যরাও এলাকার মানুষের কাছে জনপ্রতিনিধি হিসাবে প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড়াচ্ছেন।
জেলাপরিষদের একাধিক সদস্যের দাবী, এই বিপর্যয়ে যদি সামান্য একটা ত্রিপল দিয়েও ক্ষতিগ্রস্থদের সাহায্য করতে না পারা যায় তাহলে সাধারণ মানুষ জনপ্রতিনিধি হিসাবে তাঁদের মানবেন কেন? অপরদিকে, কেবলমাত্র শাসকদলের একশ্রেণীর নেতৃত্বই নয়, বিরোধী বিজেপির নির্বাচিত সদস্যরাও সম্পূর্ণভাবে বঞ্চিত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
উল্লেখ্য, পূর্ব বর্ধমান জেলায় বিজেপির মোট ১৭টি গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য এবং ১টি পঞ্চায়েত সমিতির নির্বাচিত সদস্য রয়েছেন। এর মধ্যে গলসী অঞ্চলেই রয়েছেন ৭জন বিজেপি গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য এবং ১জন পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য। বিজেপির গলসী অঞ্চলের সংগঠক তথা জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক জয়দীব চ্যাটার্জ্জী জানিয়েছেন, রাজ্যের শাসকদল রীতিমত স্বজনপোষণ করছেন এই দুর্দিনেও।
তিনি জানিয়েছেন, গোহগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের গড়ম্বা সংসদের বিজেপির পঞ্চায়েত সদস্য তপশীলি জাতির প্রতিনিধি শর্মিলা কিস্কুর বাড়িই আমফানে ভেঙে গেছে। বারবার আবেদন করেও তিনি একটাও ত্রিপল পাননি। এমনকি গলসী গ্রাম পঞ্চায়েতের দুই বিজেপির নির্বাচিত সদস্যকে জানানো হয়েছে তৃণমূলের সদস্যদের দেবার পর অবশিষ্ট থাকলে ওই দুজনকে ২টি করে ত্রিপল দেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, খোদ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, প্রাকৃতিক এই দুর্যোগে কোনো দলাদলি যেন না হয়। কিন্তু খোদ শাসকদল থেকে বিরোধীদের সাফ অভিযোগ, কিছু নেতা সব কুক্ষিগত করেছেন। এমনকি শাসকদলের জনপ্রতিনিধিরা কিছু চাইতে গেলে উর্ধতন নেতৃত্বই তাঁদের মুখঝামটানি দিতে শুরু করেছেন।