ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: করোনা উদ্ভূত পরিস্থিতিতে হুগলীর আরামবাগ এবং বীরভূমের বোলপুর সংশোধনাগারের মহিলা ওয়ার্ডকে আইসোলেশন ওয়ার্ড করা হল। একইভাবে পূর্ব বর্ধমান জেলার কালনা মহকুমার সংশোধনাগারের মহিলা ওয়ার্ডকেও আইসোলেশন ওয়ার্ড করে দেওয়া হয়েছে। ফলে আরামবাগ, বোলপুর সহ কালনা মহকুমার সমস্ত মহিলা বন্দিদের বর্তমানে পাঠানো হচ্ছে বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনগারে। একইসঙ্গে বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধানগারে এই মহিলা ওয়ার্ডকে দেখভাল করার জন্য আরামবাগ থেকে ৩ জন ওয়ার্ডেনকেও পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে।
উল্লেখ্য, এখনও পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত কোনো রোগীকেই বর্ধমান জেলা সংশোধনাগারে পাঠানো হয়নি। কিন্তু তা সত্ত্বেও সাবধানতার কোনো খামতি নেই। করোনা উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এবং লকডাউন শুরু হতে না হতেই সমস্ত আসামীদের সংশোধনাগারে ঢোকার আগে ভাল করে স্নান করিয়ে তারপরই তাঁদের ঢোকানোর কাজ শুরু হয়। একইসঙ্গে প্রত্যেকদিন দুবেলা নিয়মিত ডাক্তারবাবুরা এসে পরীক্ষাও করে চলেছেন বন্দিদের। চলছে প্রায় নিয়মিতই স্যানিটাইজিংও। ইতিমধ্যে বর্ধমান পৌরসভার উদ্যোগে কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে স্যানিটাইজিং করা হয়েছে।দমকলের পক্ষ থেকেও এই কাজ করার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের জেল সুপার আশীষ বণিক জানিয়েছেন, সম্প্রতি হাইপার কমিটি এবং সুপ্রীম কোর্টের নির্দেশে যে সমস্ত বন্দিরা ইতিমধ্যেই ৭ বছরের সাজা কেটেছেন তাঁদের অনেককেই প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। ফলে বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনগারের বন্দিদের সংখ্যা বর্তমানে অনেকটাই কমে এসে দাঁড়িয়েছে ৯০০র কাছাকাছি। আশীষ বাবু জানিয়েছেন, বর্তমানে রাজ্য কারাবিভাগের একজন ডিজি বিভিন্ন জেলখানা পরিদর্শন করে চলেছেন। সরকার নতুন করে আরও কিছু বন্দি বিশেষত ইতিপূর্বে যাঁরা প্যারোলে মুক্তি পেয়েছিলেন সেই সমস্ত বন্দি এবং ৭ বছরের সাজা কাটা বন্দিদের মধ্যে আরও কিছুজনকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়া যায় কিনা তা নিয়েও ভাবনা চিন্তা করছে।
আশীষবাবু জানিয়েছেন, বর্তমানে বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে যাঁরা নতুন আসছেন তাঁদের একদিকে যেমন সাফ সুতরো করে ভেতরে ঢোকানো হচ্ছে, তেমনি চলতি করোনা উদ্ভূত পরিস্থিতির জেরে তাঁদের ইতিহাসও নেওয়া হচ্ছে। কবে, কোথায় কোথায় গিয়েছিলেন, ভিন রাজ্যে গিয়েছিলেন কিনা, ভিন রাজ্য থেকে কেউ এসেছিল কিনা, কার কার সঙ্গে মেলামেশা হয়েছে – প্রভৃতি যাবতীয় তথ্য তাঁর কাছ থেকে আগে জেনে নেওয়ার পরই তাঁদের সংশোধনাগারের ভেতরে ঢোকানো হচ্ছে। ফলে এখনও পর্যন্ত বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারকে কার্যত করোনার বিরুদ্ধে সমস্ত দিক থেকেই দুর্গের চেহারা দেওয়া হয়েছে।
যদিও জেল সুপার জানিয়েছেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে খাসির মাংস না পাওয়ায় বর্তমানে সপ্তাহে দুদিনের বদলে ৪দিনই আমিষ খাবার দেওয়া হচ্ছে বন্দিদের। মাংসের বরাদ্দ থেকেই ডিম এবং মাছের যোগান বাড়ানো হয়েছে। ফলে পুষ্টির দিক থেকেও তাঁরা অনেকটাই এখন ভাল জায়গায় রয়েছেন। উল্লেখ্য, চলতি করোনা উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিশেষত নতুন কোনো মহিলা আসামী আসলে তাঁদের বাধ্যতামূলকভাবেই ১৪দিনের হোম কোয়ারেণ্টাইনে রাখার নির্দেশ রয়েছে। আর সেই নির্দেশ অনুসারেই এখন আরামবাগ, বোলপুর এবং কালনা মহকুমা জেলখানার মহিলা ওয়ার্ডকে আইসোলেশন ওয়ার্ড হিসাবে গড়ে তোলা হয়েছে।