৭৫ মাইক্রণের নিচে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ নিষিদ্ধ ঘোষণা করল বর্ধমান পুরসভা, ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিভ্রান্তি, নিয়ম লাগু হচ্ছে ২মে থেকে

Souris  Dey

Souris Dey

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: সামনেই বর্ষা। আর তার আগেই বর্ধমান পুর এলাকার নিকাশি ব্যবস্থা নিয়ে বড়সড় পদক্ষেপ করার সিদ্ধান্ত নিলো নতুন বর্ধমান পুর বোর্ড। পুর এলাকাকে প্লাস্টিক মুক্ত করার লক্ষ্যে আগামী ২ মে থেকে অভিযান শুরু করছে পুরসভা। ইতিমধ্যেই কি কি করণীয় সেই বিষয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রচারও শুরু করা হয়েছে পুরসভার পক্ষ থেকে। পুরসভার পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের কাছেও চিঠি দিয়ে প্লাস্টিক ব্যবহারের বিধি নিষেধ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

 পুরসভার চেয়ারম্যান পরেশ চন্দ্র সরকার জানিয়েছেন, প্লাস্টিক মুক্ত শহর গড়ে তোলার লক্ষ্যে সকলের সহযোগিতা কামনা করা হয়েছে। তবে পুরসভার এই বিজ্ঞপ্তি ঘিরে শহরের ক্রেতা ও বিক্রেতাদের একাংশের মধ্যে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ৭৫ মাইক্রনের নীচে ও কোম্পানীর ছাপ ছাড়া কোন প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ বিক্রী করা হলে জরিমানা করা হবে পাঁচশো টাকা। আর যিনি কিনছেন তার কাছ থেকে জরিমানা আদায় করা হবে পঞ্চাশ টাকা। বিসি রোড সহ শহরের ব্যবসায়ীদের একাংশ পুরসভার এই উদ্যোগ কে সাধুবাদ জানিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সেক্ষেত্রে ক্রেতা-বিক্রেতার বিষয়টি কিভাবে নির্ধারণ হবে? 

রাস্তার ধারে বা বাজারে যারা বিভিন্ন জিনিস ক্যারিব্যাগে ভরে দিচ্ছেন তাদের ক্ষেত্রে জরিমানা কত পঞ্চাশ টাকা না পাঁচশো টাকা সেটাই তো পরিস্কার নয়। কারণ ৭৫ মাইক্রনের নিচে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগে যারা তাদের দ্রব্য সামগ্রী বিক্রি করছেন তারাও কোনো না কোন জায়গা থেকে সেগুলো কিনে আনছেন। তাদের ক্ষেত্রে কি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সেক্ষেত্রে সেই ক্যারিব্যাগে কোনো কিছু বিক্রি করলে এবং ক্রেতা সেই ক্যারিব্যগে মালপত্র নিয়ে গেলে কার বিরুদ্ধে এই নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ হবে। বিভ্রান্তি থেকেই যাচ্ছে। এই প্রসঙ্গে শহরের একাধিক ব্যবসাদার মত প্রকাশ করে জানিয়েছেন, তাহলে সবার আগে যারা এই নিষিদ্ধ ক্যারিব্যাগ উৎপাদন করছে তাদের বিরুদ্ধে কেন কোন ব্যাবস্থা গ্রহন করা হচ্ছে না। 

প্রসঙ্গত এর আগেও প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করার লক্ষ্যে অভিযানে নেমেছিল পুরসভা। তৎকালীন পুরপ্রধান স্বরূপ দত্ত নিজে রাস্তায় বেড়িয়ে বাজেয়াপ্ত করেছিলেন কয়েক কিলো প্ল্যাস্টিকের ক্যারিব্যাগ। কিন্তু কয়েকদিন পরে আবারও পরিস্থিতি যে তিমিরে ছিল সেই একই অবস্থায় ফিরে এসেছে শহর। শহরের নিকাশিনালাগুলির অধিকাংশ প্লাস্টিক আটকে প্রায় বন্ধ। ফি বছর বর্ষায় শহরের একাধিক রাস্তা জলের তলায় চলে যায় নিকাশি ব্যবস্থা বিঘ্নিত হওয়ার কারণে। বারবার এই প্লাস্টিকের কারণেই এই বিপত্তি ঘটে বলে শোনা যায়। অন্যদিকে বিভিন্ন রাস্তার পাশে ভ্যাটে ৭৫ মাইক্রনের নীচে কোম্পানী লেবেল ছাড়াই ছড়িয়ে থাকতে দেখা যায় প্লাস্টিকের অসংখ্য ক্যারিব্যাগ। ফলে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগই হোক কিংবা অন্যান্য প্লাস্টিক, গোটা শহরে প্লাস্টিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে কেউই যে সচেতন হয়নি সেই অবস্থা থেকেই ফের পুরসভার এই উদ্যোগ বলেই জানা গিয়েছে।

বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক খোকন দাস বলেন, ‘সরকারি নির্দেশে পুরসভা এই নোটিশ জারি করেছে। আমাদের সবাইকেই চেষ্টা করতে হবে শহর কে প্লাস্টিক মুক্ত করার জন্য। আমরা বর্ধমান পুরসভার নাগরিক কে সচেতন করার জন্য ধারাবাহিক প্রচার চালাবো। পাশপাশি জরিমানাও করা হবে। দেখা যাক পরিস্থিতি কি দাঁড়ায়।’ অন্যদিকে বর্ধমান পুরসভার চেয়ারম্যান পরেশচন্দ্র সরকার বলেন, ‘এর আগে নোটিশ দেওয়া হয়েছিল ঠিকই। তবে সেখানে জরিমানা করা হয়নি। এবারে আমরা সরকারি নির্দেশে সেটা করব। 

তিনি বলেন, ‘৭৫ মাইক্রন ক্যারিব্যাগ, থার্মোকলের প্যাকেট এসব কিনে যদি হকার বা বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা তাদের বিক্রিত পণ্যের সঙ্গে মূল্য ধার্য্য করেন ক্রেতার কাছ থেকে  তাহলে ব্যবসায়ীর কোন আর্থিক ক্ষতি হবেনা। এতে ক্রেতাদের যদি অসুবিধে হয় সেক্ষেত্রে নিজেদের খরচ বাঁচাতে চাইলে তারা ব্যাগ নিয়ে বের হবেন। তাহলেই সমস্যা হবেনা। সকলে মিলে চেষ্টা না করলে এই ধরনের সমস্যা দুর করা বেশ কষ্টসাধ্য। সবই আইন করে করা যায়না, সাধারন মানুষকেই সচেতন হতে হয়। নিজেদের পরিবেশ কে সুস্থ রাখতে, নিজের শহরকে দূষণ মুক্ত করে তুলতে শহরবাসীর সহযোগিতা ছাড়া সম্ভব নয়।’

আরো পড়ুন