---Advertisement---

বর্ধমানে করোনা আতংকের মধ্যেই নয়া আতঙ্ক বিষধর চন্দ্রবোড়া, কারণ অনুসন্ধানে প্রশাসন

Souris Dey

Published

বিজ্ঞাপন
ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: করোনা ভাইরাসের আতংক নয়, এবার পূর্ব বর্ধমান জেলা এবং বর্ধমান শহর জুড়ে ব্যাপক হারে পূর্ণ বয়স্ক চন্দবোড়া সাপ উদ্ধারে আতংক তীব্রতর হচ্ছে। বনদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক মাসে গড়ে প্রতিদিনই একটি করে পূর্ণ বয়স্ক বড় আকারের চন্দ্রবোড়া সাপ তাঁরা উদ্ধার করছেন। ফলে স্বাভাবিকভাবে গত মার্চ মাস এবং চলতি এপ্রিল মাসেও লাগাতার এই চন্দ্রবোড়া সাপ উদ্ধারে আতংক বাড়ছে। আচমকাই কিভাবে এতো চন্দ্রবোড়া সাপের উদ্ভব হল তা নিয়েও চলছে প্রশাসনিক পর্যায়ে পর্যালোচনা। যদিও এখনো আচমকাই এই পরিমাণ চন্দ্রবোড়া উদ্ধারের কারণ নির্ধারণ করা যায়নি।
জানা গেছে, গত মার্চ মাসে কেবলমাত্র বর্ধমান শহরের কাঞ্চননগর, লাকুর্ডি, রথতলা, মালির বাগান প্রভৃতি এলাকা থেকেই প্রায় ৩০-৩৫টি বড় চন্দ্রবোড়া সাপ উদ্ধার হয়েছে। যাদের দৈর্ঘ্য সাড়ে তিন ফুট থেকে ৪ ফুট। বনদপ্তরের উদ্ধারকারী দলের এক সদস্য জানিয়েছেন, এমনকি গত শীত কালেও রীতিমত প্রচুর চন্দ্রবোড়া সাপ উদ্ধার হয়েছে বর্ধমান শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে। বনদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এই সমস্ত উদ্ধার হওয়া বিষাক্ত সাপগুলোকে আউশগ্রামের জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু শিত কালেও এই পরিমাণ সাপ উদ্ধারের ঘটনায় অবাক করেছে বনদপ্তরের আধিকারিকদের।
বনদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে সাপ ধরার বিশেষ ধরণের ক্যাচার এখন বনকর্মীদের হাতে থাকায় সাপ উদ্ধারে কিছুটা সুবিধা হয়েছে। বনকর্মীদের সূত্রে জানা গেছে, প্রায় প্রতিদিনই তাঁরা কোনো না কোনো জায়গা থেকে ফোন পাচ্ছেন বিশেষ করে চন্দ্রবোড়া সাপ ধরার জন্য। তাঁরা জানিয়েছেন, এমন দিনও গেছে যেদিন তাঁদের একসঙ্গে ৩টি সাপও উদ্ধার করতে হয়েছে। বর্ধমানের ভাতার এলাকার বাসিন্দা এবং দীর্ঘদিন ধরে ঝাঁকলাই (ঝঙ্কেশ্বরী) সাপ নিয়ে গবেষণা করা ধীমান ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, চলতি সময়ে এতবেশী চন্দ্রবোড়া সাপ পাওয়া সত্যিই অত্যন্ত চিন্তার কারণ। 
তিনি এমনটাও দাবী করেছেন, এই চিন্তার মূল কারণ চন্দ্রবোড়া সাপের প্রতিষেধক ভেনাম এখন পাওয়া যাচ্ছে না। বাংলার চন্দ্রবোড়া সাপে কামড়ালে বর্তমানে যে ভেনাম দেওয়া হয় তা মূলত আসে তামিলনাড়ু থেকে। কিন্তু সেই ভেনাম এখানকার চন্দ্রবোড়ার বিষ প্রতিষেধক হিসাবে ততটা কার্যকরী হচ্ছে না। তিনি জানিয়েছেন, চলতি করোনা ভাইরাসের থেকেও ভয়ংকর বিপদ এই চন্দ্রবোড়া সাপের বিষ। তিনি দাবী করেছেন, প্রতিবছর কেবলমাত্র বাংলাতেই প্রায় ১০ হাজার মানুষ সাপের কামড়ে মারা যায়। যার মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশই চন্দ্রবোড়া সাপের কামড়ে। অথচ এর জন্য যে ভেনাম বাংলায় তৈরী হওয়া উচিত তা এখন হচ্ছে না। 
উল্লেখ্য, ২০১৭ সাল থেকে বেঙ্গল কেমিক্যালস বন্ধ হয়ে যাবার পর এব্যাপারে সরকারের ইতিবাচক ভূমিকাও চোখে পড়ছে না। তিনি জানিয়েছেন, অথচ এই বিপদের কথা জানিয়ে গোটা রাজ্য জুড়েই বিভিন্ন সংগঠন গত ৩বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলায় এই ভেনাম তৈরীর দাবী জানিয়ে আসছে। কিন্তু সরকার এখনও সে ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপই গ্রহণ করেনি। এমনকি খোদ বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিকেল কলেজেই এব্যাপারে সমস্ত পরিকাঠামো তৈরী হয়ে পড়ে থাকলেও তা অজ্ঞাত কারণে চালুই করেনি সরকার। 
ধীমানবাবু জানিয়েছেন, প্রতিবছর গ্রামবাংলার মানুষ যেভাবে সাপের কামড়ে মারা যান তা চলতি করোনা ভাইরাসের থেকেও মারাত্মক। আবার আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরী হচ্ছে ক্রমশই চন্দ্রবোড়া সাপের বংশ বৃদ্ধিতে। প্রসঙ্গত, তিনি জানিয়েছেন, নভেম্বর – ডিসেম্বর মাস চন্দ্রবোড়ার মিলনের সময় এবং চলতি এপ্রিল, মে ও জুন মাস চন্দ্রবোড়া সাপের বাচ্চা প্রসবের সময়। এই সময় তারা জলাশয়ের কাছাকাছি বা স্যাঁতসেঁতে, জঙ্গল এলাকাকে নিরাপদ হিসাবে বেছে নিতে চায়। সম্প্রতি বর্ধমান শহর জুড়ে পূর্ণ বয়স্ক চন্দ্রবোড়া সাপ উদ্ধার সম্পর্কে তিনি জানিয়েছেন, বর্তমানে করোনা ভাইরাসের আতংকে এখন মানুষের চলাচল রাস্তাঘাটে অনেকটাই কম থাকায় তারা লোকালয়ে চলে আসছে। একইসঙ্গে বাচ্চা প্রসবের জন্য নিরাপদ জায়গাও খুঁজছে। 
ধীমানবাবু জানিয়েছেন, সাধারণত বড় মাপের যে চন্দ্রবোড়া দেখতে পাওয়া যায় ব্যতিক্রম ছাড়া তার বেশিরভাগই মহিলা সাপ। তিনি জানিয়েছেন, কমবেশী প্রায় ২০০৭ সাল থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন যে সর্প উদ্যানগুলি ছিল তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে গত কয়েকবছর ধরেই বাংলার চন্দ্রবোড়া সাপ থেকে ভেনাম তৈরীর উপাদান সংগ্রহ করার কাজও বন্ধ হয়ে গেছে। 
তিনি জানিয়েছেন, সরকার সদর্থক ভূমিকা নিলেই এই সমস্যার দ্রুত সমাধান হতে পারে। যেহেতু বাঁকুড়া মেডিকেল কলেজে পরিকাঠামো তৈরী হয়ে রয়েছে। অন্যদিকে, তিনি জানিয়েছেন, যেহেতু চন্দ্রবোড়া সাপ ডিম পাড়ে না, সরাসরি বাচ্চা প্রসব করে তাই তাদের দ্রুত বংশ বৃদ্ধি ঘটছে। আবার এরই পাশাপাশি কেউটে প্রজাতি বা অন্যান্য যে সমস্ত সাপ বাংলায় দেখা যায়, সেগুলি ডিম পারায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ডিম নষ্ট হয়ে যায়। ফলে তাদের বংশ লোপ পাচ্ছে। 
See also  সততার নজির, বর্ধমানে টাকার ব্যাগ উদ্ধার করে বৃদ্ধার হাতে ফিরিয়ে দিলো সিভিক ভলান্টিয়ার
শেয়ার করুন 🤝🏻

Join WhatsApp

Join Now
---Advertisement---