---Advertisement---

করোনার জের – উধাও চৈত্র সেল, খাঁ খাঁ করছে বর্ধমানের বিসি রোড

Souris Dey

Published

বিজ্ঞাপন
ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: আজ শনিবার ২১ চৈত্র। আর কদিন পরেই বাঙালীর প্রিয় উৎসব পয়লা বৈশাখ। ব্যবসাদারদের কাছে হালখাতা। বাংলা নববর্ষ। কিন্তু সবই করোনার কারণে শেষ। চলতি সময়ে করোনা উদ্ভূত পরিস্থিতিতির জেরে বর্ধমানের প্রাণকেন্দ্র কার্জন গেট থেকে বড়বাজার প্রায় দেড় কিমি রাস্তা শুনশান, খাঁ খাঁ করছে। বর্ধমানবাসীর মনেই পড়ছে না এর আগে কখনো বিসি রোডের এই অবস্থা দেখেছেন কিনা।
বর্তমানে লকডাউনের জেরে মানুষ খুব ঠেলায় না পড়লে বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন না। কিন্তু গত বছর পর্যন্তও এই সময় কার্জন গেট থেকে বড়বাজার প্রায় দেড় কিমি রাস্তা পেরোতে গেলে সময় লেগে যেতো ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘন্টা। হকারদের চিৎকারে পাশের লোকের সঙ্গে কথা বলাও দায় হয়ে উঠতো। কাতারে কাতারে মানুষ চৈত্র সেলের বাজারে ভিড় জমাতেন একটু সস্তায় কেনাকাটা করতে। কিন্তু এবছর করোনা সেই দৃশ্য সম্পূর্ণ ভাবে গ্রাস করেছে।
খোদ ব্যবসাদাররাই বলছেন, ‘হরেক কিসিমের পসরা নিয়ে ব্যবসাদাররা রাস্তার দুপাশে বসে সকাল থেকে চিৎকার করে যাচ্ছেন, সেল সেল সেল – এই কল্পনা করাটাও এখন অন্যায়’। ইতিমধ্যেই বর্ধমান শহরের চৈত্র সেলের বাজার না বসায় কেউ কেউ রঙ্গ করে ছড়াও কাটছেন সোস্যাল মিডিয়ায় – 
কার্জনগেট কাঁদিয়া কহে/ 
রাণীগঞ্জ বাজার ভাই রে/ 
বড়বাজার কে বলে দিও/ 
চৈত্র সেল এবার নাই রে। 
উল্লেখ্য, চলতি করোনা পরিস্থিতিতে চৈত্র সেল না বসায় শুধু যে ব্যবসাদারদের ভয়াবহ ক্ষতি হলো তাইই নয়, অনেকে সারাবছরের জন্য তাকিয়ে থাকেন এই চৈত্র সেলের দিকেই, তাদেরও অনেক ক্ষতি হয়ে গেল বলেই জানিয়েছেন। সারাবছরের প্রয়োজনীয় অনেক কিছুই এই সময় তাঁরা কিনে রাখেন কিছুটা সাশ্রয় হয় বলেই। আবার এমনও অনেকে আছেন যাঁরা এই চৈত্র সেলের ওপর ভরসা রেখেই আগামী দুর্গাপুজোর আটপৌরে কেনাকাটাটাও করে রাখেন। দুর্গাপুজোর সময় অনেকেই একে অপরকে দেবার বিষয় থাকে, তাঁরাও এই সুযোগটাকে হাতছাড়া করতে চাননা। 
বর্ধমান শহরের ফুটপাতের হকার উজ্জ্বল রায় জানিয়েছেন, করোনার জেরে এমনতিই ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়েছেন তাঁরা। ব্যবসা বন্ধ। কিভাবে সংসার চালাবেন বুঝতে পারছেন না। তার ওপর অনেকেই আশা করেছিলেন হয়ত এই দুর্যোগ কেটে যাবে। কিছুদিনের জন্যও চৈত্র সেলের বাজারটা হাতে পাওয়া যাবে – ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নেওয়া যাবে। কিন্তু সে আশাতেই জল পড়েছে। এখন মানুষ নিজে বাঁচবেন না পোশাকা আশাক কিনবেন? উল্লেখ্য, কেবলমাত্র বর্ধমান শহরের বিসিরোড এবং কার্জন গেট চত্বর জুড়ে ফুটপাতের হকারের সংখ্যা প্রায় ৭০০-র কাছাকাছি। চৈত্র সেলের সময় এর বাইরেও বহু ব্যক্তি মাল নিয়ে আসেন। বড়বাজারের ক্ষেত্রে এই সংখ্যাটা আরও বেশি।
ব্যবসাদাররা জানিয়েছেন, চৈত্র সেলের প্রায় একটা মাসে খুব ছোট দোকানদাররাও প্রতিদিন গড়ে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকার বিক্রি করেন। বড় ব্যবসাদারদের পরিমাণ আরও বেশি। এরই পাশাপাশি কেবলমাত্র যাঁরা চৈত্র সেলের জন্যই আলাদা করে মালপত্র নিয়ে বসেন তাঁদের গড় প্রতিদিন আয়ও ৫ হাজার থেকে শুরু হয়ে যায়। উল্লেখ্য, বর্ধমান শহরের বিসিরোড থেকে বড় বাজার পর্যন্ত এই চৈত্রসেলের সময় যে সমস্ত হকাররা মাল বিক্রি করতে বসেন তাদের মধ্যে কেবলমাত্র বড়বাজার এলাকায় রাস্তার দুধারকে রীতিমত ভাড়া দেওয়া হয়। প্রতিদিন নির্দিষ্ট একটি অংকের টাকার বিনিময়ে কতিপয় নেতারা এমনকি দোকানদাররা এই ফাটকা আয় করেন। এবারে করোনা উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তাঁরাও মাথায় হাত দিয়ে বসেছেন। 
প্রসঙ্গত, করোনার জেরে চৈত্র সেলের বাজার না বসায় যে সমস্ত বড় বড় ব্যবসায়ীরা কেবলমাত্র চৈত্র সেলের জন্যই বিভিন্ন মালপত্র, পোশাকাদি তৈরী করেন এবারে তাঁরাও মুখ থুবড়ে পড়েছেন। অনেকেই করোনা পরিস্থিতির আগেই প্রচুর পরিমাণে মালপত্র তুলে রেখেছিলেন কিন্তু আচমকাই এই ঘটনায় তাঁরাও এখন দিশেহারা। তবে সাধারণ ক্রেতাদের অনেকে মনে করছেন, এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়েই ব্যবসাদাররা চেষ্টা করবেন স্টকের মাল অল্প দামে বিক্রি করে দিতে। সেক্ষেত্রে মানুষ কিন্তু উৎসাহ দেখাতেই পারেন। অর্থাৎ চৈত্র সেল না পেলেও, দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাবেন ক্রেতা বিক্রেতা দু পক্ষই।
See also  গলসির হোটেলে হানা পুলিশের, আটক ১৫জন মহিলা ও পুরুষ সহ মালিক ও ম্যানেজার
শেয়ার করুন 🤝🏻

Join WhatsApp

Join Now
---Advertisement---