পূর্ব বর্ধমান জেলায় লক ডাউনের এলাকা বাড়ল, কার্যত গোটা জেলায় লক ডাউনের ঘোষণা

Souris  Dey

Souris Dey

বিজ্ঞাপন
ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: করোনা ভাইরাসের জের – মঙ্গলবার থেকে পূর্ব বর্ধমান জেলার আরও কিছু এলাকাকে লক ডাউনের আওতায় নিয়ে আসা হল। সোমবার জেলা প্রশাসনের সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের পর এমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক বিজয় ভারতী। এদিন এই বৈঠকে হাজির ছিলেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি শম্পা ধাড়া, জেলা পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় সহ জেলার সমস্ত দপ্তরের আধিকারিকরাও। 
জেলাশাসক এদিন জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই বর্ধমান সদর তথা বর্ধমান পুরসভা এলাকা, কালনা ও কাটোয়া পুরসভা এলাকাকে লক ডাউনের অধীনে আনা হয়েছিল। সোমবার বিকাল ৫টের পর থেকেই এই সমস্ত এলাকার বাজার দোকান যেখানে একাধিক লোক জমায়েত হয় সেগুলি বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলাশাসক জানিয়েছেন, পূর্ব বর্ধমান জেলার লক ডাউন এলাকার তালিকায় যুক্ত করা হল মেমারী, গুসকরা পুরসভা-সহ কয়েকটি গ্রামীণ এলাকা। 
সোমবার দুপুরে জেলা প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের পর এমনই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক বিজয় ভারতী। তিনি জানিয়েছিলেন, এদিন প্রশাসনিক বৈঠকে জেলা পুলিশ সুপারের পরামর্শ মেনে গুসকরা, মেমারী পুরসভা-সহ গলসী, সেহারাবাজার প্রভৃতি এলাকার কয়েকটি জায়গাকে লক ডাউনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। গোটা বিষয়টি রাজ্য স্বরাষ্ট সচিবকে জানানো হয়েছে। তাঁরা চাইছেন এই এলাকাগুলিও লকডাউনের অধীনে আসুক। আর এদিন রাতেই রাজ্য সরকারের নির্দেশনামা অনুসারেই জেলাশাসক পূর্ব বর্ধমান জেলার বেশ কিছু এলাকাকে লক ডাউন করার নির্দেশ জারি করলেন। 
এই নির্দেশ অনুযায়ী পূর্ব বর্ধমান জেলার বর্ধমান, কাটোয়া, কালনা পুরসভার পাশাপাশি লক ডাউনের তালিকায় যুক্ত হল গুসকরা পুরসভা, মেমারী পুরসভা, সড়াইটিকর গ্রাম পঞ্চায়েতের দেওয়ানদিঘী, কুড়মুন ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের কুড়মুন, রায়ান ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের বিজয়রাম।
এদিকে, এরই পাশাপাশি এদিনই বর্ধমান জেলা আইএমএ-র সঙ্গে জেলা প্রশাসনের বৈঠক শেষে জেলাশাসক জানিয়েছেন, ডাক্তারদের চেম্বারগুলিতে রোগীর সঙ্গে একাধিক মানুষের আসায় নিষেধাজ্ঞা জারী করা হয়েছে। এদিন চিকিৎসকদের তা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসকরাও তাঁতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাজী হয়েছেন। বস্তুত, করোনা ভাইরাস নিয়ে গোটা জেলা জুড়ে যে পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে তাতে এখনও পর্যন্ত কোনো পজিটিভ কেস পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন জেলাশাসক। 
এদিন বর্ধমান জেলার মুখ্য স্বাস্থ্যাধিকারিক ডা. প্রণব রায় জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪ জন, কাটোয়ায় ১জন এবং কালনা হাসপাতালে ২জনকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। হোম করেণ্টাইনে রয়েছেন গোটা জেলায় ১১ হাজার ২২ জন। এছাড়াও বিদেশ থেকে আসা ১৪৯জনকেও হোম করেণ্টাইন রাখা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, সোমবার বিকাল পর্যন্ত এই হিসাবের পাশাপাশি প্রতিদিনই হোম করেণ্টাইনের সংখ্যা বাড়ছে। মুখ্য স্বাস্থ্যাধিকারিক জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত জেলায় কোনো পজিটিভ কেস পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে, যে ১৫জন বিদেশীর কোনো খোঁজখবর পাওয়া যাচ্ছিল না তাদের মধ্যে ১০জনের হদিশ মিলেছে বলে এদিন জেলা পুলিশ সুপার জানিয়েছেন। 
তিনি জানিয়েছেন, এয়ারপোর্ট থেকে তাঁদের কাছে যে তথ্য দেওয়া হয়েছিল সেই তথ্যতেই কিছু ত্রুটি থাকার জন্য এই সমস্যা দেখা দেয়। বিদেশীদের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য না থাকাতেই জটিলতা দেখা দেয়। তিনি জানিয়েছেন, চলতি সময়কালে মোট ২৫জন বিদেশ থেকে এসেছেন বলে তাঁদের কাছে খবর আসে। এদের মধ্যে ২১জনকেই তাঁরা ইতিমধ্যেই চিহ্নিত করেছেন। তাঁরা প্রত্যেকেই হোম করেণ্টাইনে রয়েছেন। বাকি ৪জনের এখনও কোনো হদিশ মেলেনি। এমনকি তাঁরা যে পূর্ব বর্ধমান জেলায় এসেছেন তারও কোনো প্রমাণ তাঁরা পাননি। এদিকে, যতদিন যাচ্ছে ততই করোনা নিয়ে সাধারণ মানুষের অতিরিক্ত সচেতনতায় রীতিমত ছুটে বেড়াচ্ছেন পুলিশ দপ্তর। জেলা পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, যেখান থেকেই তাঁরা খবর পাচ্ছেন সেখানেই পুলিশ কর্মীরা যাচ্ছেন এবং সন্দেহজনকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবিরে যাবার জন্য তাঁরা আবেদন করছেন। 
তিনি জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত জেলায় মোট ৩জনকে পুলিশ কার্যত জোর করেই স্বাস্থ্য শিবিরে পাঠাতে বাধ্য হয়েছেন। অপরদিকে, এদিন জেলাশাসক জানিয়েছেন, সরকারী যে নির্দেশ তা না মানলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সমস্ত কারখানা বা প্রতিষ্ঠান যেখানে ৭জনের বেশি কর্মী রয়েছেন সেগুলিকেই বন্ধ করে দেবার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বেসরকারী সমস্ত প্রতিষ্ঠানকেই এ ব্যাপারে সরকারী নির্দেশ মানার জন্য বলা হয়েছে। এদিন জেলা পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, লক ডাউন ঘোষণার পরই কয়েকজন ব্যবসাদার আলু ও পিঁয়াজ নিয়ে ফাটকা কারবার করছিলেন। খবর পেয়ে পুলিশ তাদের আটক করে, পরে ব্যক্তিগত জামিনে ছাড়া হয়। 
তিনি জানিয়েছেন, গোটা জেলা জুড়েই টাস্ক ফোর্স কাজ করছে। মাস্ক, স্যানিটাইজার নিয়ে কালোবাজারির পাশাপাশি বাজারে বিভিন্ন আনাজ নিয়েই প্রতিমূহূর্তে নজরদারী চলছে। প্রত্যেক থানাকে সংশ্লিষ্ট বিডিওদের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এদিকে, লক ডাউনের জেরে আন্তঃজেলা পরিবহণ ব্যবস্থাও বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিশেষ করে কাঁচা শাকসবজীর দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে শুরু করায় এব্যাপারে কড়া নজরদারীর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোথাও কোনো পণ্য অবৈধভাবে মজুদ করা হলে তাঁদের কড়া শাস্তির মুখেও পড়তে হবে বলে এদিন জেলাশাসক জানিয়েছেন। 

আরো পড়ুন