জামালপুরে লক্ষ লক্ষ টাকার গাছ কেটে পাচার, নড়চড়ে বসল জেলা পরিষদ

Souris  Dey

Souris Dey

বিজ্ঞাপন
ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: পূর্ব বর্ধমান জেলার জামালপুর থানার অধীন বেরুগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় নির্বিচারে গাছ কাটার ঘটনায় অভিযোগের আঙুল উঠেছে শাসকদলের নেতাদের বিরুদ্ধে। বৃক্ষ পাট্টার জায়গায় লাগানো গাছকে বিনা টেণ্ডারে কেটে পাচার করার এই ঘটনায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়েছে গোটা এলাকায়। আর এর পরই নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে দিনের পর দিন পূর্ব বর্ধমান জেলার বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকায় দিনে দুপুরে সরকারী জায়গায় লাগানো গাছ কেটে পাচার করার ঘটনা রুখতে এবার নড়েচড়ে বসল পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদ। শুক্রবার জেলা পরিষদের বন ও ভূমি স্থায়ী সমিতির বৈঠকে এব্যাপারে কয়েকটি ব্যবস্থা নেবার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। 
পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সহকারী সভাধিপতি দেবু টুডু এদিন জানিয়েছেন, এদিন বন ও ভূমি স্থায়ী সমিতির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে নির্বিচারে গাছ কাটার ঘটনায় প্রতিটি ব্লকে বিভিন্ন দিনে সচেতনতার প্রচারাভিযান চালানো হবে। ব্যক্তিগত এবং সরকারী যে কোনো জায়গায় থাকা গাছ কাটার ক্ষেত্রে কি কি নিয়ম পালন করা দরকার – সে বিষয়ে সাধারণ মানুষকে জানানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

দেবু টুডু জানিয়েছেন, নিয়ম অনুযায়ী কোনো গাছ কাটতে হলে প্রথমে গ্রাম পঞ্চায়েতকে জানাতে হয়। গ্রাম পঞ্চায়েত সেই আবেদন পাবার পর রেজ্যুলেশন নিয়ে তা জানায় পঞ্চায়েত সমিতিকে। পঞ্চায়েত সমিতিও এব্যাপারে একটি রেজ্যুলেশন নিয়ে তা পাঠায় বন দপ্তরের কাছে। বন দপ্তর এরপর নির্দিষ্ট মাত্রায় চালান কেটে তার চুড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পাঠায় জেলা পরিষদে। এরপর জেলা পরিষদ তার অনুমতি দিলে তবেই গাছ কাটা সম্ভব। 

দেবু টুডু এদিন স্বীকার করেছেন, বেশ কিছু এলাকা থেকে তাঁরা অভিযোগ পাচ্ছেন নির্বিচারে নিয়ম না মেনেই গাছ কাটা হচ্ছে। তাই এবার কড়া ব্যবস্থা নেবার জন্য এদিন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এদিকে, শুক্রবার যখন গাছ কাটার ঘটনায় জেলা পরিষদ ব্যবস্থা নিতে উদ্যোগী হয়েছেন সেই সময় খোদ জামালপুর থানার অধীন বেরুগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় নির্বিচারে গাছ কাটার ঘটনায় অভিযোগের আঙুল উঠেছে শাসকদলের নেতাদের বিরুদ্ধে। বৃক্ষ পাট্টার জায়গায় লাগানো গাছকে বিনা টেণ্ডারে কেটে পাচার করার এই ঘটনায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়েছে গোটা এলাকায়। 
এদিকে গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, প্রায় ৭দিন ধরে লক্ষ লক্ষ টাকার এই গাছ কাটা হয়েছে। যদিও খোদ বেরুগ্রাম পঞ্চায়েতের কর্তাদের বক্তব্য, তাঁরা গাছ কাটার কোন টেন্ডার করেন নি। এমনকি কারা গাছ কেটে পাচার করলো সেই বিষয়েও তাঁরা কিছুই জানেন না। এব্যাপারে বেরুগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য সেখ আব্দুস সালাম, এই ঘটনায় দোষীদের শাস্তির দাবী করে পূর্ব বর্ধমান জেলাপরিষদের সভাধীপতি ও জামালপুরের বিডিওর কাছে লিখিত অভিযোগও দায়ের করেছেন। 
জানা গেছে, রাজ্য সরকার বৃক্ষ পাট্টা চালু করার পর জামালপুরের এই গাছগুলিও পাট্টা দেওয়া হয় গ্রামবাসীদের। বৃক্ষ পাট্টা প্রাপকরা জানিয়েছেন, এই গাছ কাটার ব্যাপারে তাঁরাও কিছু জানেন না। এখন তাঁরা কি করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। আব্দুস সালাম জানিয়েছেন, রায়নার বাঁধগাছা থেকে জামালপুরের বেরুগ্রাম অঞ্চলের শম্ভুপুর থেকে নসীপুর পর্যন্ত প্রায় ৪ কিমি রাস্তার দু-পাশে বৃক্ষ পাট্টা প্রাপকরা গাছ লাগিয়ে ছিলেন। তাঁরাই পরিচর্যা করে আসছেন। সম্প্রতি রাস্তাটি চওড়া করার কাজ শুরু হয়েছে। আর সেই ফাঁকে এই গাছ কেটে পাচার করা হয়েছে। 
আব্দুস সালাম বলেন, তিনি পঞ্চায়েত অফিস থেকে জানতে পেরেছেন গাছ কাটার কোন টেন্ডার পঞ্চায়েত করেনি। তাই তিনি জেলা প্রশাসনের কাছে এব্যাপারে অভিযোগ দায়ের করেছেন। যদিও বেরুগ্রাম পঞ্চায়েতের উপ প্রধান সেখ মোবিন দাবি করেছেন, গাছ কেটে পাচারের ঘটনায় এলাকার লোক যুক্ত। এব্যাপারে খবর পেয়েই তিনি জামালপুর থানা এবং বিডিওকে জানিয়েছেন। জামালপুর ব্লকের বিডিও শুভঙ্কর মজুমদার জানিয়েছেন, অভিযোগ আসার পরেই বিষটি পুলিশকে জানানো হয়েছে। জামালপুর থানার পুলিশ জানিয়েছেন, এখনও এব্যাপারে কোনো অভিযোগ তাঁরা পাননি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরো পড়ুন