খন্ডঘোষে অবৈধ বালির গাড়ির বিরুদ্ধে প্রশাসনিক অভিযান, অতিরিক্ত জেলাশাসক কে হুমকি ফোন বালি মাফিয়ার, আলোড়ন

Souris  Dey

Souris Dey

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: অবৈধ বালির গাড়ির বিরুদ্ধে খন্ডঘোষে অভিযানে গিয়ে বালি মাফিয়ার হুমকি শুনতে হল খোদ পূর্ব বর্ধমানের জেলা ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দপ্তরের অতিরিক্ত জেলাশাসক ঋদ্ধি বন্দোপাধ্যায় কে। রীতিমত ফোন করে এডিএম কে দেখে নেওয়ার হুমকি দেওয়ার পাশপাশি স্বরূপ পাল নামে ওই ব্যক্তি নিজেকে স্থানীয় শাসক দলের কর্মী বলেও জাহির করেছেন। আর বেনজির এই ঘটনায় রীতিমত চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে জেলা প্রশাসনিক মহলে।

বিজ্ঞাপন

অবৈধ বালির কারবারিরাও এখন প্রশাসনের আধিকারিকদের ফোন করে হুমকি দিচ্ছে – এই প্রশ্নের উত্তরে জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস জানিয়েছেন, ‘অবৈধ বালির কারবার বন্ধ করার জন্য খোদ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যেখানে নির্দেশ দিয়েছেন সেখানে কে হুমকি দিল আর দিল না তাতে কিছু যায় আসে না। প্রশাসন আইন মেনে যা করেছেন সেটা ঠিকই করেছেন। আর এভাবে যদি অতিরিক্ত জেলাশাসক কে কেউ হুমকি দিয়ে থাকেন, তাহলে ওনার উচিত, অবিলম্বে পুলিশে অভিযোগ জানানোর। পঞ্চায়েত ভোটের আগে দল কে বদনাম করতে বিজেপির লোকেরাও এ কাজ করতে পারে। অভিযোগ পেলে পুলিশের তদন্ত করে দেখা উচিত গোটা বিষয়টা।

তৃণমূলের খন্ডঘোষ ব্লক সভাপতি অপার্থিব ইসলাম জানিয়েছেন, গোটা ব্লকের কোনো পঞ্চায়েতের কোনো পদে স্বরূপ পাল নামে কোনো ব্যক্তি নেই। তিনি জানিয়েছেন, প্রশাসন প্রশাসনের কাজ করবে। অবৈধ বালির কারবারে কেউ যদি যুক্ত থেকে তার বিরুদ্ধে প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা নেবেই। সে যেই হোক। দলের নেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন অবৈধ বালির কারবার বন্ধ করতে পুলিশ ও প্রশাসন কে কড়া পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রশাসনের কাজে হস্তক্ষেপ বা ফোন করে কেউ যদি আধিকারিকদের হুমকি দেয় তার বিরুদ্ধে অবিলম্বে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।

জেলা ভূমি রাজস্ব দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার রাত থেকেই খন্ডঘোষের বিএলআরও রোহিতরঞ্জন ঠাকুরের নেতৃত্বে বিভিন্ন বালিখাদানে অভিযান চলছিল। সে খবর পেয়েই এদিন সকালে খন্ডঘোষ এলাকায় নিজেই অভিযানে যান অতিরিক্ত জেলাশাসক। অতিরিক্ত জেলাশাসক ঋদ্ধি বন্দোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ছটি দশ চাকা বালির লরি ও একটি ট্রাক্টার সিজ করা হয় খন্ডঘোষ থানা এলাকার কুমিরকোলা থেকে। গাড়ি গুলিকে বাজেয়াপ্ত করার পরে সেগুলিকে বাঁকুড়া মোড়ের একটি পার্কিং প্লেসে রাখা হয়েছে। সরকারি নিয়মে তাদের জরিমানা আদায় করা হবে।

অতিরিক্ত জেলাশাসক ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, বিএলআরও রাত থেকে খন্ডঘোষ এলাকায় অভিযান চালাচ্ছিলেন। তিনি সকালে সেখানে গিয়ে এই অভিযানে যোগ দিয়েছেন। একাধিক গাড়ির সঠিক কাগজপত্র না থাকায় গাড়ি গুলোকে সিজ করা হয়। এরপর তিনি বর্ধমান ফিরে আসেন। এরপরে তাঁকে ফোন করে এক ব্যক্তি, যাঁর ট্রু কলারে নাম দেখাচ্ছিল স্বরূপ পাল, তিনি হুমকি দেন। তাঁকে রীতিমত হুমকি দিয়ে ওই ব্যক্তি বলে  ‘এরপর এলাকায় এলে দেখে নেবেন তাঁকে। মঙ্গলবারের মধ্যে তিনি বুঝিয়ে দেবেন তিনি কি করতে পারেন।’ অতিরিক্ত জেলাশাসক জানিয়েছেন, এদিনের ঘটনায় একটা বিষয় পরিস্কার তিনি ও তাঁর অফিসের আধিকারিকরা একেবারে সঠিক কাজই করেছেন। তিনিও দেখতে চান ওই ব্যক্তি মঙ্গলবার কি করেন।

উল্লেখ্য বেশ কিছুদিন ধরেই খন্ডঘোষ এলাকায় বেআইনি বালি খাদান নিয়ে অতিরিক্ত জেলাশাসক ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে স্থানীয় বিএলআরও একটি বিশেষ দল তৈরী করে অভিযান শুরু করেছেন। এতেই বহু বালি মাফিয়াদের সমস্যা তৈরী হয়েছে। এতদিন সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধি থেকে স্থানীয় মানুষদের হুমকি দিলেও এবারে অতিরিক্ত জেলাশাসককেও হুমকি দিতে ছাড়ল না বালি মাফিয়ারারা। সূত্রের খবর নিজেকে শাসক দলের কর্মী বলেও দাবি করেছেন ফোন করে ওই ব্যক্তি।

অতিরিক্ত জেলাশাসক কে হুমকি দিয়ে ফোন করা স্বরূপ পাল শশঙ্গা অঞ্চলের তৃণমূলের কমিটির সদস্য বলে সূত্র মারফৎ জানতে পারা গেছে। যদিও খোদ অতিরিক্ত জেলাশাসক কে ফোনে হুমকি দেওয়ার প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে স্বরূপ পাল জানিয়েছেন, অতিরিক্ত জেলাশাসক কে তিনি ফোন করেছিলেন। তার যে গাড়ি উনি সিজ করে নিয়ে গিয়েছে তার বৈধ কাগজ আছে। তারপরেও উনি কিভাবে এটা সিজ করলেন? বহু অবৈধ বালি ঘাট চলছে খন্ডঘোষের বুকে। কার মদতে চলছে এই বালি খাদান গুলি? তিনি সবই জানেন। তিনি সেটাই ওনাকে বলেছেন। তার এক আত্মীয় মারা গিয়েছিল বলে তিনি এদিন এলাকায় ছিলেন না। তিনি জানিয়েছেন, থাকলে তিনি মজা দেখিয়ে দিতেন। তিনি এও জানিয়েছেন, বিষয়টি তিনি নবান্নেও জানেবেন।

                                              ছবি – ইন্টারনেট

আরো পড়ুন