---Advertisement---

১৭০০ বছরের প্রাচীন বর্ধমানের মোটা শিব, কি সেই ইতিহাস, জানুন

Souris Dey

Published

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক, বর্ধমান: হিন্দু ধর্মে শ্রাবণ মাস অত্যন্ত পবিত্র। বলা হয়, ভগবান শিবের উপাসনা করে শ্রাবণের প্রতি সোমবার উপবাস করলে মনস্কামনা পূরণ হয়। বাংলা ছাড়াও শ্রাবণ মাসের প্রতি সোমবার শিবের পুজো করার প্রচলন রয়েছে গোটা দেশে। মনে করা হয় শ্রাবণ মাসের সোমবার শিবের ব্রত করলে দেবাদিদেব তুষ্ট হন ও ভক্তের মনস্কামনা পূর্ণ করেন। বর্ধমানের আলমগঞ্জে মোটা শিব তলায় তাই এই শ্রাবণ মাস জুড়ে থাকে ভক্তদের ঢল। পূর্ব বর্ধমান জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যেমন শিবের মাথায় জল ঢালতে ভিড় করেন ভক্তরা, পাশাপাশি রাজ্যের নানান প্রান্ত থেকেও মানুষ আসেন এই ঐতিহাসিক শিব মন্দিরে পুজো দিতে।

বিজ্ঞাপন

জানা যায়, ১৯৭২ সালে বর্ধমানের আলমগঞ্জ এলাকায় সরকারি মাটি কাটার কাজ চলছিল। হঠাৎই শ্রমিকের গাঁইতির আঘাত লাগে এক বিশাল কালো পাথরের উপর। সরকারি তত্ত্বাবধানে সেই পাথর মাটির তলা থেকে তোলা হয়। দেখা যায় সেই পাথর আসলে একটি বিশাল শিবলিঙ্গ। এই শ্রাবণ মাসেই সরকারি তত্ত্বাবধানে  শিবলিঙ্গটি কে প্রতিষ্ঠা করা হয়। পুরাতত্ত্ব বিভাগ পরীক্ষা করে নিশ্চিত হন যে, এই শিবলিঙ্গ টি ১৭০০ বছরের প্রাচীন কুষাণ যুগের। রাজা কণিষ্ক এই শিবলিঙ্গ পুজো করতেন।

আর তখন থেকেই বর্ধমানে এই শিব “মোটা শিব” নামে খ্যাত। বর্ধমানের বিশিষ্ট চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ড. সুবোধ মুখোপাধ্যায় এই শিবের নামকরণ করেছেন “বর্ধমানেশ্বর”। শিবরাত্রিতে এখানে বিরাট মেলা বসে এবং বহু দূর-দুরান্তের মানুষ পূজা দেন এই মন্দিরে। প্রাচীনত্বের দিক থেকে ভারতবর্ষের প্রাচীন শিবলিঙ্গগুলির মধ্যে অন্যতম বর্ধমানের এই শিবমন্দির। কিন্তু কেন? কি এর ইতিহাস। ইতিহাসবিদ সর্বজিত যশ এই বিষয়ে জানান, গবেষণায় জানা গেছে এই শিব লিঙ্গের প্রাচীন ইতিহাসের কথা।

চীন দেশের পশ্চিম অঞ্চলে ইউ-চি নামক এক বর্বর জাতি বসবাস করত। এরা বিভিন্ন উপজাতি দের মধ্যে আক্রমণ ও হিংসাত্মক কার্যকলাপে লিপ্ত থাকতো। এরপর এই ইউ-চি রা পাঁচটি শাখায় বিভক্ত হয়ে নতুন কোনো বসতির খোঁজে অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ে। এই পাঁচটি শাখার মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ছিল কুষাণ জাতি। এরা ভারতের একাংশ ও মধ্য এশিয়ার কিছু অংশে তাদের সাম্রাজ্য নির্মাণ করেন।

See also  আলুর বকেয়া ক্ষতিপূরণের দাবিতে চাষীদের ঘেরাওয়ের মুখে হিমঘর মালিক,উত্তেজনা

কুষাণ বংশের বিভিন্ন বিবর্তনের পর সুবর্ণ যুগ নিয়ে এসেছিলেন কণিষ্ক। তিনি ছিলেন মহাজান বৌদ্ধ। তার আমলেই ভারতের ধর্মীয় শিল্প ব্যাপক প্রসার লাভ করে। সারণাথ, অমরাবতী, মথুরা ইত্যাদি অঞ্চলে নিখাত ভারতীয় শিল্পের একের পর এক নিদর্শন তৈরি হয়। সাঁচির তোরণ, কণিষ্কের চৈত্য এবং গান্ধার শিল্প, এইসময় ব্যাপক প্রসার লাভ করে। কণিষ্কর তখন রাজধানী ছিল পুরুষপুর। গাঙ্গেয় সমতলভূমির প্রায় বেশিরভাগ অঞ্চলই তার অধীনে ছিল।

সম্রাট কণিষ্ক বৌদ্ধ হলেও তিনি ছিলেন ভগবান শিবের পরম উপাসক। ইতিহাস থেকে জানা যায়, আজ থেকে আনুমানিক ১৭০০ বছর পূর্বে ১৩ টনের একটি বিশাল কষ্টি পাথরের শিবলিঙ্গ কণিষ্ক প্রতিদিন পূজা করতেন। ইতিহাসের কালচক্রে কুষাণ বংশের ধ্বংস হয় এবং এক সর্বগ্রাসী বন্যায় এই শিবলিঙ্গ জলের তোরে ভেসে যায়। এরপর কেটে যায় বহু বছর। ১৯৭২ সালে বর্ধমানের আলমগঞ্জ এলাকায় সরকারি মাটি কাটার কাজ চলাকালীন শ্রমিকের গাঁইতির আঘাত লাগে এই বিশাল শিব লিঙ্গের উপর। সরকারি তত্ত্বাবধানে শ্রাবণ মাসেই এই শিবলিঙ্গটি মাটি থেকে উত্তোলন করা হয়। এরপর স্থানীয়দের অনুরোধেই বর্ধমানের আলমগঞ্জে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা হয় এই শিবলিঙ্গকে।

শেয়ার করুন 🤝🏻

Join WhatsApp

Join Now
---Advertisement---