ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: ডাকাতির উদ্দেশ্যে জড়ো হওয়ার অভিযোগে জাতীয় সড়ক টু-বি এর বীরপুর এলাকা থেকে বর্ধমান থানার পুলিশ ১০জনকে গ্রেপ্তার করেছে। ধৃতদের কাছ থেকে প্রায় দেড় ফুট দৈর্ঘ্যের দুটো ভোজালি, প্রায় তিন ফুট দৈর্ঘ্যের দুটো লোহার রড, প্রায় চার ফুট দৈর্ঘ্যের দুটি বাঁশের লাঠি, দুটি দেশি পিস্তল, দুটি কার্তুজ এবং ১০ফুট লম্বা দুটি দড়ি উদ্ধার করেছে পুলিশ। ধৃতদের মধ্যে ৯জনের বাড়ি বর্ধমান শহরের রসিকপুর এলাকায়, অপর একজনের বাড়ি শহরের কেষ্ট পুর গিমটিফটক এলাকায় বলে পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
বিশেষ সূত্রে খবরের ভিত্তিতে সোমবার রাত প্রায় ১টা নাগাদ বর্ধমান থানার পুলিশ এই দশ জনকে আগ্নেয়াস্ত্র ও অন্যান্য ধারাল অস্ত্র সহ রাস্তা থেকে গ্রেপ্তার করে বলে পুলিশ জানিয়েছে। ধৃতদের নাম সৈয়দ ইমতিয়াজউদ্দিন ওরফে টুটু (৩৮ বছর), সেখ রূপেশ ওরফে রাজ (১৯ বছর), সেখ ইমরান ওরফে ঝুলন ওরফে হাবু (৩২ বছর), পান্না খান (৩০ বছর), সুফি সমাদ্দার রহিম ওরফে মিলন (৪০ বছর), সেখ রাজ খান ওরফে ভম্বল (৩০ বছর), সেখ আজহারউদ্দিন ওরফে বান্টি (৩৪বছর), সেখ মেহেরাজ (৩২বছর), সেখ মিজানুর রহমান ওরফে রুবেল (৩২ বছর), এদের সকলের বাড়ি রসিকপুর এলাকায় ও সিকান্দার সাহানি (৩২ বছর),বাড়ি কেষ্টপুর গিমটি ফাটকের কাছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার ধৃতদের বর্ধমান আদালতে পেশ করা হলে সেখ আজহারউদ্দিন ওরফে বান্টি ও সেখ মেহেরাজ কে চার দিনের পুলিশি হেফাজত এবং বাকিদের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। এদিকে একসঙ্গে বর্ধমান শহরের দশ জন যুবককে গ্রেপ্তারের ঘটনায় তুমুল হৈচৈ পড়েছে রসিকপুর এলাকায়। পাশপাশি রাজনৈতিক মহলেও শুরু হয়েছে ব্যাপক চাপানতোর। শহরের রসিকপুর এলাকার একাধিক বাসিন্দা জানিয়েছেন, ধৃত প্রত্যেকেই সক্রিয় তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী। রবিবার পুরভোটে এরা সকলেই রীতিমত সক্রিয় ছিল। তৃণমূলের হয়েই কাজ করেছে। এমনকি স্থানীয় এক প্রভাবশালী নেতার অনুগামী হিসেবেই ধৃতরা পরিচিত ছিল।
এদিকে রবিবার ভোটের দিন বিকেলে রসিকপুর এলাকায় তৃণমূলেরই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সেখ বাদশা নামে এক তৃণমূল কর্মীর বাড়িতে হামলাও চালায় বেশ কিছু দুষ্কৃতী। ভাঙচুর চালানো হয় দুটি বাড়িতে। অভিযোগের তির ছিল স্থানীয় নেতা আব্দুল রবের দিকেই। পরিস্থিতি মোকাবিলায় এলাকায় নামাতে হয় র্যা্ফ। এই ঘটনায় অভিযোগের তির ছিল স্থানীয় নেতা আব্দুল রবের দিকেই। আর এরপর থেকেই হামলার ঘটনায় জড়িত দুষ্কৃতীদের ধরতে বর্ধমানের পুলিশ উঠেপড়ে লাগে। যদিও রাজনৈতিক সংঘর্ষের ঘটনায় এখনও কেউ গ্রেপ্তার না হলেও খোদ রসিকপুর এলাকার বাসিন্দা দশ জনকে ঘটনার ২৪ঘণ্টার মধ্যে ডাকাতির উদ্দেশ্যে জড়ো হওয়ার ঘটনায় গ্রেপ্তার করার পর এটা ‘পুলিশি স্ট্র্যাটিজি’ বলেই মনে করছেন অনেকে। যদিও যারা ধরা পড়েছে তাদের মধ্যে একাধিক ব্যক্তি এর আগে ধরা পড়েছে এবং বিভিন্ন ধরনের অপরাধে জেল খেটেছে বলে জানা গেছে।
এদিকে রসিকপুরে ভোটের দিন হামলার ঘটনায় দলেরই একাংশ জড়িত থাকার অভিযোগের প্রশ্নে তৃণমূলের পূর্ব বর্ধমান জেলার মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস জানিয়েছেন, হামলার ঘটনায় যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। দল কাউকে এই ধরনের ঘটনা ঘটানোর অনুমোদন দেয় না। সুতরাং অপরাধ করলে অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইন আইনের পথে চলবে। উল্টোদিকে এদিন ধৃতদের আদালতে তোলার আগে ধৃতরা সংবাদমাধ্যমের সামনে বলেন, “তৃণমূলের হয়ে কাজ করার জন্যই তাদের কে পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর পিছনে বিধায়ক খোকন দাসের মদত রয়েছে।” আর এরপরই বিতর্ক তুঙ্গে উঠেছে।
জানা গেছে, রসিকপুর এলাকার দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা তথা তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সাধারণ সম্পাদক আব্দুল রবের অনুগামী বলেই পরিচিত ছিল ধৃতরা। এদিকে খোদ বিধায়কের ঘনিষ্ট বলেই পরিচিত আব্দুল রব। গত বিধানসভা নির্বাচনে বিধায়কের হয়ে ভোটের লড়াইয়ে এই আব্দুল রব একদম সামনে থেকে লড়াই করেছেন। ডাকাতির উদ্দেশ্যে জড়ো হওয়ার ঘটনায় যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারাও এই লড়াইয়ে সামিল ছিল বলেই দলের একাংশ সূত্রে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, বর্ধমানের পুরভোটে বিধায়ক ঘনিষ্ট অনেকেই টিকিট পেলেও আব্দুল রবের স্ত্রী শেষ পর্যন্ত টিকিট না পাওয়ায় রীতিমত কেঁদে ভাসিয়ে ছিলেন নেতা। যদিও তারপরও প্রার্থীদের হয়ে প্রচারে দেখা গিয়েছিল আব্দুল রব কে। কিন্তু পুরভোটের দিন রসিকপুর এলাকায় হামলার ঘটনার পর কি রাজনৈতিক সমীকরণ পাল্টাতে শুরু করলো! তার উপর এই এলাকার দশজন সক্রিয় তৃণমূল কর্মী গ্রেপ্তার হওয়ার পর এই প্রশ্নই আরো জোরদার হতে শুরু করেছে শহর জুড়ে।